ছবি এঁকেছেন তরিক, সংগ্রহ গুগল থেকে ।।
সমাজে বহুযুগ ধরেই পুরুষ এবং নারী যেন দুটি আলাদা প্রজাতি যেখানে তাদের ভেতর ভেদাভেদের শেষ নাই এবং দিন শেষে সকল জল্পনা কল্পনা এবং হাজারো উদাহরন হাজারো ধর্মীয় কিংবা অধর্মীয় হিসাবনিকাশ করে সকল পুরুষ এবং পঁচানব্বই ভাগ নারী এই সিদ্ধান্তে আসতেছে যে নারী একটি আলাদা মানব সম্প্রদায় যারা শুধু ভুল করে, যারা কম বুদ্ধির নিম্নশ্রেণীর কিছু একটা হয়ে থাকতে পারে।
নারীদের দিন কাটে অন্যদের নিয়ে গীবত ও ঝগড়াঝাটি করে। যারা এই ফলাফলে আসতেছেন তারা আবার কেউ কেউ নারী হলেও তারা এই ফলাফলের আওতায় নিজেদেরকে বাইরে রেখেই পুরুষের সাথে একমত পোষণ করেন।
কোন এক বিখ্যাত ফিলোসফার নাকি বলেছেন প্রত্যেক পুরুষের সফলতার পেছনে থাকেন একজন নারী, আবার কোন ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরুষের সফলতার পেছনেও নাকি একজন নারীরই হাত থাকে। এটা হল এক ফাঁকিবাজি ফিলোসফি আমি মনে করি দুনিয়ার যে কোন কাজের দায় কেউ অন্যের ঘাড়ে চাপালেও; ব্যক্তি যা করেন তার দায় শুধু তার নিজের। কিন্তু মানুষের স্বাভাবিক স্বভাবজনিত ত্রুটির জন্যই তার সকল ব্যর্থতার দায় অপরজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে তারা নিষ্পাপ হতে চান।
খেয়াল করে দেখবেন সফলতার দায় কিন্তু কেউ অপরকে দেয় না দিলেও সেটা হয়; না দেয়ার মতন, কোন কাজের জন্য এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত এক ব্যক্তির স্পিচ যেমন হয়; সুধীজন, আমার আজকের এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির জন্য প্রথমেই কৃতজ্ঞতা উপরওয়ালার প্রতি যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর আমার বাবা মা যারা আমাকে এই পৃথিবীতে এনেছেন এরপর আমার সহকর্মী কিংবা পরিবার স্ত্রী। দেখুন এমন ভাবে সফলতার দায় দিলেন যে ক্রেডিট তার নিজেরই রয়ে গেলো।
যাকগে একদিন ইউটিউবে নানান কিসিমের বিষয়ের উপর শর্ট ফিল্ম দেখতে দেখতে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার প্লটের উপর এগারো মিনিটের একটি শর্টফিল্ম দেখি স্প্যানিশ ল্যাঙ্গুয়েজ এ তৈরি, যেইখানে মিউজিক বেশি কথা কম সেখানে অন্য অজানা ভাষা খুব একটা ঘটনা বুঝতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনাই, ফিল্ম দেখে যা বুঝলাম তা হচ্ছে এক সুকেশি সুন্দরী মেয়ের মনে অনেক দুঃখ কারন তার মা এক পুরুষের সাথে তার বিয়ে দিতে চায়, তার মনের দুঃখ এই কারনে না যে সে এখন বিয়ে করতে চায় না কিংবা তার অন্য ছেলের সাথে প্রেম, সম্পূর্ণ ভিন্ন কারনে তার দুঃখ।
দেখা গেলো যে ছেলের সাথে তার মা মেয়েটিকে বিয়ে দিতে চায় সেই ছেলে ছেলের ছোট বোন আর ছেলের মা যখন মেয়ের বাড়িতে উপস্থিত হয়, তখন মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে; আয়নায় তার চেহারার জায়গায় একটি পুরুষ ছেলের চেহারা অংকন করতে করতে; তার চুল কেঁচি দিয়া ছেলেদের মতন করে কেটে; কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, এবং ছেলে পক্ষের সামনে এসে বসলে ছেলের মা বলে তুমি কি সিক তোমার চুল কাটছো কেন?? সিক কথাটা ইংলিশে বলায় বাকী কথা নিজে থেকে বুঝে নিয়েছি। যাক গে তার জবাবে মেয়ে এমন কিছু বলে যে ছেলে এবং ছেলের মা ধপাস করে পড়ে গিয়ে বেহুস হওয়ার উপক্রম করতে থাকলে ছেলের ছোটবোন সেই মেয়ের পক্ষে কিছু একটা বুঝাইলে তারা কিছুটা শান্ত হয়ে চলে যায়।
