লোকটি অনেক পথ আমাকে অনুসরণ করে এসেছে,যখন আমি গুলশান দুইয়ের চত্বর থেকে উল্কা নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠতে যাচ্ছিলাম, আমার ঠিক মনে আছে সে তার বাইক নিয়ে তখন প্রায় আমার শরিল ছুয়ে আমাকে ওভারটেক করে চলে গেছে, আমি ওসবে কিছুই মনে করিনি, চেহারা হালকা যা দেখেছি লোকটার, একে কিছু মনে করার কিছুই নেই। তাড়াহুড়ায় হয়ে থাকতে পারে।
এমন তো কতই হয়, একদিন অতিরিক্ত এক ভদ্র ছেলে তার বাইক আমার পায়ের উপর তুলে দিতে যাচ্ছিলো, আমি কেবল বাস থেকে নামার জন্য এক পা রাস্তায় রেখেছি তখন, ছেলেটি এতই ভদ্র ছিল যে সে আমার চড় থাপ্পর খাওয়ার জন্য সম্পূর্ণই নিজেকে সমর্পণ করেছিল, নিতান্ত বকা দেয়ার দায়িত্ব এসে মাথায় পড়ায় বলেছিলাম এভাবে বাইক চালায় নাকি আশেপাশে দেখে চলতে হয় নাহ!! বলতে বলতে ঠোঁটের কোনের হাসি কিছুতেই গোপন করতে পারিনি। ছেলের ভড়কে যাওয়া চেহারা পেছনে ফেলে সামনে চলে এসেছিলাম সেদিন।
উল্কা বাস বনানী হয়ে ঢাকা ময়মনসিংহ রুট ধরে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যায়। সেদিন প্রচণ্ড রকম জ্যাম/সিগন্যাল থাকায় বনানী মোড় পার হতেই সন্ধ্যা ৭টা পেরিয়ে গেছে।
বাস খিলখেত এর কাছাকাছি এসে ইঞ্জিনে কোন গেঞ্জাম হওয়ায় যাত্রীদের সবাইকে ওখানেই নামিয়ে দেয়। হেঁটে হেঁটে খিলখেত বাস স্ট্যান্ডের দিকে এগোচ্ছি, যেদিন ঝামেলা হয় সেদিন সব কিছুতেই ঝামেলা হয়।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে, পথে আলো আঁধারের মিশেল। হাঁটতে হাঁটতে এক মধ্যবয়স্ক লোককে অতিক্রম করছিলাম সে বিকট শব্দে নাক ঝাড়ছিল এবং নাক ঝেড়ে হাতে নেয়া অংশ ছুড়ে ফেলার প্রস্তুতি নিতেই লাফ দিয়ে সরে গিয়ে নিজেকে বাঁচালাম, আবার হাঁটতে লাগলাম।
হেঁটে অনেকটা সামনে এসেছি একটু ফাঁকা জায়গায় তখনি সেই লোকটি আবার উদয় হল যাকে গুলশান বাইকে দেখেছি। সে আমার পথ আগলে দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে সামনে দাঁড়ালো।। হাহা হিহি হেসেই যাচ্ছে, হাসির চোটে কিছুতেই সহজ ভাবে দাঁড়াতে পারছেনা, বার বার বলছে লোকটি নাক ঝেড়ে হাহাহাহাহা লোকটি নাক ঝেড়ে হেহ হেহ হেহ আপনার আপনার হাহাহাহাহ কি কাণ্ড হাহ হাহ হাহ হাহ ।
ব্যাপারটা চলল দেড় মিনিট। লোকটির মুখ ভর্তি বসন্তের দাগ, কালো কুচ কুচে ঠোট ভদ্রলোকদের অনুকরণে পরে থাকা ময়লা পোশাক আমাকে বিপদের জানান দিচ্ছে। সামান্য একটু সামনেই বাস স্ট্যান্ড, আমি এর সাথে একটা কথাও এখন পর্যন্ত বলিনি, সে বলেই যাচ্ছে হেসেই যাচ্ছে হেসে গড়িয়ে রাস্তায় পরে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিচ্ছে।
হাহা হাহা আপনি আপনি হাহা আমাকে চিনবেননা আমার নাম (নাম মনে নেই কিংবা এমন ভাবে বলেছে বুঝা যায়নি) আমি একটা বায়িং হাউজে আছি হাহা ম্যানেজার পোস্টে হাহা আপনার দৃশ্যটি দেখে হাহা দৃশ্যটি দেখে হাহাহা আপনার নাম কি কোথায় থাকেন হাহা জব করেন না লেখাপড়া? কোথায় যাবেন? হাহাহাহ
