somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইন্টারভিউ

০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্যার আমি পারবো
স্যার আমি টাইয়ের নট বাধঁতে পারিনা কিন্তু কোন বাস ছিদাম মুদি লেনে দাঁড়ায়
এক্ষুনি বলে দিতে পারি।
এক্ষুনি বলে দিতে পারি গুমঘর লেনটা ঠিক কোথায়
আমি শিমুল গাছের পাতা চিনি
আমার বন্ধুরা বলে আম হ্যাভি কথা বলতে পারি।
রাধা স্টোর্সের এর মালিক এর কাছ থেকে থেকে পঁচিশ টাকা চাদা একমাত্র আমিই তুলে দিতে পারি স্যার।
এখান থেকে এক টিপে ঐ ল্যাম্পপোস্টের আলো ভেঙ্গে দিতে পারি আমি এক্ষুনি
আমি দাড়ি কামাতে পারিনা
রামের সেলুনে গোবিন্দ কেটে দেয়
সপ্তাহে তিনদিন সঙ্গে মালিশ ।
আমি মাঞ্জা দিতে পারি স্যার
একটানে একবার একসঙ্গে তিনটে ঘুড়ি কেটেছিলাম
রাত্রিবেলা ঠোঙ্গার মধ্যে মোমবাতি সেট করে ঘুড়ি ওড়াতে পারি।
স্যার সাধনদের দোতলার বারান্দায় পাইপ বেয়ে উঠে বল পাড়তে হয় আমাকেই
একবার বল পাড়তে গিয়ে বিবসনা বৌদিকে দেখেও
চোখ ফিরাতে পারি।






বঙ্গ বিদ্যালয়ে পড়তাম তো- ইংরেজিটা বুঝতে পারি, বলতে পারিনা
কিন্তু একবার এক সাহেবকে নিমতলা ঘাটের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলাম- বাংলাতেই!
হল কালেকশন ভালো হলে মাধ্যমিকের অঙ্কে লেটারটা পেয়ে যেতাম

তিনটে টিউশনি করি স্যার
একটা ছাত্রী এইবার ক্লাসে ফিফথ হয়েছে।
আমি একশো মিটার দূর থেকে বাসের নাম্বার ঠিক ঠিক পড়তে পারি স্যার
পেছনের গেইটে ঝুলতে পারি অনায়াসে।
জলের ট্যাংকের উপর একহাত ভর দিয়ে স্কুলের পাঁচিল টপকাতে আমার জুড়ি ছিলোনা স্যার ।

অশোককে কেন মহোমতি বলা হয়?
একবার ক্লাস ফাইভে পড়েছিলাম।
তবুও মাধ্যমিকে চারপাতা লিখেছি। এখনও পারি।

আমি মদ খাইনা
কিন্তু একবার পাড়ার স্পোর্টসে গো এস ইয়্যু লাইকে
মাতাল সেজে প্রাইজ পেয়েছিলাম।
আমি শাম্বুকে বুঝিয়ে পাতা খাওয়া ছাড়িয়ে দিয়েছি
শ্যামল আর তার দাদারা একটা নিরীহ পাগলকে বাঁশ পেটা করছিলো স্যার
আমি একা ওদের আটকেছি স্যার
পিন্টুকে মেরেছিও বাধ্য হয়ে।

আমি সাল মনে রাখতে পারিনা স্যার
১৭৫৭-তে পলাশি যুদ্ধ, ১৮৫৭-তে সিপাহী বিদ্রোহ আর ১৯৪৭-এ স্বাধিনতা ছাড়া আমার কিচ্ছু মনে নাই।
কোন সালে গ্রেজুয়েট হয়েছি সেটাও সার্টিফিকেট দেখে মনে পড়ে।

আমার স্যার দুটো জন্মদিন
একটা স্কুলের একটা বাড়ির
স্যার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আপনার ঘাড়ে হাত ছুঁইয়ে
সমস্ত টেনশান উধাও করে দিতে পারি
বাবার মাথাব্যাথা বলে আমি মালিশ করে দিই স্যার।
বাবা বলে- আমার হাতে জাদু আছে
আমার বাবা স্যার আমার মতো না, ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন
বাবা ভালো বক্সিং করতেন
মা ক্লাস সেভেন পর্যন্ত
'এই করেছ ভালো নিঠুর হে' গানটা দারুন গায়
বাবার আফ্রিকা পুরা মুখস্ত।
আমি স্যার একবার সুকান্তর ছাড়পত্র মুখস্থ করেছিলাম
একটা প্রতিযোগীতায় নামও দিয়েছিলাম
প্রাইজ পাইনি- ভুলে গেছি কবিতাটা
খালি সুকান্তের গালে হাত দেওয়া ছবিটা আর 'নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার' এই লাইন ছাড়া আর কিচ্ছু মনে নেই।

মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলে অস্বস্তি হয়
একটা মেয়ে রোজ দেখতাম দূর থেকে
ও বারান্দায় ঘুরে ঘুরে পড়তো
আর আমি নিচে ট্রাম রাস্তায়
একবার একটা চিঠি ফেলেছিলো উপর থেকে
পালিয়েছিলাম স্যার, ওপাড়ে আর যেতামই না

কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম টিটি খেলি
কেউ বিশ্বাস করতো না
টপ স্পিন করতে পারি, চপ করতে পারি
খুব তারাতারি শিখে ফেলতে পারি, সুযোগ পেলে-

আমি তবলাও ভালো বাজাতে পারি স্যার
বাড়িতে কিন্তু তবলা নেই
আমি ডেস্ক বাজাতে পারি আরো ভালো
সঞ্জু গান গাইলে আমাকেই ডেস্ক বাজাতে হয়

আমি গান গাইতে পারিনা স্যার
একবার পল সায়েন্সে ব্যাক পেয়েছিলাম
পরের বার ক্লিয়ার করে ফেলেছি
অবশ্য স্নিগ্ধা না থাকলে হতো না স্যার
ও-ই আমাকে নোটস লিখে দিতো
আমি তো ক্লাস-ফ্লাস বিশেষ কিছু করতাম না
চন্দ্রদাকে পনের টাকা দেওয়ায় আর নন-কলিজিয়েট হইনি ।
স্নিগ্ধা খুব ভালো মেয়ে স্যার
ওকে টিপ পড়লে দারুন লাগে
ও জানতো আমি গাঁজা খেতাম, তবুও কিছু বলেনি
আমাকে খারাপ ভাবেনি।
রজতকে, কৃষ্ণন্দুকে রোজ আমার কথা জিজ্ঞেস করতো স্যার
ইন্টার কলেজ ক্রিকেটে ও আমার খেলা দেখতে গিয়েছিলো
ওই একমাত্র মেয়ে দর্শক ছিলো সেদিন
ও ক্রিকেট কিচ্ছু বুঝেনা তবুও...
সবার ওকে ভালো লাগে স্যার।
ওকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম
স্কুলে কখনো লেটার রাইটিং ট্রাই করিনি
প্রেসিটাই চেষ্টা করতাম
স্নিগ্ধা চিঠির উত্তর দিয়েছিলো
লিখেছিলো- আমি নাকি ভালো চিঠি লিখি
স্নিগ্ধা আমাকে কিছু বলেনি কিন্তু আমি গাঁজা ছেড়ে দিয়েছি স্যার
পল সায়েন্সে ব্যাক পাওয়ার পরেও ও আমার সঙ্গে ছিলো স্যার।
ওই আমাকে কাগজ থেকে এপয়েন্টমেন্ট এর বিজ্ঞাপন কেটে দেয়
স্নিগ্ধার জন্যে আমি স্যার আজকে দাড়ি কামিয়েছি
শার্টটা ইস্ত্রি করিয়েছি মাকে দিয়ে
সুজিতকে দিয়ে টাইয়ের নট বাঁধিয়েছি
টাইটা স্যার দাদুর।
দাদুর কাঠের আলমারিতে ছিলো
আমি স্যার তুবড়ি বানাতে পারি
হাতে রেখে চকলেট বোম বানাতে পারি
আমার এপ্লিকেশনটা .... বাবা লিখে দিয়েছে স্যার।

আমি পারবো স্যার
স্নিগ্ধা আজ বিবেকানন্দ রোডে দাড়াবে বলেছে
এখান থেকে ওখানে যাবো স্যার
ও খুব টেনশানে আছে স্যার
কিছু না বুঝতে পারলে ও সব বুঝিয়ে দেবে
ও অনেক কিছু জানে
শ্যাম বেনেগালের ল্যাটেস্ট ছবির নাম ও জানে
সমরেশ বসুর লেখা, সুনীল গাঙ্গুলির উপন্যাস ও পড়েছে স্যার
ভিক্টোরিয়া ওকম্পোর কথা ওই আমাকে বলেছে স্যার।

আমি স্যার ঘুড়ি, ক্রিকেট, গাঁজা, ডেস্কবাজানো, কবিতা, আড্ডা ছাড়া আর কিছুই পারিনা।
কিন্তু স্নিগ্ধার জন্যে সব করতে ইচ্ছে করে।
ওর জন্যে একদিন আমি দিলরুবার সামনে দুঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম স্যার
ওর জন্যে আমি রাত জেগে চিঠি লিখার চেষ্টা করি স্যার
অনেক সাহস পাই স্যার
ওর জন্য অনেক কিছু জানতে পারি
শান্তি পাই, বুকের ভিতর পায়রা ওড়ার শব্দ পাই
ওর চোখের দিকে তাকালে কিসের যেন ডাক শুনতে চাই
স্নিগ্ধার জন্যে এত কিছু পারি স্যার এতো কিছু পাই স্যার
একটা চাকরি পাবোনা??

** কবিতার নামঃ ইন্টারভিউ, কবি- শিলাজিৎ মজুমদার **
কবিতার আবৃত্তি শুনি প্রথমে ইয়্যুটিউবে। এতো ভালো লাগে, এত্তো ভালো লেগেছে যে পুরোটা নিজেই টাইপ করেছি।এক বসাতে। গুগলে সার্চ করে পাইনি, তাই।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×