সূরা তাকভীরের ছয় নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন কেয়ামত দিবসে সমুদ্রের পানিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হবে। আমরা জানি, পানি দিয়ে সাধারনত আমরা আগুন নিভিয়ে থাকি কিন্তু আল্লাহ তায়ালার এই কথাকে যে কারো কাছেই অযৌক্তিক মনে হবে। বিশেষ করে অমুসলিমদের কাছে। হাশি তামাশা বা পাগলের প্রলাপ বলে তারা একে উরিয়ে দিতে পারেন। আপনি যদি বিজ্ঞান সম্পর্কে অল্প কিছু জ্ঞান রাখেন তবে তা আপনার জন্য বুঝা সহজ হবে। আসুন বিজ্ঞানের আলোকে বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করি।
আয়াতে বলা হয়েছে وَإِذَا الْبِحَارُ سُجِّرَتْ (ওয়াইযাল বিহারি সুজ্জিরাত)
এখানে سُجِّرَتۡۙ ( সুজ্জিরাত) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মূল হচ্ছে তাসজীর ( سُجِّرَتۡۙ ) এবং তা থেকে অতীতকালে কর্মবাচ্য এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণত চুল্লীতে আগুন জ্বালাবার জন্য ‘তাসজীর’ শব্দ ব্যবহার করা হয়। কিয়ামতের দিন সমুদ্রে আগুন লেগে যাবে, একথাটা আপাত দৃষ্টে বিস্ময়কর মনে হয়। কিন্তু পানির মূল তত্ত্ব ও উপাদান সম্পর্কে ধারণা থাকলে এর মধ্যে কোন কিছুই বিস্ময়কর মনে হবে না। আল্লাহ তাঁর অসীম ক্ষমতা ও অলৌকিক কার্যক্রমের সাহায্যে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের মত এমন দু’টি গ্যাসকে একসাথে মিশ্রিত করে রেখেছেন যাদের একটি আগুন জ্বালায় এবং অন্যটি নিজে জ্বলে। এই দু’টি গ্যাসের সংমিশ্রণে পানির মতো এমন একটি বস্তু সৃষ্টি করেছেন যা আগুন নিভিয়ে দেয়। আল্লাহর অসীম ক্ষমতার একটি ইঙ্গিতই পানির এই মিশ্রণ পরিবর্তন করে দেবার জন্য যথেষ্ট। তখন তারা পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে তাদের মূল প্রকৃতি অনুযায়ী জ্বালাবার ও জ্বলার কাজে ব্যাপৃত হবে।
এখানে سُجِّرَتْ শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে আল্লাহ পানি সৃষ্টির উৎসের সন্ধান দিয়েছেন যে, এটি কেবল ঠান্ডা পানীয় নয়। বরং ওটা আসলে দু’টি গ্যাসের মিলিত রূপ। বান্দা এখন এই সূত্র ধরে বের করবে যে, এর মধ্যে কি কি গ্যাস আছে এবং কয়ভাগ করে আছে। এই গবেষণার মাধ্যমেই বান্দা জানতে পারবে কে এই দু’টি গ্যাসকে একত্রিত করে সুপেয় পানিতে পরিণত করল? ল্যাবরেটরী পরীক্ষায় যখন সে সবকিছু জানবে, তখন সে বিস্মিত হয়ে বলে উঠবে- ‘আল্লাহ’। তিনি ব্যতীত এই ক্ষমতা কারু নেই’। জ্ঞানী বান্দা এক গ্লাস পানি বা পানীয় পান করার সময় যখন জানবে যে, জীবন হরণকারী এক গ্লাস আগুনকে তার জন্য জীবনদায়িনী এক গ্লাস পানিতে পরিণত করা হয়েছে, তখন তার দেহ-মন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠবে- আলহামদুলিল্লাহ ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য’।
কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, বিজ্ঞানীদের এই মূলব্যান আবিষ্কারকে মানুষ ব্যবহার করছে মানুষের ধ্বংসের কাজে। তারা হাইড্রোজেন দিয়ে বোমা বানাচ্ছে। অথচ সুপেয় পানির অভাবে প্রতি বছর লাখ লাখ বনু আদম অসহায়ভাবে মারা যাচ্ছে।
ক্বিয়ামতের দিন ভূগর্ভে গ্যাসীয় আগুন এবং ভূপৃষ্ঠের সমুদ্রের আগুন মিলিত হয়ে সমস্ত পৃথিবী জ্বলে-পুড়ে একাকার হয়ে নতুন জগত সৃষ্টি হবে এবং সবকিছুই ঘটে যাবে আল্লাহর হুকুমে চোখের পলকে বা তার চাইতে কম সময়ে (ইবরাহীম ১৪/৪৮; লোকমান ৩১/২৮; নাহল ১৬/৭৭)।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