somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“সাইকো” ফিল্ম রিভিউ

২৩ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আলফ্রেড হিচককের অনবদ্য সৃষ্টি "সাইকো" দেখে উঠলাম মাত্রই। এটা সত্যিই থ্রিলার গল্পের এক অসাধারণ উদাহরণ।

মেরিয়ন ক্রেনের ৪০ হাজার ডলার চুরি করার ঘটনা থেকে রহস্যের যাত্রা শুরু হয় এবং শেষ হয় অনেকটা কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বের হবার মতো অবস্থায়। মেরি একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী যে কিনা তার বয়ফ্রেন্ড স্যামের বাবার ঋণের বোঝা পরিশোধ করার জন্য অফিসের টাকা ব্যাঙ্কে জমা না করে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে নিজেকে আত্মগোপনে রাখার জন্য। ইচ্ছে ছিল স্যামকে নিয়ে কোথাও সটকে পড়বে দুজনে।

কিন্তু বিধিবাম হয়ে ঠেকে যখন রাস্তার এক ট্রাফিক সার্জেন্ট তাকে সন্দেহ করে বসে গাড়িতে ঘুমানোর কারণে। সার্জেন্টের সন্দেহ আরও প্রবল হয়ে উঠে যখন মেরি নিজের গাড়ি বদলে অন্য গাড়ি কিনে ফেলে অতিরিক্ত দামে কোন রকম দর কষাকষি ছাড়াই। তবুও সবটাই সামলে নিচ্ছিল সুন্দরী মেরি, কিন্তু প্রচণ্ড বৃষ্টিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে যখন হিমসিম খাচ্ছে সে তখন সিদ্ধান্ত নিলো কাছাকাছি একটা মোটেলে গিয়ে উঠবার। এবং নরমান বেটসের মোটেলে উঠেই আবিষ্কার করে সেখানে সে একমাত্র খদ্দের। রাতের খাবারটাও ভাগাভাগি করে খেয়ে নেয় লাজুক নরমানের সাথে। কিন্তু দেয়ালের গোপন গর্ত দিয়ে সেই নরমানই যে তাকে পোশাক বদলাতে দেখবে সেটা সে ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করেনি।

দৃশ্যপট বদলাতে হাজির হল নরমান বেটসের বুড়ো বদমেজাজি মা। এরপরেই সিনেমা শুরু করলো রীতিমত দৌড়। দম ফেলার সময় বা সুযোগ কোনটাই আপনি আর পাবেন না। এদিকে রহস্যের মঞ্চে উঠে আসে মেরির বোন লিলি এবং গোয়েন্দা আর্বোগাট। প্রিয় দর্শক আপনি নিজেও জানেন না ১৯৬০ এর এই বিশ্ববিখ্যাত থ্রিলারটি দেখার সময় কতটা শিহরণ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।




রবার্ট ব্লোচের “সাইকো” নামক বই এর কাহিনি অবলম্বনে জোসেফ স্টেফানোর লেখায় “সাইকো” নির্মাণের সময় হিচককের কাছে তার আগের চলচ্চিত্র মতো বাজেট ছিল না। তাই এই চলচ্চিত্রে টেলিভিশনের কলাকুশলীদের নিয়ে কাজ করেন তিনি। ক্রু মেম্বারদের জন্য তার বাজেট ছিল ৬২ হাজার ডলার। মাত্র ৮ লাখ ডলারে পুরো কাজটি শেষ করতে তিনি অভিনয় শিল্পীদেরকেও কম টাকা দেন। কিন্তু মুক্তির পর এটা ছিল সুপার হিট। সমালোচকদের কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেলেও দর্শকদের কাছে ছিল সম্পূর্ণ নতুন কিছু।

হিচকক বরাবরই জনপ্রিয় তার নিত্য নতুন উদ্ভাবনী কৌশলের জন্য। তেমনি এই চলচ্চিত্রে বেশ কিছু দারুণ শট ছিল। গল্প থেকে উঠে আপনি যদি একটু সিনেমাটোগ্রাফির দিকে মনোযোগ দেন তাহলে বিস্ময়ের সাথে খেয়াল করবেন কতটা অসাধারণ সব দৃশ্যপট বন্দি করেছেন তিনি। মেরির চোখের ম্যাক্রো শট অথবা ডিটেকটিভের সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠার দৃশ্যটা রীতিমত চোখে আটকে আছে আমার। মজার ব্যাপার এই দৃশ্যগুলোকে হিচকককে রিটেক নিতে হয়েছিল বহুবার। মেরির চোখে বারবার পানি লেগে যাওয়ায় ব্লিঙ্ক করা অথবা ক্যামেরা মুভমেন্টের সময় ফোকাস ঠিক রাখাটা খুব কঠিন কাজ ছিল।

মেরির গোসলের দৃশ্যটা তাকে মোট ৬ দিন ধরে নিতে হয়েছিল এবং এতে ৭৭ টা ভিন্ন ভিন্ন ক্যামেরা এ্যাঙ্গেল ব্যবহার করা হয়েছে। চলচ্চিত্রের শিক্ষার্থীদের জন্য এটা একটা আবশ্য পাঠ্য অংশে পরিণত হয়েছে।

বার্নার্ড হারম্যানের মিউজিক এই চলচ্চিত্রের আরেকটি অন্যতম অংশ। গল্পের টেনশন দৃশ্যগুলোতে তার লো বাজেটের কারণে ব্যবহার করা শুধুমাত্র অর্কেস্ট্রার সাউন্ড আপনার গায়ের লোম দাড়া করানোর জন্য যথেষ্ট।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৮
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×