somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ সবুজ পৃথিবী

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেকক্ষণ ধরে চারদিকে নানা রকম বিচিত্র শব্দ হচ্ছে কটকটে শব্দ, ক্যাক্যা শব্দ, কিচিরমিচির শব্দ, মচমচ শব্দ, এসবের মাঝে সবচেয়ে বিচিত্র শব্দ যেটা হচ্ছে তা হল গরগর শব্দ, রু ধীরে ধীরে চোখ মেলে পরিপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে চারদিকে চোখ বোলায়, একটা চারপেয়ে জন্তু ওর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে, জিভ দিয়ে চাটছে পা, ঝট করে পা টেনে নেয় রু, তারপর দম ভরে নিঃশ্বাস নেয়, আহ! কি শান্তি!! এই সেই সবুজ শ্যামল পৃথিবী!! এই সেই সবুজ!!

চারদিকে সবুজ আর সবুজের সমারোহ আর কি কোমল বাতাস পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে রু কে, ও উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই ব্যথায় অসাড় হয়ে আসে শরিল।
রু টাইম মেশিনে স্ক্রীনে ১৯৯৯ সেট করেছিলো, এবং সফল ভাবে চলেও এসেছে সেই সময়ের পৃথিবীতে।
বুক ভরে নিঃশ্বাস নেই ও, ওহ কত বছরের স্বপ্ন আজ সফল হল, ওর কত স্বপ্ন ছিল পুরানো পৃথিবীতে আসার। বর্তমান পৃথিবী (৫০৭৫ সাল) শুধুই নাম মাত্র, পৃথিবী নামে কিছু একটা টিকে আছে শুধু। এখনকার পৃথিবীতে গাছ বলতে কিছু নেই ওগুলো ধংস হয়ে গেছে কবে! যা কিছু আছে সামান্য সেগুলো আর্টিফিশিয়াল। ইতিহাস পড়ে রু জেনেছে আগে পৃথিবীতে আলাদা আলাদা রাষ্ট্র ছিল এখন এসব কিছুই নেই সমস্ত পৃথিবী মিলেই এক আইন এক রাষ্ট্র, জনগোষ্ঠী কমে গেছে অনেক, আগে পৃথিবীর ৩ ভাগ জল ১ভাগ মাটি ছিল, এখন পৃথিবীতে মাটি বলতে কিছু নেই, মানুষ বসবাস করছে কৃত্রিম ভুমিতে, যার মূল্য অনেক অনেক বেশি তাইতো এই পৃথিবীতে শুধু তারাই বেঁচে আছে যাদের সম্পদ আকাশ ছোঁয়া আর বেঁচে আছে রু এর মত মানুষেরা যাদের বিজ্ঞানীরা ল্যাব থেকে সংরক্ষিত হরমোন নিয়ে টেস্টটিউবের মাধ্যমে তৈরি করে, এটা বিজ্ঞানীরা করে যখন পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা অতিরিক্ত কমে যায়।

কিছুদিন আগে টাইম মেশিন বাজারে ছেড়েছে অতীত পৃথিবী নামের এক প্রতিষ্ঠান। রু সেই প্রতিষ্ঠানের একজন সাধারণ কর্মী। এত দাম একেকটা মেশিনের যা এই জনমে কেনার সাধ্য হবেনা, কিন্তু ওর বহু বহু দিনের স্বপ্ন অতীত পৃথিবী স্বচক্ষে দেখার, সবুজ গাছ দেখার, মানুষ দেখার, রু তো ঠিক করে রেখেছে একবার অতীতে যেতে পারলে এই খারাপ হৃদয়হীন পৃথিবীতে ও আর ফিরে আসবেনা।
অবশেষে আজ তার সেই স্বপ্ন সত্যি হল, আনন্দে রুর চোখ চক চক করছে, আহা এত সুন্দর! পৃথিবী এত সুন্দর ও হয়!!

জঙ্গল থেকে বের হওয়ার জন্য হাঁটতে থাকে রু। সব কিছু ভীষণ সুন্দর লাগছে, যা এতদিন আর্কাইভ ভিডিও ফাইল থেকে দেখেছে তা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছে আজ, প্রচণ্ড উত্তেজনার সাথে ভেতরে ভেতরে ভয় ভয় ও করছে।
হাঁটতে হাঁটতে বনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে রু, সামনে ছড়ানো ধান খেত পেরিয়ে একটা নিখুত পাতার বাড়ি দেখা যাচ্ছে। পাতা গুলো শুকিয়ে বাদামি রঙ ধারন করেছে, আহা এত সুন্দর!! এত সুন্দর!!! আনন্দ আর ভয়ের মিস্রনে কাঁপতে থাকে রু, বাড়ির ভেতর মানুষ আছে নিশ্চয়ই! তারা কেমন!! এরকম হাজার হাজার চিন্তা মাথায় খেলে যায় রুর; আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে থাকে সেদিকে।
যেতে যেতে কেমন অস্বস্তিবোধ করে রু।

ধীরে ধীরে সব কেমন পরিবর্তিত হতে থাকে! ধান খেত পরিবর্তন হয়ে কংক্রিট হয়ে যায়, বাড়িটা ছোট হতে হতে মুছে যায় এক সময়, রু প্রানপন চেষ্টা করে সামনে এগিয়ে যেতে।
কিন্তু হায় সব চেষ্টা বিফলে, ওর পা গুলো ডেবে যেতে যেতে চারপাশ কেঁপে ওঠে ভীষণ ভাবে শেষে সব কেমন অন্ধকার হয়ে যায়।
জ্ঞান ফেরার পর রু দেখে সামনে অতীত পৃথিবীর মহা পরিচালক স্বয়ং দাঁড়িয়ে, একটু পাশেই ডি,জি,এম ও ম্যানেজার সহ বেশ কিছু চিকিৎসক কর্মী রোবট।

মহা পরিচালক কথা বলে ওঠে, তুমি টাইম মেশিন চুরি এবং ব্যবহার করে কোম্পানির ভীষণ ক্ষতি করেছো, আমরা তোমার ব্রেন স্ক্যান করে জেনেছি তুমি অতীত পৃথিবীতে থেকে যেতে চেয়েছিলে, আফসোসের সাথে তোমাকে জানাতে হচ্ছে আসলে অতীতে ফিরে যাওয়া হচ্ছে কেবল কয়েক মিনিটের অনুভুতি ছাড়া কিছুই নয়।
ওহ!! অস্ফুট হাহাকার বেরিয়ে আসে রুর গলা দিয়ে।
তারপর...
কত ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেছে কে জানে, রু চোখ মেললো দ্বিতীয় বারের মত, ওর পাশে অতীত পৃথিবীর দুটা রোবট কর্মী দাঁড়িয়ে, তৃষ্ণায় যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে রু ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করে আমার কি হয়েছে?
তুমি অতীত পৃথিবী কোম্পানির আইন লঙ্ঘন করায় তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, তোমাকে মৃত্যু ঘরে নিয়ে আসা হয়েছে, এই ঘরের বিষাক্ত বাতাসে তুমি বড়জোর আর ৪ মিনিট বেঁচে থাকবে।

শরীরের ভেতর সব ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে নাক আর গলা দিয়ে যেন আগুন প্রবেশ করছে ভেতরে, রুর ওর মার কথা ভীষণ মনে পড়ছে যদিও ওর মা নেই, তবু কেন জানি মা নামে কিছু একটা ওর কল্পনায় আসে, শেষ বারের মত শব্দহীন ঠোঁট নেড়ে কিছু একটা বলতে বলতে নিরব হয়ে যায় রু।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×