somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাঁস

৩০ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছেলে দেখে চৈতির বাবা মা খুব খুশি, কি ভদ্র আর কি সুন্দর দেখতে আর কত লম্বা! দেখলেই বোঝা যায় খুব উঁচু ঘরের ছেলে। বাবা মা এর মুখ থেকে এই কথা চৈতি অসংখ্য বার শুনেছে ছেলে এবং ছেলের পরিবার ওকে বাসায় এসে দেখে যাওয়ার পর, শুনে শুনে ওর মনেও স্রুক্ষ বিশ্বাস হয়েছে ওর বাবা মার কথার উপর।

ঘটকের মাধ্যমে ৬/৭ জন পাত্র দেখে চৈতির বিয়ের জন্য এই ছেলেকেই বাসায় চৈতির বর হিসেবে নির্বাচিত করলো সবাই।

ঘটকের ফোন এলো একদিন,
চৈতির সাথে দেখা করতে চায়। শুনে ওর বাবা মা পারেনা তখুনি ওকে ছেলের সাথে দেখা করতে পাঠিয়ে দেয়্।
অতঃপর পরদিন বিকেলে চৈতি দেখা করতে যায় ছেলের সাথে।

ভয় সঙ্কোচ কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করে এক রেস্তোরায় ছেলেটির মুখোমুখি বসে চৈতি।
-কেমন আছো চৈতি?
-জী ভালো,
-আব্বু আম্মু কেমন আছে?
-উনারা ভালো আছে??
-ভাইয়া ভাবী?
-জী তারাও ভালো আছে?
-তারা তো বিদেশে সেটেল তাই না ? আই মিন দেশে তো আর আসবেনা? অবশ্য আসবেই বা কেন কি আছে এই ছাইপাশ দেশে! আচ্ছা তোমাদের বাড়িটা কতখানি জমির উপর?
- আমি তো জমির হিসাব খুব একটা ভালো বুঝিনা! কেন?
-হবে বোধহয় বিঘা খানেক নাকি বল?
-হতে পারে।
-এত জায়গা খালি ফেলে রেখেছে, তোমার বাবা একটা বোকা, ৫ তোলা ২ ইউনিটের ২/১ টা বাড়ি করে ভাড়া দিলেও তো কত টাকা রোজগার হতো।
-বাবা এখুনি এসব ভাবছেন না,
-উনার তো ভাববার বয়স ও পার হয়ে গেছে, যা করার আমাকেই করতে হবে।
-আপনি কি করবেন? ওটা আমার বাবার বাড়ি, আপনার তো নয়, মন খারাপ হয়ে যায় ভেতরে ভেতরে চৈতির, এসব কি বলছে লোকটা!!
-আরে পাগলী বিয়ের পর তোমার বাবা আমারও তো বাবা, তোমার সব কিছু তখন আমার। আর শোন আমার কিন্তু তেমন টাকা পয়সা নাই, বিয়ের সময় গয়না দিতে পারবোনা, গোল্ডের তো প্রশ্নই আসেনা। আর তোমার বাবা থাকতে আমাকে কিনতে হবেই বা কেন তাই না!! হাহ হাহ হা!!
আচ্ছা শোনো আমাদের বিয়ের প্রোগ্রাম কই করবে? কমিউনিটি সেন্টারে না বাড়ির ছাদে?
-কই করলে ভালো হবে?
-অবশ্যই কমিউনিটি সেন্টারে, তোমার বাবাকে বলে দিও কিন্তু,
-বলে দিবো।
-আমি কিন্তু টাকা পয়সা খরচ করতে পারবোনা।
-ঠিকাছে।
-মাসে মাত্র ১৪ হাজার টাকা বেতন পাই, এই নিয়ে তোমায় নিয়ে চলবো কি করে! কি করা যায় বলতো??
-কি করা যায়?
-ভাবছি চাকরীটা ছেড়ে দেবো, শশুর মশাই তো আছেই, তোমার বড় ভাই ও আছে, সত্তর আশির মত দিলেই হবে। ভাবছি একটা বিজনেস শুরু করবো।
-সত্তর/আশি হাজার??
-আরে না পাগল! লাখ, সত্তর/আশি লাখ। একটা বিজনেস দাড় করাতে গেলে এটা হিসেবে কোন টাকাই না, তবু আমি এর ভেতর ম্যানেজ করার চেষ্টা করব।

এসময় চৈতির ওর দাদীর কথা ওর খুব মনে পড়তে থাকে, ছোটবেলায় চৈতির দাদী বলতো শোন চৈতি, মানুষকে প্রথম দেখায়ই বিশ্বাস করবিনা,
-কেন দাদী?
-কারন মানুষের অনেক রুপ। একবার দেখে তুই আসল চেহারা চিনতে পারবিনা, একটা মানুষকে যত বেশি দেখবি ততই তার আসল চেহারা ধীরে ধীরে ভেতর থেকে বের হতে থাকবে।
আসলে মানুষ অনেক রকম হয়, অনেক সময় অনেক মানুষের ভেতর তুই পশুপাখি জীবজন্তুর ছায়া দেখতে পাবি। এদের চেহারা মানুষের মত হলেও এদের ভেতর থাকে জন্তু জানোয়ার আর পশুপাখির আত্মা।

চৈতি অবাক হয়ে দাদীর মুখের দিকে চেয়ে থাকে, সে সময় মনে হয়েছিলো দাদী বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলছে। কিন্তু এই লোকটির কথা শুনতে শুনতে ওর দাদীর কথা সত্যি মনে হতে থাকে।
লোকটা নাঁকা। নাকে বাজিয়ে বাজিয়ে কথা বলে,
এত খাচ্ছে এত খাচ্ছে তবু খাওয়া ফুরায় না, চৈতির মনে হচ্ছে ও একটা হাঁসের সামনে বসে আছে, রাজহাঁস না, পেঁচী হাঁস।

চৈতি বিল পরিশোধ করে উঠে দাঁড়ায়, বেতন ১৪ হাজার টাকায় নিশ্চয় বিল দেয়ার মত বাড়তি টাকা নেই এই পেঁচী হাঁস লোকটার, পেঁচী হাঁস বিল দেয়ার ব্যাপারটা দেখলই না যেন।

- কিছু মনে করবেন না আমাকে যেতে হবে, শরিলটা একদম ভাললাগছে না।
-সেঁ কিঁ চৈঁতি, কি হঁয়েছে? চঁল আঁমি তোঁমায় এঁগিয়ে দেঁই, প্যাঁক! প্যাঁক!! বিঁয়ের পঁর আঁমরা কিঁন্তু হাঁনিমুনে যাঁব কেঁমন! প্যাঁক! প্যাঁক!! প্যাঁক!!। কঁই যাব! দেঁশের ভেঁতর নাঁ, দেঁশের বাঁইরে, সুঁইডেন যাঁব শ্বঁশুরমশাই আঁর বঁড়ভাঁইয়ের টাঁকাপয়সা ভাঁলোই আঁছে কিঁ বঁল! প্যাঁক! প্যাঁক!!প্যাঁক!!
আঁমি!বঁললে! অঁবশ্যই ব্যঁবস্থা কঁরবেন! প্যাঁক!! প্যাঁক!! প্যাঁক!!
প্যাঁক!! প্যাঁক!!!
প্যাঁক!!!প্যাঁক!প্যাঁক!!
ব্যস তারপর থেকে এই একটি শব্দই একটানা লোকটির মুখ থেকে উচ্চারিত হতে থাকল অনবরত। যতক্ষন পর্যন্ত না চৈতি লোকটির দৃষ্টির আড়ালে চলে এলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×