somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালীত্বের মাইক্রো ফ্যাক্টোরিয়াল সমীক্ষা : শব্দ , পোশাক , খাবার আর এটা সেটার সাংস্কৃতিক স্যালাইন

১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ বাঙালী মুসলিম ফকির , ১৮৬০

এই ব্লগটা শুরু করবো হাল্কা মেজাজে।
এরপর লিখতে লিখতে দেখা যাক কতটুকু সমঝদারিত্তের যবনিকা টানতে পারি।

মূলত - বাঙ্গালীত্ব নিয়ে সম্প্রতি একাত্তর টেলিভিশনে মিতা হকের মন্তব্য এবং অদিতি ফাল্গুনীর রিফুয়েলিং অফ বার্নিং ফ্লেম এর উত্তাপেই লিখতে বসলাম।
কিন্তু আমি বলবো মিতা হক কিংবা অদিতি ফাল্গুনিরা দিশলাই জ্বালিয়েছেন মাত্র।
বিতর্কের গ্যাসটা প্রায় নিঃশব্দে এদেশী চ্যানেল গুলোই এতদিন ধরে নিঃসরন করে এসেছে।
এই গ্যাসে কেউ কলকাতার খাঁটি বাঙ্গালিয়ানার অ্যারোমা খুঁজে পান , আবার কারো নাকে এটা বেশ ঝাঝালো শোঁকে।

দেখাযাক এই বিতর্কের আগুনে এই ব্লগটা কিভাবে কাজ করে।
কার্বন ডাই অক্সাইড এক্সটিংগুইশার না গরম তেলে ঘি !


[১]

আপনি কি একাত্তর চ্যানেল কিংবা দেশ টিভি দেখেন ?
এই চ্যানেল গুলোর ভক্ত , এই চ্যানেলগুলোর প্রোগ্রাম উপভোগ করেন ?
যদি করেই থাকেন - তো দর্শক হিসাবে সে স্বাধীনতা আপনার আছে।
কিন্তু তার আগে আপনার নিজের ব্যাপারে একটা বিষয় যাচাই করে নিতে হবে।

সেটা কি ?
সেটা আপনার নাম।

আপনার নাম কি 'মোবারক' ?
মোবারক হোসেন , মোবারক আলী , মোবারক আহমেদ - কিংবা মোবারক খান / চৌধুরী / ভুইয়া / মিয়া / মুন্সি / মজুমদার / তালুকদার / গাজি / খোন্দকার ইত্যাদি ইত্যাদি ?

যদি সেটাই হয়ে থাকে তবে একাত্তর টিভি কিংবা দেশ টিভি'র মত চ্যানেলগুলো দেখার কোন নৈতিক অধিকার আপনি রাখেন না ।
আই রিপিট - ইউ আর ইন নো মোরাল পজিশন টু টিউন দিস চ্যানেলস।

কেন ?
কারন - এই চ্যানেলগুলো বাঙালীত্বের ছাকনি দিয়ে অবাঙালি শব্দকে ছেকে ফেলে তাদের নিউজে , টক শোতে , অন্য সব নিজস্ব স্টুডিও মেইড প্রোগ্রামে।
সেই ছাকনিতে আপনার নামের 'মোবারক' শব্দটিও ছাকা হয়ে গেছে।

সেই বাচ্চা বয়স থেকে ঈদগাহে গিয়ে নামাজ শেষে কোলাকুলি করার সময় কিংবা হালের সেলফোন কালচারে আমরা ঈদের দিন চেনা পরিচিত সব মানুষকে 'ঈদ মোবারক' জানাই।
কিন্তু এই চ্যানেল গুলো 'মোবারক' শব্দটি ছেটে ফেলে বলে 'ঈদ শুভেচ্ছা'.....

উপরের ঘটনাটাকে লজিক কিংবা হিউমার - যেই সেন্সেই নিন না কেন , বোথ ওয়ে ইট ওয়ার্কস

এই রকম একটা খোঁচা দেয়ার কারন যেটা শুরুতে বললাম।
চ্যানেলগুলোর নিঃসৃত বাঙালীত্বের গ্যাস।
এই গ্যাসটির সংশ্লেষণে উনারা তদ্ভব - তৎসম , আর্য - অনার্য , বিলেতি - গোলন্দাজি - ফরাসী সব রকমের শব্দের 'ঘুটা দিলেও' এখানে আরবী কিংবা ফার্সী শব্দ মিশাতে ব্যাপক প্রকারের নারাজ !

