somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“পাইছি টুরিস্ট, কামাইয়া লই!” (ভ্রমণের একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা......)

২৬ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই লেখা পুরোপুরি না পড়েই অনেকে দালাল বলে বিভিন্ন কমেন্ট করবেন জানি! চলুন তার আগে একটু কষ্ট করে লেখাটা পড়ে দেখি? তারপর নাহয় গালি দেবার মত হলে, গালি দিয়েন!

গ্রুপে ভারতের কোন পোস্ট দিলেই দেখি অনেকেরই গাঁ-জ্বালা করে, অনেকে পাবলিক কমেন্ট করেন আবার অনেকে ইনবক্সে দেশপ্রেমিক হবার আহ্বান জানান। যে কারণে অনেকটা নিরুপায় হয়েই এই লেখাটা লিখছি। দুই দেশের বেশ কিছু যায়গায় ভ্রমণের পরে একটি তুলনামূলক আলোচনা। তবে আর দেরী না করে, দুই দেশের ভ্রমণ স্পট, সেখানকার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, থাকা-খাবার ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কিছু ব্যাপার তুলে ধরতে চাই একবারেই নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে।

তার আগে বলে নেই, বাংলাদেশ আর ভারতের কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়িয়েছি এখন পর্যন্ত।

বাংলাদেশের মোটামুটি ৬০+ জেলা ঘুরেছি আর ভারতের কলকাতা-দিল্লী-আগ্রা-সিমলা-মানালি-জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি-দার্জিলিং-মিরিক এই হল আমার এখন পর্যন্ত ভ্রমণ দৌড়।

এই ভ্রমণগুলো থেকে দুই দেশের ভ্রমণ সংক্রান্ত যে পার্থক্যগুলো চোখে পড়েছে আর অনুভব করেছি সেগুলো এরকমঃ
আমাদের কক্সবাজারে গেলে একটি রূপচাঁদা মাছ খেতে দিতে হয় ৫০০-৬০০ টাকা (অথচ এটা আমদানি করতে হয়না, কক্সবাজারেই পাওয়া যায়!) ভাত-সবজি-ডাল-পানি সমেত এক একজনের প্রতি বেলায় অন্তত ৭০০ টাকা লাগে খেতেই।(মোটামুটি মানের খাবার) এর চেয়ে কমেও খাওয়া যায়, তবে বছরে দুই একবার ভ্রমণে গেলে এটুকু তো মানুষ খেতেই চায়, কক্সবাজার গিয়ে রূপচাঁদা খেতে চায়না এমন মানুষ কমই আছে।

তবে একাবারে সাদা মাটা খাবার খেতেও ৩০০-৪০০ টাকা লাগে। ওদের সেবার মানটা এমনঃ

“পাইছি টুরিস্ট কামাইয়া লই!” “যার কাছে যেমন পারি!”

অটো ভাড়া করবেন? কলাতলি থেকে ইনানি (যাওয়া-আসা) নর্মাল ভাড়া ৩০০-৩৫০, কিন্তু সুযোগ বুঝে আপনার কাছ থেকে ৬০০-৭০০ ও নিতে পারে! আর যদি বোঝে আপনি নতুন অথবা সাথে যদি ফিমেল থাকে তো আর কথাই নাই, এমনকি ১০০০ টাকা নিতেও দ্বিধা করবেনা!

সেবার মানটা এমনঃ “পাইছি টুরিস্ট, কামাইয়া লই!” “যার কাছে যেমনে পারি, যত খুশি তত কামাই!”

আর ঢাকা থেকে কক্সবাজারের বাস ভাড়া ১৮০০-২২০০ পর্যন্ত আছে!! (এসি, একটু বিলাসী ভ্রমণ হলেই বা বছরে একবারই যারা ভ্রমণ করতে পারেন, এটুকু আরামে তো যেতে চাইতেই পারেন)। নন এসিও বা কম কোথায় ১২০০-১৫০০ টাকা! অথচ কত কিলো রাস্তা ৪০০ সাকুল্যে! এতো ভাড়ার যৌক্তিকতা কতটা?

