প্রথমেই বলে নেই আমার এম.টেক রিসার্চের গবেষনার থীম থার্মাল রিমোট সেনসিং এবং আমি বাংলাদেশে নগরায়নের ফলে তাপীয় পরিবেশে কি প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে গবেষনা করছি। গবেষনা শেষের দিকে প্রায়। তো কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের শহরগুলো বিশেষ করে ঢাকাতে অসহনীয় তাপমাত্রার বিষয়টি শুনে আসছি। তাই ভাবছি এই বিষয়ে আমার পাওয়া কিছু বিশ্লেষন শেয়ার করি।
তাপমাত্রা বাড়ছে। এটা অবশ্যই সমস্যা কিন্তু আমাদের শহরগুলো কিন্তু সেই সমস্যাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। জ্বালানী একই হলেও চুলার গঠন ও বৈশিষ্ট্য কিন্তু তাপের প্রভাবকে বাড়িয়ে দেয়। আর সেই কাজটাই ঢাকা কিংবা বড় বড় শহরগুলোতে হচ্ছে। ঢাকার দিকে তাকান। চারিদিকে কৃত্রিমতা। ভবনের ঘনত্ব বাড়ছেই। যার কারনে দুটো বিষয় ঘটছে। প্রথমত হিট ফ্লাক্স বাড়ছে যার মানে শহরের কৃত্রিম জঙ্গল তাপকে ধরে রাখছে এবং তাপের প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত আলো-বাতাসের চলাচলকে রুখে হট স্পট (সেই স্থানগুলো যেখানে তাপীয় পরিবেশ সবচাইতে বেশী অসহনীয়। এটাকে সঠিকভাবে আইডেন্টিফাই করতে আমি তাপমাত্রা, নগর-গ্রামীন তাপমাত্রার পার্থক্য, সারফেস ক্যারেক্টার এবং হিট ফ্লাক্স ব্যবহার করেছি কারন তাপমাত্রাই শুধুমাত্র হট স্পট তৈরি করেনা বরং এসব বিষয়গুলোও তাতে অনুঘটকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়)তৈরি করছে যেখানে দিনে-রাতে সবসময় তাপমাত্রা, হিউমিডিটি, ইত্যাদি অসহনীয় হয়ে উঠছে। আমরা হাপিয়ে উঠছি। আমার এনালাইসিসে বিষয়গুলোর সাইন্টিফিক বিশ্লেষন পেয়েছি। বিষয়গুলো এখানে বিস্তারিত লিখছিনা তবে এটুকু বলছি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এ ধরনের সমস্যা যতটা প্রভাব ফেলেছে বলে নানা গবেষনায় দেখা গিয়েছে বাংলাদেশেও তার থেকে কম কিছু নয়। এমনটা চলতে থাকলে কষ্ট বাড়বে বইকি কমবেনা। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার চাইতেও বড় সমস্যা হল অপরিকল্পিত ও সেকেলে পরিকল্পনা যার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে কিছু অদৃশ্য সিস্টেম। এই সিস্টেমই তাপীয় পরিবেশকে অসহনীয় করে তুলছে। আমার বিশ্লেষনে দেখেছি নগরায়ন যে হারে বাড়ছে তারই সাথে সমানুপাতিক সম্পর্ক রেখে হট স্পটের সংখ্যা বড়ছে যা শুধু ঢাকাই নয় বরং বাকী শহরগুলোতেও ছড়িয়ে রয়েছে।
তো কি করা যযায়? সহজভাবে বলতে গেলে প্রথমেই বলি শহরে গাছ কোথায়? এটা অনস্বীকার্য যে যদি শহর জুেড় গাছে থাকত, পার্ক থাকত তাহলে আজ পরিস্থিতি অন্যরকম হত। সেই সাথে ভবনের ডিজাইন, ম্যাটেরিয়াল, ইত্যাদির মানকে যদি তাপমাত্রার প্রভাব কমাতে পারবে এভাবে আপডেট করা হত তাহলে এই বাড়তি তাপমাত্রা কষ্টদায়ক হতনা। নিজের কথা নয়, বিশ্বের নানা দেশ যেমন জাপান, চায়নাতে হওয়া কেস্ স্টাডি থেকেই বলছি। তবে তাদের মানকে অনুসরন করলে চলবেনা কারন বাংলাদেশের পরিবেশ আলাদা তবে তারা যেভাবে সমস্যা মোকাবেলার মডেল তৈরি করেছে বা চেষ্টা করে যাচ্ছে তার আদলে আমাদেরকেও কিছু করতে হবে। পরিকল্পনায় আধুনিকায়ন করে তাপীয় পরিবেশকে সহনীয় করাই সবচাইতে জরুরী। তাহলে সবকিছু স্বাভাবিকতায় ফিরে আসবে। চট জলদি না হলেও আমাদের ভবিষ্যতকে আর অসহনীয় কষ্ট পেতে হবেনা।
সূর্যকে না বকে চলুন শহরকে বদলাই। নগরায়ন ছাড়াও আরও কিছু বিষয় তাপীয় পরিবেশকে প্রভাবিত করলেও বাংলাদেশে অপরিকল্পিত নগরায়নাটাই যেন একটু বেশী বেশী প্রভাব ফেলছে। আর এই ব্যাপারটা আমাদের হাতেই। চাইলেই বদলাতে পারি আমাদের শহরকে, উপভোগ করতে পারি গ্রীষ্মকে.........সত্যিই পারি!
* আমার রিসার্চে ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ল্যান্ডসেট স্যাটেলাইট ডাটা ব্যবহার করেছি যা থেকে বাংলাদেশের শহরগুলোতে নগরায়নের হার ও তাপমাত্রা পাওয়া গিয়েছে। পুরো ৫০০ জিবি স্যাটেলাইট ডাটা যাতে ২০০৩, ২০০৮, ২০১৩ সালের গ্রীষ্ম ও শীতকালের পুরো বাংলাদেশের ডাটা রয়েছে। এছাড়াও ফিল্ড থেকে অনেক তথ্য জোগাড় করেছি। রিসার্চ প্রায় শেষের পথে। পুরো কাজ শেষ হলে বিস্তারিত লিখতে বসব।
* রিমোট সেনসিং, থার্মো ডায়নামিক্স ইত্যাদির নানা রকম সূত্র যা এই রিসার্চের সাথে জড়িত তা আজ আলোচনা করলামনা এখানে। শুধু যে সমস্যাগুলো বুঝতে পেরেছি তাই তুলে ধরলাম। বিস্তারিত যখন লিখব তখন সবকিছুই থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৫২