বুঝতে হবে - উনারা কিন্তু অসাম্প্রদায়িক !

সেকারনেই ' ইন্তেকাল ' অবাঙালী শব্দ , মহাপ্রয়ান বাঙালী শব্দ
নামাজ , সালাত - এগুলো অবাঙালী শব্দ , প্রার্থনা বাঙালী শব্দ
'ইন্নালিল্লাহ' অবাঙালী শব্দ , শোকাহত বাঙালী শব্দ....

বলতে গেলে আরো বলা যায়।

কথায় বলে গুরু মারা শিষ্য।
হাল আমলের এই সব মোজাম্মেল বাবু কিংবা আসাদুজ্জামান নুররা নিজেদের নামে 'মোজাম্মেল' , 'আসাদ', 'জামান', 'নুর' এর মত অবাঙালি শব্দ ধারন করে যেভাবে বাঙালিত্ত চর্চা করছেন নিজেদের চ্যানেলে তাতে বাঙালীত্বের উনবিংশ শতাব্দির গুরু বঙ্কিম চন্দ্র মশাই কবর থেকে জিন্দা লাশ হয়ে দাঁড়িয়ে যাবার উপক্রম !

কেন বলছি এ কথা ?
বলছি তাহলে কেন।

'ইশতেহার'
না না মশাইরা।
দাসত্ব রাজনৈতিক ব্লগিং বেশী করে বলে ভাববেন না নির্বাচনী ইশতেহারের কথা বলছি। যেই 'ইশতেহার' নিয়ে কথা বলছি সেটা 'রচনার শিল্পগুন' প্রসঙ্গে



হ্যা , বঙ্কিমচন্দ্র তার 'রচনার শিল্পগুন' প্রবন্ধে যেই 'ইশতেহার' নিয়ে কচলা কচলি করেছেন সেই 'ইশতেহার'....
এস এস সি'র বাংলা বইতে পড়েছিলেন।
মনে আছে নিশ্চয় ?

আজো মনে আছে - সেই 'রচনার শিল্পগুন' প্রবন্ধের রচনামুলক প্রশ্নগুলোর ভেতরে মোস্ট সাজেস্টেড প্রশ্ন ছিলোঃ

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 'রচনার শিল্পগুণ' প্রবন্ধে 'বিজ্ঞাপন' শব্দের পরিবর্তে 'ইশতিহার' ব্যবহার করতে বলেছেন কেন?

ভেবে দেখুন অবস্থা !
সেই ১৮৩৫ এ জন্মানো বাংলা পণ্ডিত বঙ্কিম চন্দ্র যিনি তার বেশ কয়েকটি উপন্যাসে মুসলমানদের কে 'ম্লেচ্ছ' সম্বোধন করেছেন , তিনি সংস্কৃত শব্দ 'বিজ্ঞাপন' এর পরিবর্তে আরবী শব্দ 'ইশতেহার' কে ব্যবহার করা অধিক সঠিক বলেছেন প্রয়োগিক ক্ষেত্র অনুয়ায়ী।

তারমানে সংকর ভাষা বাংলার ককটেলে আরবী- ফারসি শব্দগুলোকে বঙ্কিম শুধু গ্রহন-ই করেন নি , এগুলোর প্রেফারেন্স অফ অ্যাপ্লিকেশনের ওকালতিও করেছেন।

এবার বলুন - একবিংশ শতাব্দির বাঙালিত্তের শিষ্য মোজাম্মেল বাবু কিংবা আসাদুজ্জামান নুররা উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালিত্তের গুরু বঙ্কিমকে মেরে বসেছেন কিনা ?

[২]

মিতা হক প্রসঙ্গে আসি........
মিতা হক কি বলেছিলেন সেটার আক্ষরিক অনুসন্ধানটাই বেশী চলছে।
কিন্তু অক্ষরগুলোর আকরিক বিশ্লেষণ করলে কি পাওয়া যায় তার অনুসন্ধান তেমন একটা চলছেনা।

মিতা হকের মন্তব্যে উনি বলেছেন - এই যে নিনজা টাইপ চোখ ছাড়া আর বাকি কিছু দেখা যায়না , কিংবা অতি হিজাবি , নেকাবি যাদেরকে উনি দেখেন তারা কেউ বাঙ্গালী না।
তারমানে এইভাবে হিজাব -নেকাব পড়ে, টুপি দাড়ি রেখে যারা চলে তারা মিতা হক সংজ্ঞায়িত 'বাঙালীত্বের' ফান্ডামেন্টাল কিছু একটা কন্টেইন করেনা।

কি সেটা ?