চলেন এবার হালের ক্রেজ সাজেকে যাই? আচ্ছা একটা পাহাড়ে যেতে টিকেট লাগবে কেন? কতটা অদ্ভুত হতে পারে! অথচ আগেও গিয়েছি, কই তখন তো টিকেট ছিলোনা! সাধারণ একটা পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে গেট বানিয়ে টিকেট কেটে উঠতে হবে! পেয়েছে সোনার ডিম পাড়া এক হাস, সাজেক তার নাম!

এবার আসি জীপের কাছে (যাকে চান্দের গাড়ি বলি) দুরত্ত খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাকুল্যে ৬০-৬৫ কিলো। অথচ তার ভাড়া, যাওয়া-আসা ৪০০০-৫০০০ টাকা! কিভাবে, কোন যুক্তিতে?

আমাদের সেবার মানটা এমন
“পাইছি টুরিস্ট, কামাইয়া লই!” “যার কাছে, যেমনে পারি!”

হালের আর এক ক্রেজ “বিছানাকান্দি” সেদিন পত্রিকায় দেখলাম, বিছানাকান্দির প্রায় বুকের উপরেই হোটেল খোলা হয়েছে! যার পরিত্যাক্ত ময়লা ফেলার জন্য পাইপ দিয়ে নদীতে ফেলার ব্যাবস্থা করা হয়েছে! কি চমৎকার উপায়!! আর নৌকার স্বেচ্ছাচারী ভাড়ার কথা নাহয় নাই বললাম!

এরপর আসি এক বিশ্ব ঐতিহ্যে! “সুন্দরবন” এতটা বৈচিত্রপূর্ণ ভ্রমণের আর কোন স্পট বাংলাদেশে একটিও নেই, এই ব্যাপারে সবাই নিশ্চয়ই সহমত হবেন।

সেই সুন্দরবন কিভাবে উজাড় করা যায়, সেই ব্যাবস্থা একেবারে পাকা করে ফেলেছে আমাদের দেশ প্রেমিক(!!) রা!

এই হল আমাদের টুরিস্ট স্পট, সেই যায়গার মানুষ, ব্যাবসায়ি আর অন্যান্য ক্ষমতা ও নীতিনির্ধানের কার্যপ্রণালী আর সেবার মান!
তো সর্বোপরি সেবার মানটা হল
“পাইছি টুরিস্ট, কামাইয়া লই!” “যার থেকে যেমনে পারি!”

আর একবার পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে কোনমতে ঘুরে আসার পরে আমরা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি, বাবা এতো খরচ, এতো হয়রানী আর এতো এতো ঝামেলা! মানুষের এমন গলাকাটা স্বভাব! আর যাবোনা! পারলে টাকা পয়সা জমিয়ে বিদেশ যাবো, তবু এতো এতো হ্যাসেল নেবনা!

এরকম মনোভাবের ওই একটাই কারণ
“পাইছি টুরিস্ট, কামাইয়া লই!”

এরপর একটু পাশের দেশ ভারতের দিকে যদি তাকাই, তবে কি দেখতে পাই? আমার অভিজ্ঞতার আলোকে, (ভিন্ন মত এবং ব্যাতিক্রম থাকতেই পারে।)

আর ওরা, যেটা খাবারের দাম সেটাই রাখে, বাড়তি দাম আদায় করে যা পারি কামাইয়া লই মানসিকতার নয়, আমি অন্তত পাইনি।
খাওয়াঃ যেখানেই গেছি, খাবারের দামের খুব একটা হেরফের পাইনি কোথাও, ১০০-১৫০ টাকায় বেশ ভালো ভাবে উন্নত খাবার পাওয়া যায়, তার মানে সারাদিনে ২০০-৩০০ টাকায় আরামছে কাটিয়ে দেয়া যায়! যেখানে আমাদের টুরিস্ট স্পটে খেতে গেলে দিন প্রতি ১০০০-১৫০০ এর নিচে খরচ করা খুবই কঠিন!

গাড়ি বা জীপ ভাড়াঃ সারাদিন যেদিকে খুশি আর যতখুশি ঘোরাঘুরি করিনা কেন ২২০০-২৫০০ রুপীতে জীপ বা ট্যাক্সি পাওয়া যাবে।
ড্রাইভার আপনার কাছে কখনো কোন টিপস চাইবেনা (নিতান্ত ছ্যাচড়া ছাড়া!),

আপনি যেখানে খেতে ঢুকবেন, অন্যকোন সুযোগ থাকলে সে সেখানে খেতেই বসবেনা, পাছে আপনি আবার অফার করেন আর সেটার নোট রাখেন!

