বিকেলে ছাদে এসে পৌঁছতেই মোবাইলের টেক্সট টোন টা বেজে উঠলো। আলাদা করে রিং টোন সিলেক্ট করে রাখায় বুঝতে দেরি হলনা যে এটা বৃষ্টির টেক্সট। বৃষ্টির টেক্সট গুলো দেখার আগেই আমি একটা প্রিয়াজামশান করে নিতে পারি। কালে ভাদ্রে দুএকটা টেক্সট সে আমাকে করে আর সেই টেক্সট গুলো হয় আদেশ অথবা নির্দেশসূচক। ‘আজ বিকেলে যেন আপনাকে ছাদে না দেখি’। কারন!!?? হুম খুব সহজে ধরে ফেলেছি। সকাল বেলা বৃষ্টির বাসায় টুম্পাকে আসতে দেখেছিলাম। টুম্পা বৃষ্টির সার্কেলের সবচেয়ে সুন্দরী বান্ধবীটি। মুরুব্বিরা বলে থাকে, মেয়েরা নাকি সুন্দরী মেয়েদের হালকা পাতলা হিংসা করে থাকে আর বিশেষ করে যেসব ছেলেদের মেয়েরা হালকার উপর ঝাপসা টাইপ পছন্দ করে তাদের সামনে মেয়েরা তাদের সুন্দরী বান্ধবীটিকে নিয়ে যেতে চায়না মেবি ইন্সেকেউর ফিল করে। শোনা কথা। তাই শোনা কথায় কান না দেয়াই ভাল না বৃষ্টির সাথে আজ ঝগড়াটা মধুর হবে না ভেবেই ছাদ থেকে নামতে যাব এমন সময় দেখলাম ঠিক ছাদের দরজায় বৃষ্টি ও টুম্পা দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে টুম্পার গাল ভর্তি হাঁসি দেখলেও খুব ভাল করে খেয়াল করলাম বৃষ্টির চোখ ভর্তি আগুন।
-কেমন আঁচেন বাইয়া? বালো আঁচেন?
এখানেই গণ্ডগোল। টুম্পা মেয়েটা অনেক সুন্দরী। ভিডিও মাশাল্লাহ দেখার মত। কিন্তু অডিও খুললেই শেষ। আমাদের চট্টগ্রামবাসীদের দীর্ঘবর্ণ হ্রস্ববর্ণ উচ্চারণে সমস্যা জগদ্বিখ্যাত হলেও তার মধ্যে আবার কক্সবাজারবাসীদের একটু বেশিই সমস্যা। তাই এদিককার বাসিন্দা হয়েও টুম্পার কথা বুঝতে আমার একটু কষ্ট হয় বৈকি। আর রিয়াজুদ্দিন বাজারের বিশিষ্ট কাপড়ের ব্যবসায়ীর একমাত্র মেয়ে হওয়াতে সেও একটু আহ্লাদ দেখায় কথা বলে এই যা।
-হ্যাঁ ভাল।আপনার কি খবর?
-আমিও অনেক বালো। জানেন বাইয়া নেক্সট ওয়িক আমার বাইয়ের বিয়ে। অনেক মজা করব সেই বেবে বালো লাগছে।
-অহ আচ্ছা।
-বিস্টিকে দাওয়াত করলাম। কিন্তু অর দাদি তো ওকে যেতে দিবে না। এমন পাদ পেদেছি যে দাদি রাজি হয়ে গেল!!!
ইয়াক। বৃষ্টির দাদী বয়স্কা একজন মানুষ তার সামনে পাদ টাদের কথা ক্যামনে বলছে এই মেয়ে? আর পাদই বা কেন দিতে হবে ভেবেই বললাম-
-পাদ???
-ওহ বাইয়া পাদ না পাদ না। পাদ পাদ। আমি পাদের কথা বলছি।
নকশী পাঁড়ের মানুষেরা নামক একটা বইতে এরকম একটা লাইন পড়েছিলাম যে বাসায় পড়াতে আসা শিক্ষক তার ছাত্রী কে জিজ্ঞেস করছে “তুমি স্যারকে ষাঁড় বল কে?”। ছাত্রী উত্তরে বলেছিল “কই ষাঁড়!!”। এখানে টুম্পার অবস্থা ঠিক তাই। তাই বেসিক নলেজ কাজে লাগিয়ে বলে উঠলাম-
-ওহ ফাঁদ!!!
-জী বাইয়া। জী বাইয়া পাদ আর কি! আমাদের চাঁদে ফ্যানডেল করে করে বিশাল গায়ে হলুদের পোগ্রাম হবে।
চাঁদে এখুনো মানুষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাই সেখানে গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম হওয়া কোন মতেই সম্ভব না। আর চাঁদ বলার প্রিফিক্স আর সাফিক্স কাজে লাগিয়ে বুঝে নিলাম টুম্পা তাদের বাসার ছাদের কথায় বলছে।
-ওহ ছাদে? হুম ভাল।
না এই মেয়ের সাথে বেশি কথা বলা যাবে না। এমনিতেই কথা একটু বেশি বলে। তার উপর তার কথা বুঝতে দেমাগ পে জোর দিতে হয়। কিন্তু কারো চোখের আগুন বাড়িয়ে দেয়ার এই মাউকাও হাত ছাড়া করতে ইচ্ছে করছে না। তাই নিজে থেকেই আবার গল্প ইনশিয়েট করলাম।
-তো আপনারা খাওয়া দাওয়া করেছেন??
টুম্পা আগ বাড়িয়ে উত্তর দিল-
-বাইয়া আজ অনেক মজা হয়েছে। বাসায় বিস্টির দাদী ছারা কেউ ছিল না তো তাই আমি আর বিস্টি দুজন মিলে ফাক করেছি।
না আর নেয়া যাচ্ছে না। টুম্পা আর বৃষ্টি মিলে ফাক করল নাকি পাক করল সেটা আমি আর চিন্তা করে বের করতে চায়না। কারন কারো চোখে আগুন আবার দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছিলো।
বৃষ্টি কাজল পরেছে চোখে। কাজল পরা চোখ আমার ভীষণ ভাল লাগে এটা যেদিন বৃষ্টি জেনেছিল সেদিন থেকেই দেখি বৃষ্টি সবসময় কাজল পরে থাকে। কাজল পরা চোখে আগুন দেখার মত!!! এ আগুন জ্বলুনির, এ আগুন হিংসার, এ আগুন ভালবাসার। এ আগুন আজ না, কাল না, অনন্তকাল দেখতেও কারো খারাপ লাগবেনা।
বিঃদ্রঃ- একটি কাতুকুতু প্রচেষ্টা
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