আমার ধারনা হিজাব নিয়ে , নেকাব নিয়ে মনে হয় না তার মূল ক্ষোভ।
তার যেখানে অস্বস্তি সেটা হল - এভাবে যারা হিজাব -নেকাব পড়ে , কিংবা টুপি -দাড়ি পড়ে - রাখে , এদের ভেতরের সাইকোলজিটা কি 'রবীন্দ্র' সাহিত্যের জন্য উপযুক্ত ?

একটা বীজ বপনের পর চারা গজিয়ে ঊঠতে হলে ভূমি মাটি হতে হয় উর্বর।
তবেই চারাটা বেড়ে ওঠে , নইলে শুরুতে মরে যায়।

মুলত মিতা হক তার দেশের মানুষের মনভূমির ফার্টিলাইজেশন নিয়েই বেশী চিন্তিত যাতে এই মন ভূমিতে রবীন্দ্র বীজ বপিত হতে পারে , চারা গজাতে পারে , গাছ বেড়ে উঠতে পারে।

এই অতি ধর্ম পালন এই মানুষগুলোর মনস্তত্ব রবীন্দ্র চর্চার জন্য নন - অ্যালুভিয়াল করে তোলে - এটাই তার আশংকা।
সেখানেই ঊনার আফসোস বলে আমার ধারনা।
তারমানে হল রবীন্দ্র প্রোফেসীর ফেলো না হলে সে বাঙালী না।

এখন প্রশ্নটা হলঃ
রবীন্দ্র ফ্যান হওয়াটা কি বাঙালীত্বের ফান্ডামেন্টাল ক্রাইটেরিয়ন ?

এখানেই বেশ কয়েকটা ডাইমেনশন আছে।
[ক]
যদি সেটাই হয় তো রবীন্দ্রনাথ তো ১৮- ১৯ শতকের ট্রান্সিশনাল কবি।
সেক্ষেত্রে টাইম লাইনের ১৭ , ১৬ , ১৫ , ১৪ শতাব্দীর খাঁটি বাঙালীত্বের ক্রাইটেরিয়ন কি হবে ?

উনি কি ভুলে গেছেন যে বাংলা ভাষাকে রয়াল প্রমোশন কারা দিয়েছে ?
ইলিয়াস শাহি।
উনাদের খাঁটি বাংলায় যারা অ্যারাবিয়ান ইম্পিওরিটি হিসাবে বিবেচিত।

'যে জন বঙ্গেত জন্মি হিংসে বংগ বানী , সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি...'
উনি কি ভুলে গেছেন বাংলা ভাষাকে ভালবেসে সেই প্রাচীন ১৬ শতকে কবিতাটি কে লিখেছিলেন ?
শাহ আব্দুল হাকিম - নামেই বোঝা যায় এ আরেক অ্যারাবিয়ান ইমপিওরিটি।

এটা নিয়ে কি বলবেন মিতা হক ?
ইনারা সবাই কি এ ধরায় খাঁটি বাঙালী হতে পেরেছিলেন যখন মিতা হকের মতে বাঙালীত্বের প্রোফেট রবীন্দ্রনাথ স্বর্গে ছিলো ?

[খ]
'জোহরা' কিংবা 'আব্দুল্লাহ' উপন্যাসগুলোর কথা মনে আছে ?
সেখানে ১৮ শতকের কিংবা ১৯ শতকের শুরুর দিকের বাঙালী মুসলিমদের জীবন কেমন ছিলো সেটা পোট্রেইড।

মিতা হকের ভাগ্য ভালো যে উনি এমন এক কালে জন্মেছেন যেই কালে অনেক মুসলমান বাঙালি রবীন্দ্রনাথের গান শোনে , গুনগুন করে গায় , লিরিকও মুখস্থ করে যাদের ভেতরে আমিও একজন।

কিন্তু সেই কালের মুসলমান বাঙালিরা যেমন সুপার রক্ষনশীল ছিলো পোশাকে আশাকে - জীবন ধারনে - তো তারা কি বাঙালী ছিলো না ?

মিতা হক নিশ্চয় কলিম শরাফীকে চেনেন।
কলিম শরাফী নিজেই তো বলে গেছেন যে উনি পীরের বংশের ছেলে।
তো মিতা হক তার কলিম কাকুর বংশকে কি বলবেন ?
অবাঙালি বংশ ?

