ছুটির দিনে ঘুরে বেড়াবার পরিক্রমায় আজ গিয়েছিলাম রবার্স কেভে। দেরাদুনবাসীরা একে গুচ্ছু-পানি নামেই চিনে। আদতে এটি পিঠেপিঠি দুটি পাহাড় ও এর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা একটি জলধারা নিয়ে গঠিত। অনেকটাই গুহার মত। ব্রিটিশ।শাসনামলে ডাকাতদের লুকাবার জায়গা ছিল এটা আর সেই থেকে নাম রবার্স কেভ। বর্ষা এবং শীত, দুই মৌসুমে রবার্স কেভ দুই রূপ ধারন করে। বর্ষায় প্রায় কোমর সমান পানি এবং প্রচন্ড স্রোত নিয়ে গর্জন করতে করতে বয়ে চলা আর শীতে গোড়ালী সমান পানি নিয়ে কুল-কুল শব্দে মৃদু ছন্দে বয়ে চলা, এই হল রবার্স কেভ। বর্ষায় একবার এসেছিলাম, এবার শীতের পালা।
রবার্স কেভ দেরাদুন শহর থেকে ৮ কি.মি দূরে। বাসে চড়ে আধা ঘন্টায় পৌছে গেলাম, তবে রবার্স কেভে নয়। বাস থেকে যেখানে নামলাম তা একটি পাহাড়। পাহাড়ী ঢাল বেয়ে, জন-বসতি পার হয়ে এগোতে লাগলাম রবার্স কেভের দিকে।
রবার্স কেভে পৌছাতে পৌছাতে পাহাড়ে ফুলে ঢাকা গাছ দেখে বসন্তের আগমন টের পেলাম।
রবার্স কেভে পৌছে টিকেট কিনে এগিয়ে গেলাম। ক্ষীন জলধারা বয়ে চলছে যা রবার্স কেভ থেকে এসেছে। এটাকে দেখে কে বলবে এর জন্ম এক স্রোতস্বী জলস্রোত থেকে বা বর্ষাকালে এটা ফুলে-ফেঁপে উঠে এটতাই যে দূর থেকেও তার গর্জন শোনা যায়।
কেভের দিকে এগিয়ে গেলাম বাধানো প্যাসেজ ধরে। নিঝুম একটা পরিবেশ চারিপাশে।
দাড়িয়ে গেলাম কেভের সামনে। প্রবেশের আগে প্যান্ট গুটিয়ে নিলাম কিছুটা। পানিতে পা রাখতেই হিম-শীতল পরশ পেলাম একটা। তবে পানি খুব যে একটা ঠান্ডা তা নয়।
কেভের সংকীর্ণ পথ ধরে এগোতে এগোতে উপরে তাকালাম। দুই পাহাড়ের।মাঝ দিয়ে আকাশ দেখলাম।
কেভের সংকীর্ণ পথ ধরে চলতে চলতে ক্যামেরার ক্লিক চলতে লাগল। পুরো পথটাই যেন রহস্য আর ভয় ঘেরা।
আরও একবার উপরে তাকালাম। পিঠেপিঠি দুই পাহাড় আর তার উপর জঙ্গলের ছাদ, সবমিলিয়ে কেভটি অন্যরকম একটা আবহ তৈরি করেছে।
সবকিছু যে এখানে মনোমুগ্ধকর তাই নয়। দুই পাহাড়ের মাঝে আটকে থাকা বিশাল বোল্ডারগুলো সত্যিই ভয়ানক। মনে হয় এই বুঝি মাথার উপর পড়ল!!
৮০০ মিটার দীর্ঘ কেভের প্রায় শেষভাগে এসে গিয়েছি বুঝতে পারলাম স্রোতের গর্জনে। জলধারার জন্ম যেই ঝরনা থেকে তার খুবব কাছে চলে এসেছি। তবে পথ এবার কিছুটা বন্ধুর। পথ এটতাই সংকীর্ণ যে উবু হয়ে চলতে হবে এবার। তবে তাতেও আছে একটি বাধা। একটি মাইক্রো ঝরনা আটকে দিয়েছে পথ।
ঝরনার কাছে পৌছাবার একটাই উপায় আর তা হল পাহাড় বেয়ে এই মাইক্রো ঝরনা পার হওয়া। তাই পাহাড়ে চড়লাম। পাহাড়ের চুড়ায় দেখি এক স্ন্যাক্সের দোকান। দিনে কয়জন কাস্টমার পায় এই দোকানী কে জানে!
পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে, আবার নিচে নেমে, উবু হয়ে দুটো সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে তবেই নাগাল পাওয়া যাবে আদি ঝরনাটির। পাহাড় বেয়ে এবার পাড়ি দিতে শুরু করলাম সংকীর্ণ পথ দুটি।
সেই ঝরনা! আহামরি কিছু নয় কিন্তু কি তার গর্জন, কি তার জোশ! আর পাহাড় বেয়ে নেমে আসা পানির ফেনিল শোভাও অতুলনীয়। শুধু শোভাতেই নয়, খনিজ উপাদানেও সমৃদ্ধ এই ঝরনার পানি।
এবার ফিরে চলার পালা। পাথুরে দেয়ালের প্রাকৃতিক নকশা, জলধারার পানিতে আলো-ছায়ার খেলা, পাথুরে দেয়াল চুইয়ে পড়া বিন্দু বিন্দু পানি......এইসব দেখতে দেখতে রবার্স কেভের বাইরে চলে এলাম।
রবার্স কেভকে বিদায় জানিয়ে পাহাড়ী ঢাল বেয়ে উপরে উঠে এলাম। অভিকর্ষজের বিরুদ্ধে উঠতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কোলা-স্ট্রবেরী মিক্সড ফ্লেভারের বরফ গোলায় ক্লান্তি নিমিষেই ধূর হল।
বাংলাদেশের খেলা শুরু হবে হবে তাই রবার্স কেভ থেকে সোজা হোস্টেলে ফিরে এলাম। খেলা আয়েশ করে দেখব বলে কে.এফ.সির এক বাকেট মুরগী ভাজা নিয়ে এলাম। বাংলাদেশের টার্গেট দেখে একটা চ্যালেন্জ লুফে নিলাম। বাংলাদেশ জিতে যাওয়ার আগেই আমি সবগুলো মুরগী ভাজা সাবাড় করব, এমনটাই ছিল চ্যালেন্জ।
বাংলাদেশ ম্যাচও জিতল সাথে চ্যালেন্জও। পুরো ইনিংসে আমি মাত্র ৪ পিস মুরগী ভাজা খেলাম। এত ছোট ইনিংসের টার্গেটে ১২ পিস মুরগী ভাজা এত দ্রুত খাওয়া আমার কম্ম নয়! বাংলাদেশ জিতেছে, তাতেই আমি খুশী। কতদিন পর বিজয় এল!!!
কালও ছুটি। তবে হোলির রং ছোড়া-ছুড়ি থেকে বাঁচতে কাল আর ঘুরতে বের হওয়া যাবেনা। বরং ল্যাবে বসে কিছু কাজ করব। ক্যাম্পাস নিয়ে লিখব বলেছিলাম কিন্তু শনিবার দিনটা ল্যাবে কাটায় আর হলনা এ সপ্তাহে। তাই ক্যাম্পাস পর্বটি আগামী কোন এক ছুটির দিনের জন্য রইল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৫৫