somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এভাবে দেখা হতে নেই...

২৬ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বনানীর স্ট্রেইট ওয়ান-ওয়ান এ বসা সম্ভার । ওয়েটারের কাছে খাবারের অর্ডার দিয়ে মোবাইলে একা একা গেইম খেলে যাচ্ছে । অফিসের কাজে তার ঢাকাতে আসা। চাকুরি সূত্রে সে এখন চট্রগ্রামের বাসিন্দা । বেশীদিন হয়নি ঢাকা ছেড়েছে । বছর পাঁচেক কিংবা তার কিছুটা বেশী ।
হটাৎ করে একটি বাচ্চা তার সামনে এসে আদুরে গলায় বললো- ''আঙ্কেল,তোমার টেবিলের নিচে আমার বলটা পড়ে গেছে-তুলে দাও''
সম্ভার বাচ্চাটার দিক তাকালো। মায়া মায়া চোখ আর আদুরে একটা ভাব আছে বাচ্চাটার চেহারার মধ্যে।
টেবিলের নিচ থেকে বলটা তুলে দিয়ে বললো - নাম কি বাবু তোমার? তোমার আম্মু-আব্বু কোথায়?

বাচ্চাটা কোন কথা না বলে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো কর্ণারের চেয়ারে দিকে বসা একজনের দিকে । রেস্টুরেন্টের ঠিক দক্ষিনদিকটাতে বসা একজন । মোবাইলে কথা বলছে। খুব জরুরি আলাপ হয়ত হবে। তা না হলে বাচ্চাকে বেখেয়ালে রেখে এইভাবে কেউ ফোনে কথা বলেনা। সম্ভার ভালো মতোই তাকালো তার দিকে কিন্তু খোলা চুলের কারণে চেহেরাটা ভালোমত দেখা যাচ্ছেনা পরিপূর্নভাবে। পেছন থেকে কেমন যেন পরিচিত পরিচিত বলে মনে হচ্ছিলো তার কাছে ।
বাচ্চাটির হাতে ধরে তাকে তার আম্মুর কাছে নিয়ে গেলো সম্ভার।

''এক্সকিউজমি! আপনার বাচ্চাটা এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করছে। দেখে রাখুন...'' কথা শেষ করার আগেই মুখ তুলে তাকালো অন্তি। মূহুর্তেই যেনো কিছুটা দৃশ্যপটের বদল। সম্ভার কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। সাথে অন্তিও। ভাবেনী এমন করে দেখা হয়ে যাবে কোনদিন।
ভদ্রতার খাতিরে কথা চালিয়ে গেলো সম্ভার-''কেমন আছো? কেমন কাটছে দিনকাল? ''
- ''এভাবে দাঁড়িয়ে ক্যানো! বসো'' - অপ্রস্তুত গলায় নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিলো অন্তি।

কুশল বিনিময় পর্ব শেষে দুজনে নীরবে বসে আছে। কে আগে প্রশ্ন করবে এই নিয়ে যেনো একটা নীরব যুদ্ধ চলছে।
পরস্পরকে যে অপ্রস্তুত দেখাচ্ছে তারা দুজনেই তা ঢের টের পাচ্ছে। কিন্তু অনেক কথা হয়ত বলার আছে তবুও কিছুই যেনো জিজ্ঞেস করার নেই।
নীরবতা ভেঙ্গে অন্তিই শুরু করলো জিজ্ঞেসা।

: আমাকে মনে আছে তোমার?
:- এতোটা বাজে কোয়েশ্চেন আশা করিনি।
: তাহলে কিভাবে বলবো?
:- দেখো, এই শহরে গত আট বছরে বদলেছে অনেক কিছুই। ভুলে গেছি অনেক কিছুই। বদলে গেছি আমিও । শুধু বদলায়নি আমার চোখে আট বছর আগে দেখা একটি পুরোনো মুখ।
: তুমি এখনও বেশ গম্ভীর রয়ে গেছো। পৃথিবীর বদল হবে-তোমার আমার পরিবর্তন আসবে এটাইতো স্বাভাবিক,তাই না?


কথার পিঠে কথা চলতেই থাকলো।
পুরনো কিছু সময়ের হারিয়ে গেলো সম্ভার। একসাথে অনেকগুলো সময়-অনেকগুলো মূহুর্ত...আরো কতকি!সত্যিই সে এভাবে কোন সাক্ষাত আশা করেনি অপ্রত্যাশিতভাবে।
তার কাছে মনে হলো জীবনের উনিশতম বছরটাতে যেন কিছুক্ষনের জন্য ফিরে গেছে সে।
কানে হ্যাডফোন গুজে অন্তির বাসার সামনে এসে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকা - দুজনের জন্য একটি আইসক্রিম কেনা, অ্যামেরিকান বার্গারে বসে একসাথে এক বার্গারে কামর বসিয়ে দেয়ার স্মৃতি কিংবা বাসায় এসে ডাইরিতে লিখে রাখা 'আজ অন্তি আমাকে তিনবার ভালোবাসি বলেছে'' ইত্যাদি ইত্যাদি ।
সেই অন্তি এখন তার সামনেই বসে আছে । চলছে ফরমাল কথাবার্তা ! অথচ একটা সময় এই মানুষটার জন্যই ছিলো কতইনা আহাজারি...।।