মিতা হক 'রবীন্দ্র ফ্যান না হলে অবাঙালী'পনার যেই বাটখারা দিয়ে বাঙালীত্ব মাপছেন তাতে সেই অতি কন্সারভেটিভ ১৯৫০ এর আগে অ্যানোডোমেনী কিংবা বিফোর ক্রাইস্ট যুগে যত মুসলমান-ই এ বংগভূমিতে বসবাস করেছেন , তারা কেউই বাঙালী ছিলেন না।

কিন্তু আসলেই কি তাই ?

এমন কি এটাই মনে করে দেখুন না - ১৯৫২'র একুশে ফেব্রুয়ারির যে কয়জন শহিদ - সালাম / রফিক / শফিক / বরকত / জব্বার - সবগুলো নামই-তো অ্যারাবিয়ান ইম্পিওর নাম।

আজ যদি জানা যায় যে এদের ভেতরে কেউ রবীন্দ্রনাথের তেমন একটা ফ্যান ছিলেন না এবং একই সংগে প্র্যাক্টিসিং মুসলিম ছিলেন তাহলে কি তাকে মিতা হক কিংবা মোজাম্মেল বাবুদের কাছ থেকে বাঙালীত্বের সার্টিফিকেট নিতে হবে ?

[৩]

এবার আসছি মিতা হকের ভলান্টিয়ার অ্যাডভোকেট অদিতি ফাল্গুনির একটা মন্তব্য প্রসঙ্গে।
উনি শুধু এটাই বলেন নি যে হিজাব মরুভূমির পোশাক , এটাও বলেছেন যে বাঙালীর খাদ্যাভাসেও নাকি পরিবর্তন এনেছে এই বিজাতীয় মরুভুমির ধর্ম।

যেমন মাছ খেকো বাঙালী এখন নাকি গরু খেকো হয়ে গেছে।
তা বাঙালী মুসলমান কি ছাগল খেকো হয়নি ?
নাকি উনি যেই বাঙালী হিন্দুদের খাদ্যাভ্যাসে বাঙালী মুসলমানদের চেয়ে অধিক বাঙালীত্ব খুঁজে পান তারাও ছাগল খান বলে ছাগল খাওয়ায় বাঙালীত্ব নষ্ট হয় না ?

আর কিছু বলার নেই।

[৪]

তাহলে বিষয়টা কি বোঝা গেলো ?
যেটা বোঝা গেলো সেটা হল বাঙালীত্বের বেশকিছু স্ট্রিম লাইন আছে।
তার ভেতরে দুটো স্ট্রিম লাইন প্রধান।
বাঙালী হিন্দুর স্ট্রিম লাইন , বাঙালী মুসলমানের স্ট্রিম লাইন।

কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে - বাঙালী হিন্দুর স্ট্রিম লাইনটাকেই এখানে বাঙালীত্বের অরিজিনাল স্ট্রিম লাইন গণ্য করা হয়।

কিভাবে ?
যেমন মহেশ আর গফুরের বিখ্যাত গল্পকার যাকে অপরাজেয় কথাশিল্পী বলা হয় , সেই শরত চন্দ্র তার শ্রীকান্ত উপন্যাসে এ রকম লিখেছেন -
'ইস্কুলের মাঠে বাঙালী আর মুসলমানদের ফুটবল ম্যাচ'.....

অনেকে এখানে সাম্প্রদায়িকতা খুঁজে পেলেও আমি সেভাবে দেখিনা।
সেই রকম সাম্প্রদায়িকতা থাকলে মহেশ গল্পটা তার পক্ষে লেখা সম্ভব হতোনা।
বরং সে সময়কার পারস্পেক্টিভে তার এই বাঙালী আর মুসলমান ডিফারেন্সিয়েশনটা বেশ স্বাভাবিক ছিলো।

কারন বাঙালীত্ব বলতে তারা গণ্য করতো বাঙালী হিন্দুত্ব।
বাঙালী হিন্দুর স্ট্রিম লাইনটাকেই তারা অরিজিনাল স্ট্রিম লাইন ভাবতো।
এবং এখনো সেখানেই আছে তাদের অবস্থান।

বাঙালী মুসলমানের স্ট্রিমলাইনে যতটুকু সল্যুবলিটি আছে , তার তুলনায় বাঙালী হিন্দুর স্ট্রিম লাইনের বলতে গেলে কোন সল্যুবলিটি-ই নাই।

যেমন ধরুন - ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ 'র ডাকনাম ছিলো সদানন্দ।
একই রকম নোমেনক্লেচার অসংখ্য বাঙালী মুসলমান পরিবার অনুসরন করে
খোদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাক নাম ছিলো কমল....

