somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ সমুদ্র

১৫ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সবুজ নীল ঘন পরিষ্কার অশান্ত সমুদ্রের জলে ওরা ভাসছে। মাথার উপরে গাঢ় টকটকে তামাটে চোখ ঝলসানো সূর্য, সূর্যের নিষ্ঠুর তাপ, মাইল মাইল জুড়ে লবণাক্ত আশ্চর্য সবুজ নিলাভ অতল মৃত্যু ফাঁদ, একটা ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়া স্পীড বোটে ভাসছে ওরা।
ওদের মৃত্যু আসন্ন।
ওরা আজ ৪ দিন ধরে ভাসছে সমুদ্রে, ওরা দুজন স্বামী স্ত্রী, এসেছিলো ওদের বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করতে, বিবাহের ৯ বছর। হতে পারে ওদের ভালোবাসা আর আগের মত নেই, হতে পারে তা সময়ের সাথে সাথে ফ্যাকাসে ধুসর হয়ে গেছে, হতে পারে ধৈর্য ধারন করে ক্লান্ত হয়ে গেছে সঙ্গিনী নিরু। হতে পারে ওদের ঘর আলো করে ওদের কোন সন্তান এখন পর্যন্ত আসেনি পৃথিবীতে!
তবু কিছু একটা তো ছিল, সেই কিছু একটা শেষ হয়ে যাবে, ভীষণ দুর্ভোগের মাধ্যমেই শেষ হয়ে যাবে। আহ জামান তুমি কত কষ্ট করেই না ছুটি ম্যানেজ করলে! আর তোমার বসের প্রাইভেট পোর্ট থেকে নেয়া ওই প্রাইভেট জাহাজটি যেটা ডুবে গেলো প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে!
- নিরু তোমার কি বেশি খারাপ লাগছে!?
- লাগছে কিংবা লাগছে না! অনুভূতি মরে যাচ্ছে!
- আমি হতভাগা তোমার জন্য কিছুই করতে পারছিনা; দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে জামান।
- তুমি তো নিজের জন্য ও কিছু করতে পারছোনা!
- আমার কাছে একটা জিনিষ আছে নিরু, ভয়ঙ্কর জিনিষ, ভ্রমণের শুরুতে মনেই হয়নি এটি কোন কাজে আসবে,
- কি সেটা
- একটা পিস্তল
- পিস্তল!
- সেফটির জন্য নিয়েছিলাম, বস বলেছিল বউ নিয়ে জাহাজে বেড়াতে যাচ্ছ, এটা রাখো, কিছু একটা সেফটির জন্য সাথে থাকা ভালো।
- বুলেট আছে?
- হ্যাঁ দুটি মাত্র!
- জাহাজটা এভাবে কেন ডুবে গেলো! আরও কদিন বাঁচতে ইচ্ছে হয়!
- আমি শুনেছি মানুষ খাবার এবং পানি ছাড়া খুব বেশি হলে ৫ থেকে ৬ দিন বাঁচে!
- সেই হিসেবে আমাদের হাতে আর ১ কিংবা ২ দিন সময় আছে হাতে!?
- হ্যাঁ
- কি করতে চাও তুমি জামান?
- নিরু; প্রিয়তমা চল আমরা নিজেদের মেরে ফেলি, এভাবে কষ্ট কম হবে।।
নিরু চুপ করে থাকে শো শো সমুদ্রের গর্জন আর ছিটকে ওঠা সবুজ লবণাক্ত জলের ঝাঁপটা নিরুকে বাঁচতে প্রেরণা দেয়! ও বাঁচতে চায়! এই পৃথিবীর তেমন কিছু তো দেখাই হল না! তবু এখুনি মরে যেতে হবে! বিশ্বাস হয়না! চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিরুর নিজ হাতে সাজানো ঘর! ঘরের ঠাণ্ডা সুশীতল মেঝে, মেঝের মাঝ বরাবর বিছানো সবুজ মখমলের কার্পেট। জানালা ঘেঁষে ঝুলে থাকা সবুজ স্নিগ্ধ লতা। একটা দুটা পাখির কিচিরমিচির; আহ কি শান্তি ! আহ ঘর এত আপন ঘর!! আর কি দেখতে পাবো না! কেঁদে ওঠে কিনা নিরু বুঝতে পারেনা জামান! চারদিনের তাপদাহ, সমুদ্রে জলহীন আহারহীন চারদিন কাটিয়ে দেয়ার পর এখন আর সেই ভাবে শব্দ করে কথা বলার শক্তি নেই দুজনের!
- চল লাফ দেই পানিতে; বলে নিরু
- তাতে তো মৃত্যুই হবে!
- নাও তো হতে পারে, আমরা কোন ভাবে ভেসে ভেসে পৌঁছে যেতে পারি ভুমিতে।
- হবেনা, দেখো সমুদ্র দেখো আশেপাশে কোথাও ভুমির ছিটেফোটা ও নেই, বিন্দুর মত ও না।


সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়তে পড়তে বিস্তর আলো ঢেলে দেয় ওদের চোখে মুখে কপালে!চোখ অনেকটাই ঝলসে গেছে এই চারদিনে, আরও ঝলসে যাচ্ছে যেন, জামান পকেট থেকে বের করে নিয়ে আসে যন্ত্রটা।
- তোমাকে শেষবারের মত একটু চুমো দেই প্রিয়তমা!
- আমার ওঠার শক্তি নেই একদম, পা এর কাছে একভাবে ভাবান্তরহীন পড়ে থাকে নিরু।

তারপর নিস্তব্ধ পরিবেশ আর সমুদ্রের শো শো শব্দের ভেতর বুলেটের পর পর দুইবার শব্দ বিকট ভাবেই ছড়িয়ে পড়ে আকাশে, চারপাশে, দূরে; বহু বহু দূরে।
- তুমি পিস্তল চালানো কোথায় শিখেছ! টার্গেট একদম ভালনা! এই যে বুকের ডান পাশ দিয়ে শুধু রক্ত ঝরে যাচ্ছে মরে যাচ্ছি না তো! জামান। দুর্বল আর ক্ষীণ কণ্ঠে বলে নিরু, জামান ও দুর্বল নিরু কি বলে ঠিক শুনতে পায়না সে, শুধু অনুমানে সে ও দুর্বল গলায় বলে;
- আমি তেমন ভাবে কোথাও শিখিনি, বস পিস্তলটি হাতে দেয়ার সময় শুধু দেখিয়ে দিয়েছিল!
- আরও গুলি কর মরে যাচ্ছিনা! শুধু কষ্ট হচ্ছে কষ্ট!
- আর গুলি নেই, দুটা বুলেট ছিল তোমায় তো বলেছি! ধীরে ধীরে রক্তে ভরে যায় বোটের মেঝে।


হঠাৎ শো শো সমুদ্রের গর্জনকে বিদীর্ণ করে একটা বোটের শব্দ কানে আসে ওদের, তারপর আরও কাছে আরও কাছে এগিয়ে আসে বোটটা তাতে কমলা সাদা পোশাক পরা দুজন লোক।
নৌকায় দুই দিকে দুজন পরে আছে ওরা, নিরু চোখের কোন দিয়ে দেখে বুঝতে পারে কোস্ট গার্ড।
টেনে টেনে বহু কষ্টে বলে জামান; নিরু নিরু তুমি কি কিছু দেখতে পাচ্ছ? শুনতে পাচ্ছ বোটের ইঞ্জিনের শব্দ? নিরু নিরু নিরু?

আমি কিছু শুনতে পাচ্ছিনা আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না।। ফিস ফিস করে উত্তর দেয় নিরু।। সে কথা সমুদ্রের গর্জনের ভেতর ঢেকে যায় সম্পূর্ণ ভাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:৪৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×