একটা সময় কমিক বই পড়ার মারাত্মক পোকা ছিলাম। আর দুনিয়া তে এত্ত এত্ত কমিক ক্যারেক্টার থাকতে কেন জানি ছোট বেলায় আমার চাচা চৌধুরি'র চরিত্রটা ভাল লাগত। কিন্তু সমস্যা ছিল একটাই। থাকতাম গ্রামে, স্কুলিং গ্রামে হওয়াতে আমাদের গ্রামে কমিক বই এর কোন দোকান তো দূরে থাক কোন লাইব্রেরীও ছিল না। তাই বলে তো কমিক বই পড়ার ইচ্ছা বিসর্জন দিতে পারিনা। পড়ে ফেলতাম কোন না কোন উপায়ে।
সময়টা ছিল ডিসেম্বর। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে এক সময় রেওয়াজ ছিল মামা বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া। আমিও তার বাইরে ছিলাম না। শুধু ব্যতিক্রম বলতে সবাই নিজের মামা বাড়ি যেত আর আমি যেতাম আমার আম্মার মামা বাড়ি। আসলেই আমার আম্মার মামাত ভাই আমার বয়সী ছিল কিনা, তার উপর আবার আমার পিচ্ছি কালের দোস্তও। তাই আমি সবসময় আম্মার মামা বাড়ি বেছে নিতাম বেড়াতে যাওয়ার জন্য। দিনটি ছিল রোজার। আমরা দুই মামা ভাগ্নে সেহরি খেয়ে সকাল বেলা নামাজের জন্য বেড়িয়ে পড়তাম। আর ফেরা হত সেই ইফতারির আগে। সেদিনও বেরুলাম। দুইজনের পকেটে ফুটো পয়সাও থাকেনা। তাই পুরো চট্টগ্রাম শহর হেঁটে টই টই করে বেড়াতাম। কোন এক দুপুর বেলা হাঁটতে হাঁটতে আউটার স্টেডিয়াম এ পৌঁছে গেলাম। তখন ডিসেম্বর মাস হওয়াতে বই মেলা আর বিজয় মেলা চলছিল। হুট করে বই মেলাতে গিয়ে চাচা চৌধুরি'র কমিক বই কেনার নেশা ধরে গেল। কিন্তু দুজনের পকেট মিলে ৭ টাকা পেলাম। ৭ টাকা দিয়ে তো আর বই পাওয়া যাবে না। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে মামাকে বললাম বুক স্টল কয়টা গুনতে। গুনে দেখলাম ২০ কি ২৫ টা মত হবে। তাইলে হিসেব করলাম একটা কমিক বই এ পেইজ হয় ৪০ থেকে ৫০। তার মানে প্রতি স্টল এ ডুকে বই দেখার নাম করে ১ বা ২ পেইজ করে পড়লে শেষ স্টলে যেতে যেতে বই পড়া হয়ে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। এবং শেষ পর্যন্ত মামা ভাগ্নে মিলে ঐদিন চাচা চৌধুরি'র বই পড়েছিলাম ফ্রী'তে ওভাবেই।
আজ হয়তো কমিক বই কেনার টাকা আছে কিন্তু আগের সেই নেশা নেই। কিছু ব্যাপার সময়ে করে ফেলতে হয়। ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলে হয়না। নিজের ভাগ্য নিজেকে গড়ে নিতে হয়। আপনার ভাগ্য অন্য কেউ এসে গড়ে দিবেনা।