আসল নাম আশিকুর রহমান , ডাক নাম অমিত।
আসল নাম জিনাত রহমান , ডাক নাম স্নিগ্ধা।

কিংবা আসল নামই আদিত্য রহমান অথবা স্নিগ্ধা সুলতানা।

আপনি বাঙালী হিন্দুদের বেলায় এরকমটা পাবেন ?
আপনি শান্তি রায় নাম পাবেন।
কিন্তু সালাম রায় পাবেন না।

আপনি ঝর্না দাস নাম পাবেন।
কিন্তু ইয়াসমিন দাস পাবেন না।

কেন ?
সালাম হয়তো বাংলায় মিশে যাওয়া একটি আরবী শব্দ , কিন্তু কোন ধর্মীয় শব্দ তো না।
এর অর্থ শান্তি

ইয়াসমিন একটি বাংলায় মিশে যাওয়া ফারসী শব্দ অতিসম্ভবত , কিন্তু এটাও কোন ধর্মীয় শব্দ না।
এর অর্থ কল্পনাতীত সুন্দর

অথচ লাভলী দাস কিংবা রবার্ট ভদ্র ধরনের নাম আপনি তাদের মাঝে খুঁজে পাবেন যেখানে বিলেত থেকে আসা বাংলায় মিশে যাওয়া ইংরেজী শব্দ তারা ঠিকই গ্রহন করেছে।

এই সল্যুবলিটির ব্যাপারে আরো একটা বিষয় দেখুন।

দক্ষিনারঞ্জন মিত্রের ঠাকুর মার ঝুলি পড়েনি , কিনেনি এমন বাচ্চা ৮০'র দশকে জন্মায়নি।
কোটি বাঙালী মুসলমানের শিশুরা এই গল্পগুলোর ফ্যান্টাসী মাথায় নিয়ে রাতের পর রাত ঘুমিয়েছে যাদের ভেতরে আমিও একজন।

কিন্তু ৯০'র দশকের শুরুর দিকে বিটিভিতে জীন-পরীদের গল্প নিয়ে হীরা-মতি-পান্না নামের একটি নাটক হতো প্রতি শুক্রবার।
কয়টা বাঙালী হিন্দু পরিবারের বাচ্চারা সেটা দেখতো ?

যেই রবীন্দ্রনাথ ফ্যান হওয়া - না হওয়া নিয়েই আসলে মিতা হকের মন্তব্য আর তার সাবসিকোয়েন্ট কান্ড সেটাও আরেকটা বিষয়।
আপনি অনেক বাঙালী মুসলমান পরিবারকে দেখবেন যাদের ছেলে কিংবা মেয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী।
এবার আপনি খুঁজে দেখুন কয়টা বাঙালী হিন্দু পরিবারের ছেলে কিংবা মেয়ে নজরুল সংগীতের শিল্পী ?

এক কমল দাশকেই পাবেন বিখ্যাতদের ভেতরে।
কেন এত দৃষ্টিকটু তারতম্য ?

আপনি বলবেন - নজরুলের অনেক কিছুতে মুসলিম রিচুয়াল ইনগ্রেডিয়েন্ট পাওয়া যায়।
তাই বাঙালী হিন্দুরা নজরুল সঙ্গীত গায় না।
তো সেভাবে চিন্তা করলে রবীন্দ্রনাথের অনেক কিছুতে কি হিন্দু রিচুয়াল ইনগ্রেডিয়েন্টস পাওয়া যায় না ?

এভাবে মাইক্রোস্কোপিকালী খুঁজে দেখতে চাইলে এটাই দেখতে পাবেন যে বাঙালী মুসলমানরা তাদের জীবনে বাঙালী হিন্দুদের অনেক কিছুকে উদার ভাবে মিশিয়ে নিয়েছে , কিন্তু ভাইস ভার্সা হয়নি।

সুতরাং মিতা হকরাও যদি বাঙালী হিন্দুত্ব কে বাঙালিয়ানার আদি অকৃত্রিম স্রোতধারা ভেবে থাকেন , এবং বাঙালী মুসলমানিত্ব কে এই স্রোত ধারায় মিশে যাওয়া দূষিত অ্যারাবিয়ান - পারসিয়ান কিছু হিসাবে ভেবে থাকেন তাহলে বলবো - লেবু কচলালে আরো তেতো হবে।
সবার উচিত নিজের চরকায় তেল দেয়া।
কারন.....

যার যার বাঙালীত্ব তার তার কাছে..........
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:০৮
৫৫টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×