আপনাকে বাইকে দেখেছি সেই গুলশান থেকে, বাইক আর সাথের লোক কই? বললাম আমি।
বাইক হাহাহা বাইক ওটা আমার না হাহাহা আপনার নাম বললেন না হাহা কই যাবেন আপনি হাহাহা
একটা পিশাচ আমার সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত ছড়িয়ে আমার যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে তার বসন্ত ওয়ালা চেহারা নিয়ে মুখের কালো ঠোট আর মাড়ি বের করে খুবি জলি আর ফ্রেন্ডলি হয়ে হেসেই যাচ্ছে। খুবি কুৎসিত দৃশ্য। লোকটা কোন পর্যায়ের ক্রিমিনাল বুঝতে পারছিনা।
আমি যদি দৌড় দিতে যাই এবং সে আমাকে ঝাপটে ধরে ফেলে মান ইজ্জত সব শেষ। যদি হাঁটা দেই এবং সে যদি আবার আমার পথ বন্ধ করে তবে তার সাহস দিগুন বেড়ে যাবে। আশেপাশে কাছাকাছি মানুষজন ও কি করে যেন কমে গেছে, চিৎকার করলেও কারো কানে যেতে যেতে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে এবং তখনি পলকের মধ্যেই এক কাণ্ড করে ফেললাম।
আমার সাইড দিয়ে একটি বাস অতিক্রম করার সময় আমি ড্রাইভার লোকটাকে ইশারা দিতে বাসের স্প্রিড কমাতেই তাতে লাফ দিয়ে উঠলাম। ক্রিমিনালটা ও লাফ দিয়ে উঠলো। বাসটা ছোট, যাত্রীও অনেক কম, যে কজন আছে মহিলার সংখ্যা বেশি, একজন বুড়া, ৫/৬ জন মা মেয়ে বাচ্চা কাচ্চা।
ড্রাইভারকে বললাম মামা এই লোকটা আমাকে ফলো করে বাসে উঠেছে, কিছু করেন। শুনে মহিলারা তাদের মেয়েগুলোর গলা জড়িয়ে ধরলো, বুড়া নড়েচড়ে বসে লোকটার দিকে তাকালো, হেল্পার ছেলেটা ড্রাইভারের দিকে, ড্রাইভার ইঞ্জিনের পাশে রাখা নষ্ট একটা টিউবলাইট হেল্পারের দিকে ছুড়ে দিতে দিতে বলল ধর হারাজাদারে, হারামজাদা সাথে সাথে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পালালো। পেছন থেকে হেল্পার শার্টের কর্লার চেপে ধরেও ওটাকে আটকে রাখতে পারলনা। আফসোস!।
পরে এ নিয়ে বাসে ড্রাইভার, সেই বুড়া আংকেল, সেই মহিলাদের নানা গল্প গুজব নানা অভিজ্ঞতা, এয়ারপোর্ট আসতেই আরও যাত্রীরা উঠলো তারাও ঘটনাটা শুনল নতুন করে আবার অভিজ্ঞতা বলার পালা শুরু হল সব মিলিয়ে বাসে সবাই আমার অতি আপনজন পরিবেশ।
আমি ভেবে দেখেছি কেন লোকটা আমার পিছু নিয়েছিলো, ভেবে ভেবে মনে পড়লো সেদিন অফিস থেকে বের হয়ে ডাচ বুথ থেকে টাকা তুলেছিলাম বেশ কিছু। সম্ভবত ঐদিনের ঘটনার জন্য টাকা তোলাই দায়ী।
সব মেয়েরা রাস্তা ঘাটে সাবধানে চলাচল করো, বিশেষ করে আমার মত যাদের নিজেদের ট্রান্সপোর্ট নেই। সবাই নিরাপদে থাকো। আর এই রকম পরিস্থিতি হলে অবশ্যই মাথা ঠাণ্ডা রেখে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করো ডিয়ার। মাথা একদম ঠাণ্ডা। May Allah bless you all.
বিঃ দ্রঃ এটা কোন গল্প নয় আমার জীবনে পথে ঘাটে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:০৮