এক একজন ড্রাইভার-ই, এক একজন পরিপূর্ণ গাইডের কাজ করে থাকে সম্পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে। কোন অতিরিক্ত আয়ের চিন্তা ছাড়াই!
আর হোটেল, স্থানীয় মানুষ, ব্যাবসায়ি বা অন্যান সংশ্লিষ্ট মানুষজন তো আরও অমায়িক (দুই একটি ব্যাতিক্রম ছাড়া)

পাশের দুইটি দেশের ট্যুরিজম সেক্টরের এই বিস্তর বিস্তর পার্থক্য পেয়ে-দেখে আর অনুভব করে মনে মনে ভাবছিলাম, আচ্ছা কেন ওরা এমন? আর কেন আমরা এমন? কি সমস্যা আমাদের? আর কি কারণ ওদের এমন আন্তরিক আচরণের?

অনেক ভাবনার পরে যেটা খুঁজে পেলাম, সেটা এরকম......

ওদের সেবার মানটা এমনঃ টুরিস্ট এসেছে, ভালো ব্যাবহার, সেবা আর আপ্যায়ন করলে, আবার আসবে, আর পরে যারা আসবে তাদেরকে আমাদের রেফারেন্স দেবে, বেশী বেশী টুরিস্ট আসবে, বেশী বেশী বেচাকেনা হবে, বেশী বেশী লাভ হবে!

হোটেল সেবা, ভাড়া, খাবারের দাম, গাড়ি ভাড়া, আন্তরিক ব্যাবহার, বাটপারি না করার, অন্যতম কারণ হলঃ এটা ওদের ব্যাবসা, জীবন জীবিকা, বেঁচে থাকার একমাত্র হাতিয়ার, ভালো আচরণ আর আন্তরিকতা এবং গলা না কাঁটা হল ওদের ইনভেস্টমেন্ট!

ইনভেস্টমেন্ট? ভাবছেন কিভাবে?

ওরা মনে করে ভালো আর আন্তরিক ব্যবহার, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য সেবা দেয়াটা ওদের কর্তব্য! ট্যুরিজমের জন্য ভালো, যারা একবার আসবে, তারা বারবার আসতে চাইবে, আর একবার যারা এমন সেবা পাবে, তারা অন্যদেরকেও আসতে উৎসাহিত করবে এবং আমাদের কথা বলে দেবে! যেটার কারণে আমরা বেশী বেশী টুরিস্ট পাবো, আর বেশী বেশী উপার্জন করে, নিজের ও দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে সক্রিয় ও উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করতে পারবো!

ওদের এই ভাবনার সাথে আমি সহমত, কারণ যেসব যায়গায় এখন পর্যন্ত গিয়েছি, প্রত্যেক যায়গার মানুষ আর তাদের নাম্বার চেষ্টা করেছি রাখতে, কারণ আবার যদি কখনো যাই আগে ওদেরকেই খুঁজবো, যাদের কাছে প্রথমে গিয়ে ভালো সেবা পেয়েছিলাম।
আর দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভাবনাটা এমন, ওরে বাবা ওখানে যাবোনা আর ওরা একেবারে গলা কেটে রেখে দেয়!

ওদের কাছে ট্যুরিজম একটা বিশাল আয়ের অন্যতম উৎস, আর আমাদের কাছে ধান্ধাবাজির একটা মুখ্য উপায়!

আচ্ছা আমরা কেন ওদের মত ভাবতে পারিনা?
কেন পারিনা ওদের মত করে নিজেদের আচার-আচরণ-ব্যাবহার আর সেবার মানটাকে ইনভেস্টমেন্ট ভাবতে?

আমাদের তো সম্পদ একদম কম নেই?
ট্যুরিজম দিয়ে তো আমরাও পারি অন্যতম শীর্ষে পৌছাতে!
কোথায় সমস্যা আমাদের?

কারণ, ট্যুরিজম আর টুরিস্ট আমাদের কাছে ইনভেস্টমেন্ট বা আর্থসামাজিক ভাবে উন্নয়নের উপায় নয়,
এটা আমাদের কাছে......

উপরের শিরোনামের মত করে......

“পাইছি টুরিস্ট, কামাইয়া লই!”
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৪
২২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×