somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেরাদুনে জীবন যেমন ৬: ডাকাতের ডেরাতে

১৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছুটির দিনে ঘুরে বেড়াবার পরিক্রমায় আজ গিয়েছিলাম রবার্স কেভে। দেরাদুনবাসীরা একে গুচ্ছু-পানি নামেই চিনে। আদতে এটি পিঠেপিঠি দুটি পাহাড় ও এর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা একটি জলধারা নিয়ে গঠিত। অনেকটাই গুহার মত। ব্রিটিশ।শাসনামলে ডাকাতদের লুকাবার জায়গা ছিল এটা আর সেই থেকে নাম রবার্স কেভ। বর্ষা এবং শীত, দুই মৌসুমে রবার্স কেভ দুই রূপ ধারন করে। বর্ষায় প্রায় কোমর সমান পানি এবং প্রচন্ড স্রোত নিয়ে গর্জন করতে করতে বয়ে চলা আর শীতে গোড়ালী সমান পানি নিয়ে কুল-কুল শব্দে মৃদু ছন্দে বয়ে চলা, এই হল রবার্স কেভ। বর্ষায় একবার এসেছিলাম, এবার শীতের পালা।

রবার্স কেভ দেরাদুন শহর থেকে ৮ কি.মি দূরে। বাসে চড়ে আধা ঘন্টায় পৌছে গেলাম, তবে রবার্স কেভে নয়। বাস থেকে যেখানে নামলাম তা একটি পাহাড়। পাহাড়ী ঢাল বেয়ে, জন-বসতি পার হয়ে এগোতে লাগলাম রবার্স কেভের দিকে।







রবার্স কেভে পৌছাতে পৌছাতে পাহাড়ে ফুলে ঢাকা গাছ দেখে বসন্তের আগমন টের পেলাম।



রবার্স কেভে পৌছে টিকেট কিনে এগিয়ে গেলাম। ক্ষীন জলধারা বয়ে চলছে যা রবার্স কেভ থেকে এসেছে। এটাকে দেখে কে বলবে এর জন্ম এক স্রোতস্বী জলস্রোত থেকে বা বর্ষাকালে এটা ফুলে-ফেঁপে উঠে এটতাই যে দূর থেকেও তার গর্জন শোনা যায়।



কেভের দিকে এগিয়ে গেলাম বাধানো প্যাসেজ ধরে। নিঝুম একটা পরিবেশ চারিপাশে।



দাড়িয়ে গেলাম কেভের সামনে। প্রবেশের আগে প্যান্ট গুটিয়ে নিলাম কিছুটা। পানিতে পা রাখতেই হিম-শীতল পরশ পেলাম একটা। তবে পানি খুব যে একটা ঠান্ডা তা নয়।



কেভের সংকীর্ণ পথ ধরে এগোতে এগোতে উপরে তাকালাম। দুই পাহাড়ের।মাঝ দিয়ে আকাশ দেখলাম।



কেভের সংকীর্ণ পথ ধরে চলতে চলতে ক্যামেরার ক্লিক চলতে লাগল। পুরো পথটাই যেন রহস্য আর ভয় ঘেরা।












আরও একবার উপরে তাকালাম। পিঠেপিঠি দুই পাহাড় আর তার উপর জঙ্গলের ছাদ, সবমিলিয়ে কেভটি অন্যরকম একটা আবহ তৈরি করেছে।






সবকিছু যে এখানে মনোমুগ্ধকর তাই নয়। দুই পাহাড়ের মাঝে আটকে থাকা বিশাল বোল্ডারগুলো সত্যিই ভয়ানক। মনে হয় এই বুঝি মাথার উপর পড়ল!!






৮০০ মিটার দীর্ঘ কেভের প্রায় শেষভাগে এসে গিয়েছি বুঝতে পারলাম স্রোতের গর্জনে। জলধারার জন্ম যেই ঝরনা থেকে তার খুবব কাছে চলে এসেছি। তবে পথ এবার কিছুটা বন্ধুর। পথ এটতাই সংকীর্ণ যে উবু হয়ে চলতে হবে এবার। তবে তাতেও আছে একটি বাধা। একটি মাইক্রো ঝরনা আটকে দিয়েছে পথ।



ঝরনার কাছে পৌছাবার একটাই উপায় আর তা হল পাহাড় বেয়ে এই মাইক্রো ঝরনা পার হওয়া। তাই পাহাড়ে চড়লাম। পাহাড়ের চুড়ায় দেখি এক স্ন্যাক্সের দোকান। দিনে কয়জন কাস্টমার পায় এই দোকানী কে জানে!



পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে, আবার নিচে নেমে, উবু হয়ে দুটো সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে তবেই নাগাল পাওয়া যাবে আদি ঝরনাটির। পাহাড় বেয়ে এবার পাড়ি দিতে শুরু করলাম সংকীর্ণ পথ দুটি।






সেই ঝরনা! আহামরি কিছু নয় কিন্তু কি তার গর্জন, কি তার জোশ! আর পাহাড় বেয়ে নেমে আসা পানির ফেনিল শোভাও অতুলনীয়। শুধু শোভাতেই নয়, খনিজ উপাদানেও সমৃদ্ধ এই ঝরনার পানি।



এবার ফিরে চলার পালা। পাথুরে দেয়ালের প্রাকৃতিক নকশা, জলধারার পানিতে আলো-ছায়ার খেলা, পাথুরে দেয়াল চুইয়ে পড়া বিন্দু বিন্দু পানি......এইসব দেখতে দেখতে রবার্স কেভের বাইরে চলে এলাম।








রবার্স কেভকে বিদায় জানিয়ে পাহাড়ী ঢাল বেয়ে উপরে উঠে এলাম। অভিকর্ষজের বিরুদ্ধে উঠতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কোলা-স্ট্রবেরী মিক্সড ফ্লেভারের বরফ গোলায় ক্লান্তি নিমিষেই ধূর হল।



বাংলাদেশের খেলা শুরু হবে হবে তাই রবার্স কেভ থেকে সোজা হোস্টেলে ফিরে এলাম। খেলা আয়েশ করে দেখব বলে কে.এফ.সির এক বাকেট মুরগী ভাজা নিয়ে এলাম। বাংলাদেশের টার্গেট দেখে একটা চ্যালেন্জ লুফে নিলাম। বাংলাদেশ জিতে যাওয়ার আগেই আমি সবগুলো মুরগী ভাজা সাবাড় করব, এমনটাই ছিল চ্যালেন্জ।



বাংলাদেশ ম্যাচও জিতল সাথে চ্যালেন্জও। পুরো ইনিংসে আমি মাত্র ৪ পিস মুরগী ভাজা খেলাম। এত ছোট ইনিংসের টার্গেটে ১২ পিস মুরগী ভাজা এত দ্রুত খাওয়া আমার কম্ম নয়! বাংলাদেশ জিতেছে, তাতেই আমি খুশী। কতদিন পর বিজয় এল!!!

কালও ছুটি। তবে হোলির রং ছোড়া-ছুড়ি থেকে বাঁচতে কাল আর ঘুরতে বের হওয়া যাবেনা। বরং ল্যাবে বসে কিছু কাজ করব। ক্যাম্পাস নিয়ে লিখব বলেছিলাম কিন্তু শনিবার দিনটা ল্যাবে কাটায় আর হলনা এ সপ্তাহে। তাই ক্যাম্পাস পর্বটি আগামী কোন এক ছুটির দিনের জন্য রইল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৫৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×