somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ পূর্বার স্মরণে

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




পূর্বা মরে গেছে আজ এগারো মাস, দৌড়ে দৌড়ে সময়টা চলে গেলো! ওর মৃত্যুতে অসীম একটু কাঁদলো না ওর বাড়ি গেল না, ওর বাবা মাকে একটু শান্তনা দিলো না, বরং অনেকটাই পালিয়ে পালিয়ে ছিল, সেটাই শুধুমাত্র করার ছিল ওর।

অসীম ছিল ওর একমাত্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ক্লাসমেট এবং আপন ভাইয়ের মত কিছু একটা সম্পর্ক; অসীম এরকমটাই ভাবতো, ভাবতো পূর্বা ওকে ভাই এর চোখে দেখে এবং ও নিজেও ওকে বোনের মতই ভাবার চেষ্টা করতো কিন্তু ভেতরে ভেতরে পূর্বাকে প্রেমিকা কিংবা স্ত্রী হিসেবেই চাইতো কিন্তু ও জানে এসব একদম অসম্ভব চাওয়া তাই নিজের ইচ্ছেগুলোকে সচেতন ভাবেই গোপন করে রাখতো।

সবদিক থেকে চিন্তা করলে পূর্বা ওর বন্ধু কিংবা খুব বেশি হলে বোনের মত; এর বেশি কিছু নয়।
কিন্তু মাঝে মাঝে অসীম দুঃসাহসী হয়ে উঠতো, বই দেয়া নেয়ার সময় কিংবা হাঁটতে হাঁটতে ভুলে ধাক্কা লেগে অথবা নিতান্ত ,ওকে উঁচু কোথাও কোন রাস্তা কিংবা গাড়িতে উঠতে সাহায্য করার অজুহাতে ছুয়ে দিত ও, পূর্বা কখনো কিছু বুঝতে পারতো কিনা অসীম জানেনা কিন্তু কখনো সে এই ব্যাপারে আপত্তি দেখায়নি।

পূর্বা সুন্দরী, ক্লাসে মেধা তালিকায় প্রথম সারির, স্মার্ট মানবতাবাদী সৎ চরিত্রের এক গুনী মেয়ে, আর অসীম ঠিক যেন উল্টো, সিগারেট, নেশা, অন্যায় প্রায় সবার সাথে বাজে ব্যবহার, মিথ্যা বলা; কোন দোষটি নেই!
তারপর ও কীভাবে কীভাবে যেন ওর সাথে বন্ধুত্ত হয়ে গেলো!! তাই পূর্বার সাথে এর থেকে বেশি আশা করা বোকামি! ভালো করেই জানে অসীম।।

হঠাৎ সব ওলটপালট হয়ে গেলো একদিন, ক্লাসেই এক পলিটিকাল লিডারের ছেলের চোখ পড়ে পূর্বার উপর। ক্লাসের সবাই ভালো করেই জানে অসীম পূর্বার বেস্ট ফ্রেন্ড। কাজেই ওকেই ব্যবহার করে সেই ছেলে, খুব খারাপ উদ্দেশেই ব্যবহার করে।।

পুরো এক লাখ টাকা হাতে দিয়ে সেই ছেলেটি অসীমকে বলল “একদিন পূর্বার সাথে ডেট করিয়ে দে না ভাই, ওকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। বিশ্বাস কর ওর কোন ক্ষতি আমি করবোনা।”
টাকার প্রয়োজন কার না আছে, এমনিতেও নেশার ব্যাপারটা বাসায় জেনে যাওয়ায় হাত খরচ বন্ধ প্রায়, তাছাড়া ওকে ভালবাসে ছেলেটি, অসীমের হবেনা বলে কি পূর্বা কারো হবেনা!??

পূর্বা এবং ওর নিজের ভালো ভালো ভবিষ্যৎ দিকগুলো চিন্তা করেই রাজি হয়, তারপর একদিন সেই ছেলেটির দেয়া সময় অনুযায়ী পূর্বাকে নিষ্পাপ সত্য সাধু গলায় বলে মা ওকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেছে। আজই! এই এক্ষুনি।
আর সেই ছেলেটির ফ্লাটে নিয়ে গিয়ে ছেলেটির হাতে তুলে দিয়ে; পূর্বা কিছু বুঝে ওঠার আগেই দ্রুত চলে আসে সেখান থেকে।
পরের কয়দিন আর পূর্বার খোঁজ নেই।

তারপর একদিন পুরো ভার্সিটি স্তব্ধ।
পূর্বাকে কে বা কারা যেন হত্যা করে ফেলে দিয়েছে নর্দমায়, উদ্ধার হয়েছে ওর অর্ধ গলিত লাশ। প্রাথমিক ভাবে লাশের আলামত দেখে পুলিশ ধারণা করছে রেপ করে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে মেয়েটিকে, বডি পোষ্টমর্টেমের জন্য নিয়ে গেলো তারা।

অনেক দিন ধরেই কেসটা চলল, কারো কিছুই হলনা।

একদিন রাসেল বলল চল আমরা পূর্বার স্মৃতি ধরে রাখি একটা ওয়েব পেইজ বানাই ওকে নিয়ে, সেখানে পূর্বা আমাদের যা যা এস এম এস আর ইনবক্স করেছে সব জমা করে রাখবো।
তারপর এটা নিয়ে সবাই অনেক অনেক কাজ করলো যার যার কাছে যা যা ম্যাসেজ ছিল সব ঐ ওয়েব পেইজে সংরক্ষণ করা হল।।

কম্পিউটার খুলে অসীম আমাদের বন্ধু পূর্বা ডট কমে যায়। একের পর এক ম্যাসেজ খুলে পড়তে থাকে ও, সেখানে ওকে দেয়া ম্যাসেজগুলোও পেয়ে যায়। তারপর পূর্বার এক কাজিনকে দেয়া ম্যাসেজে এসে চোখ আটকে যায় ওর।

সেখানে লেখা, ‘আমি অসীমকে ভালোবাসিরে’, ওর চরিত্রের ভুল ত্রুটিগুলো ও আয়ত্তে নিয়ে এলেই ওকে বলবো যে আমি তোকে ভালোবাসি গাঁধা, তোর সাথে বাকী জীবনটা পার করতে চাই।


ছল ছল চোখে কম্পিউটার বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায় অসীম। রান্নাঘর থেকে ধারালো বটিটা হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে,
তখন সন্ধ্যা ছয়টা,
এ সময় পূর্বার হত্যাকারীকে অনায়াসেই পাওয়া যাবে ওদের গোপন মদের আড্ডায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:৪২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×