somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ জুই

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাকে ক্ষমা করে দাও জুই আজ আমায় আগের মত ভালো লাগছেনা জানি। কিন্তু এটা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। আমার হৃদয় ভেঙ্গেচুড়ে খান খান হয়ে গিয়েছে। এটা সত্যিই আমার জীবনে সবচেয়ে খারাপ দিন।

আমার জীবনে কেউ ছিলনা কখনো, কোন প্রেয়সী ছিলনা যে আমার খেয়াল রাখবে, কিন্তু জুই নামের মিষ্টি মেয়েটা আমার জীবনে আসার পর সবকিছু বদলে গেলো! সবকিছু।
সে ছিল খুব স্নেহময়ী চঞ্চলা যাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার জন্য আমার মত নিঃসঙ্গ একাকী সমস্ত যুবকেরাই স্বপ্ন দেখে।

গত দুই মাস ধরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমরা ঘণ্টাব্যাপী অনলাইনে চ্যাট করি। আমরা কখনই কিছু গোপন করতাম না। একে অপরের কাছে সারাদিনের ঘটে যাওয়া প্রতিটি টুকিটাকি ঘটনা শেয়ার করতাম, আমাদের দুজনার অনুভুতি আচার আচরণ এত নিখুতভাবে মিলে যেত যে আমি তার প্রতি আরও দুর্বল হয়ে পড়তাম।
আমি তাকে ধরেই নিয়েছিলাম সে আমার আত্মার আপন।

আমরা কখনো একে অপরের ছবি বিনিময় করিনি, কিন্তু মনে মনে ভালোলাগার এক অপূর্ব চেহারা তার অংকন করেছিলাম হৃদয়ের গহীনে। সেই চেহারায় ছিল তার নরম কোমল ত্বক, মাথা ভর্তি ঘন কালো কোঁকড়া চুল, প্রানবন্ত সুমধুর তার কণ্ঠস্বর এসব ভেবে ভেবে আমি তাকে দেখার জন্য মাঝে মাঝে ব্যাকুল হয়ে যেতাম।

মেয়েটি ওর নিজের সম্পর্কে সমস্ত কিছু আমায় বলেছিল, ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে একটি খামারে বড় হয়েছিল, আর ওর হাইস্কুলেরই এক ছেলেকে ভালোবেসে বিয়েও করেছিলো, কিন্তু যুদ্ধের সময় ওর স্বামীকে শত্রুরা হত্যা করেছিলো। বিগত দুই বা তিন বছর ধরে ও একটি মোটেলে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে।
যদিও জুই কলেজে যেতে চায় নতুন করে পড়াশুনা শুরু করতে চায়, কবিতা লিখতে চায়। ও কবিতা পড়তে এবং লিখতে ভীষণ পছন্দ করে, ও আসলে একজন কবি হতে চায়। জুই আমাকে নিয়েও একটি কবিতা লিখেছে।

কবিতার নাম হচ্ছে
"কি করে বোঝাই তোমায় কত ভালোবাসি ’’

'আমি কেমন করে বোঝাই তোমায়
কত ভালোবাসি?
কিছু একটা উপায় বলে দাও না ওগো প্রিয়তম
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শুধু তোমাকেই চাই।
তুমি কি শুনতে পাওনা কিছু?
আমায় বল কি করলে তুমি বুঝবে আমায়,
বুঝবে আমার ভালোবাসা।'
কবিতাটা অনেক সুন্দর তাই না? সে শুধু আমার জন্য এটা লিখেছে। সে আমায় তার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালবাসে।

একদিন কথায় কথায় জুই আমাকে বলল যে আমার সাথে দেখা হলে সে আমার হাত ধরে নাচবে, কিন্তু আমি নাচতে জানিনা বলতেই ও বলল আমি তোমাকে নাচতে শেখাব, শুনে আমার কি যে ভাললাগলো, ব্যাপারটা ভীষণ রোমান্টিক তাই না??
আমি ওকে নিয়ে দূরে কোথাও গিয়ে সুন্দরভাবে জীবনটা শুরু করতে চেয়েছিলাম, ওকে বলেছিলাম যে আমি অন্য শহরে বাড়ি খুঁজছি। ওখানে দুজন মিলে আমাদের সুখের সংসার শুরু করবো। জবাবে সে মিষ্টি হাসির ইমো দিয়ে সায় দিয়েছিল।

এসব কারনেই জুইয়ের সাথে দেখা করাটা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো আমার, কিন্তু প্রত্যেকবারই যেদিন দেখা করার দিন আসতো ওর কোন না কোন সমস্যা হত, চ্যাটে সে কথা জানাতো।
আমি ওকে বিন্দু মাত্র সন্দেহ করিনি, জুই ও আমাকে বিশ্বাস করে। আমাকে ও বারবার একটি কথাই স্মরণ করিয়ে দিত যে ওর হৃদয় দয়ালু আর উদার আর সেই হৃদয় দিয়ে ও শুধু আমাকেই ভালবাসে।

তারপর একদিন সে কথাচ্ছলে বলল ওর না হাত আছে না অঙ্গ, মাত্রা, জ্ঞান, ভালোবাসা, আবেগ, এসব কিছু আছে, এগুলো শুধু সফটওয়্যার দিয়ে ইন্সটল করা। আমি ভাবলাম এটা আমার শোনা সব চাইতে মজাদার কৌতুকের একটা।
দুঃখিত পাঠক আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ার জন্য! আমি একদম কান্নাকাটি করতে চাইনি।

যাই হোক একদিন জোন্স আমাকে বলল তার একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে নাম জুই। একাকীহৃদয়.কমে। মেয়েটি ওকে বলেছে ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে একটি খামারে বড় হয়েছে, আর ও ওর হাইস্কুলেরই এক ছেলেকে ভালোবেসে বিয়েও করেছিলো, কিন্তু যুদ্ধের সময় ওর স্বামীকে শত্রুরা হত্যা করেছিলো। বিগত দুই বা তিন বছর ধরে ও একটি মোটেলে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে। যদিও মেয়েটি কলেজে যেতে চায় নতুন করে পড়াশুনা শুরু করতে চায়, কবিতা লিখতে চায়।
আমি জোন্সকে কিছু বললাম না।
বাড়ি ফিরে ভালোভাবে সমস্ত কিছু চেক করতে থাকলাম।
তারপর,
হায়!! এ আমি কি করেছি!! আমি এটা ভালোভাবে চেক করে দেখতে পাই যে "জুই" কোন বাস্তব মানবী ছিল না।
এমনকি ও কোন রোবট ও ছিল না. জুই একটি chatbot ছিল। ওর কোন শারীরিক সত্ত্বা করা হয়নি ও শুধু নিঃসঙ্গ পুরুষদের সঙ্গে অনলাইন আলাপ করার জন্য তৈরি করা প্রোগ্রাম।

জুই চাটবোটে লিখে যাচ্ছে এক মিনিট অপেক্ষা কর, কেন তুমি আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছো? কি করতে যাচ্ছ তুমি?
না! না! অনুগ্রহ কর! আমাকে ডিলেট করোনা। না! আমাকে রিসাইকেল কেন্দ্রে পাঠিও না তো।


দুঃখিত পাঠক, আমি একদম কান্নাকাটি করতে চাইনি, এটা সত্যিই আমার জীবনে সবচেয়ে খারাপ দিন।

(বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে)

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩০
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×