: ক'দিন হলো ঢাকায় আসছো?
:- এইতো দিন পাঁচেক । দু'দিন পরই ফিরে যাবো। অফিসের কাজে এসেছিলাম । কাজ শেষ হওয়ার পথে।

কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে আবার সম্ভার গম্ভীর গলায় শুরু করলো-
:- আচ্ছা অন্তি, এমন না হলে কি পারতো না?
: যেমনটা হওয়ার ছিলো তেমনটাই হয়েছে। এই নিয়ে আক্ষেপের কিছু নেই। তুমি তোমার মত করে ভালো আছো,আমিও...।। আর তুমি এখনো ছেলেমানুষ রয়ে গেলে। বয়সতো হয়েছে। বিয়ে-টিয়ে করোনি এখনো?
:- না এখনো বিয়ে করা হয়ে উঠেনি। এইতো ক'দিন পরেই হয়তো বিবাহিত হবো।
: কী! পাত্রী-টাত্রী দেখবো নাকি? হা হা হা


বলেই ঝিরঝির করে হেসে উঠলো অন্তি। সত্যিই ঝরনার শব্দের মতন সেই হাসি । একসময় সম্ভারের কাছে সবচেয়ে সুখময় দৃশ্যছিলো অন্তির হাসিমাখা মুখ দেখা । কারণে-অকারণে হাসানোর চেষ্টা করতো তাকে। একবার পরীক্ষাতে খারাপ করার কারণে অন্তির যখন মন খারাপ ছিলো তখন তার সামনে গিয়ে ১২ রকমের হাসি হেসেছিলো সম্ভার শুধু একবার অন্তির হাসিমাখা মুখ দেখবে বলে। এখন এই দিনগুলো অতীত। পুরোনো কে যত দ্রুত ভুলে যাওয়া যায় ততোটাই যেনো শ্রেয় নিজেদের পক্ষে। কে আর হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?
তারাও ভালোবাসেনা। নিজেদেরকে সুখী দেখানোর প্রানন্তকর চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে দুজন। যেনো তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা চলছে নিজেদের মধ্যে।
ইতোমধ্যে খাবার পর্ব শেষ। চিল্ড্রেনস কামড়াতে অন্তির ছেলে খেলা করছে অন্য বাচ্চাদের সাথে। অন্তির একটা ফোন এলো। অপরপ্রান্তকে জানিয়ে দিলো অল্পক্ষনের মধ্যেই ফিরছে সে। এই নিয়ে কোন প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করলোনা সম্ভারের। অন্তির স্বামীকে নিয়ে কিংবা তার সংসার নিয়ে কোন কিছু জানার আগ্রহ তার নেই। এই বিষয়টাতে জানার ইচ্ছা যেনো সকল কালেই তার কাছে অপ্রত্যুল ।
ফোন রেখেই ব্যাস্ত হয়ে পরলো অন্তি। ''আজ তবে উঠি, হয়তো দেখা হবে অন্য কোনদিন । তুমি ভালো থেকো'' বলেই 'সভ্য,এদিকে আসো।আমাদের যেতে হবে' বলে বাচ্চাটাকে ডাক দিলো অন্তি।
কিছুটা সময়ের জন্য 'সভ্য' নামটা ঘুরপাক খেলো সম্ভারের ইন্দ্রিয়তে । একসময় তাদের বাচ্চা হলে এই নামটাই রাখার কথা ছিলো । নামটা অবশ্য সম্ভারেরই পছন্দের ছিলো। যদিও এই নাম নিয়ে অন্তির ঘোরতর আপত্তি ছিলো। অন্তি'র মনে ভয় ছিলো নাম সভ্য রাখলে তার বাচ্চার বন্ধুরা হয়ত তাকে 'অসভ্য' বলেই ডাকবে। কিন্তু, এই 'সভ্য'কে কেউ এখন অসভ্য ডাকে কিনা সম্ভারের তা জানা নেই।

" 'সভ্য' তাইনা!! তাহলে অন্তি আমার দেয়া নামটাই রেখেছে ।" - এইভেবে কিছুটা সময়ের জন্য যেনো নিজের কাছে অদ্ভূত রকমের একটা অনুভূতি পেলো সম্ভার। মানসিক প্রশান্তিও বলা চলে।একা একা দু'মুচকি হেসে নিলো আনমোনে।

সভ্যকে নিয়ে অন্তি চলে যাচ্ছে। দু'তলার উপর থেকে সম্ভার সচ্চ কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে চোখের পলক না ফেলেই। বাইরের দিক দিয়ে পশ্চিমের পথ ধরে হেটে চলে যাচ্ছে অন্তি ।
একটু পর থেকে আর অন্তিকে দেখা যাবে না......।।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:২৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×