তারপর সবশেষে মেয়ের মার মন গলে এবং সে ভেতর থেকে নিজের হাতে পুরুষের শার্ট প্যান্ট টাই মেয়েটিকে পড়িয়ে দেয় যার অর্থ তার মেয়ে দেখতে মেয়ে হলেও আসলে সে ভুল শরীরে জন্মাইছেন, তার মেয়ে আসলে ছেলে একে নাকি বলে Genderqueer, বা genderfluid । তাবৎ দুনিয়াতে এই সংবেদনশীল জেন্ডারের নাকি অনেক মানুষ আছেন যারা ছেলেদের শরীরে মেয়ে হয়ে জন্মাইছেন কিংবা মেয়েদের শরীরে ছেলে হয়ে জন্মাইছেন, তাদের সেই কারনে জেন্ডার পরিবর্তনের জন্য সার্জারি করে পুরুষ থেকে নারী কিংবা নারী থেকে পুরুষ হওয়ার রাইট আছে, সে ভিন্ন টপিক।।
যাই হোক আজ এক কলিগ এসে বলল উনি নাকি অফিসে সময় মত পৌছাতে পারেন নাই, কারন উনি যে বাসে আসতেছিল সেই বাসের যাত্রীরা নাকি পথে ব্যাপক মারামারি লাগাইছেন এবং সেই মারামারির সূত্র ধরে বাস রাস্তার মাঝখানে অনেক সময় ধরে আটকে রেখে জ্যাম পরিস্থিতি ভয়াবহ করেছেন। আমার কলিগ আপু নিতান্ত নিরুপায় হয়ে সময় মত অফিসে আসার জন্য মারামারিওয়ালা বাস পাল্টানোর খানিকটা চেষ্টা একটা নিছিলেন কিন্তু মারামারি করা পাবলিকের চড় থাপ্পড় গায়ে পড়বার আশঙ্কায় উনি বেশিদুর এগোতে পারেন নাই।
এই ধরনের পুরুষ প্রতিটা বাসে দুই চারজন করে রোজ থাকেই। যাওয়ার পথে এবং আসার পথে এই রকম ঘটনা ঘটে নাই এই রকম সুন্দর জার্নি খুব একটা সৃতিতে ভাসেনা, এবং এই মারামারি মাঝে মাঝে সত্যি সত্যিই বিকট আকার ধারন করে। কয়দিন আগে আমি যে বাসে ছিলাম সেই বাসে স্বাস্থ্য ভালো লম্বা ভদ্র চেহারার দুই যুবক এমন মারামারি করতে থাকলো, কারন ছিল দুইজনের একজন হেল্পারকে পড়ে ভাড়া দিবো বলে বলে বার বার ঘুরানোয় পাশের যুবকটি বলেছিল দিয়ে দেন না ভাই ভাড়া, শুধু শুধু ওকে ঘুরান ক্যান!
তার জবাবে ভাড়া দিতে না চাওয়া যুবক পাবলিকে বলা যাবেনা এমন একটা গালি দিয়া বসলেন ভদ্র ছেলেটাকে। ফলাফল ঝগড়াঝাঁটি তারপর মারামারি। দুজনের ভেতর যে ভদ্র সে প্রচুর মার খাইলেন, এবং অন্য যাত্রীসকল তাদের স্বভাবজনিত দর্শকের অবস্থানে থাকলেন। ভদ্র ছেলেটা (যে গালি খাইছেন) সে খারাপটার সাথে কিছুতেই পেরে উঠছেন না।
এক পর্যায়ে আমি যাত্রীদের বললাম একজন মার খেতে খেতে পড়ে যাচ্ছে আপনারা বসে বসে কি দেখেন?? ধরেন এরে, হেল্পার চালাক আমার সাথে সাথে পিডা পিডা ডাকাইত পিডা বলে চিৎকার করে উঠতেই সবাই হৈ হৈ করে খারাপটাকে মারতে মারতে বের করে দেয়ার পর আবিষ্কার করা হল ভালো ছেলেটির বুড়ো আঙ্গুল মার খেতে খেতে ভেঙ্গে গেছে।
এই দৃশ্য পথেঘাটে প্রতিদিনের,
কথায় কথায় তর্কাতর্কি চড় থাপ্পড়, মারামারি।
ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কি চড় থাপ্পড়, মারামারি।
বসা নিয়ে তর্কাতর্কি চড় থাপ্পড়, মারামারি।
জানলা নিয়ে তর্কাতর্কি চড় থাপ্পড়, মারামারি।
সিটিং বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে কেন??? তর্কাতর্কি, চড় থাপ্পড়, মারামারি।
বাসে মহিলা সীট খালি নাই তারপর ও মহিলা তুলছে কেন?? তর্কাতর্কি চড় থাপ্পড়, মারামারি।
ড্রাইভার স্লো চালায় কেন তর্কাতর্কি চড় থাপ্পড়, মারামারি।
ড্রাইভার ফাস্ট চালায় কেন তর্কাতর্কি, চড় থাপ্পড়, মারামারি।
দীর্ঘদিনের নারী জাতি নিয়ে উনাদের গড়া ধ্যান ধারণা উনারা নিজেরাই পরিবর্তন করে ফেলছেন, দেখা যায় মহিলারা সব চুপচাপই বসে থাকেন কিন্তু রাস্তাঘাটের এই সকল পুরুষেরা একেকজন ঝগড়াটে মহিলা হয়ে যান, মহিলাদের মতন শুধু ঝগড়া করেন তাই-ই না, মহিলাদের মতন গসিপ করেন, হিংসা করেন অযথা বেশি কথা বলেন এবং অন্যের বিপদে চুপ করে থাকেন।
সবশেষে আমার মন বলছে জরিপ করলে দেখা যাবে আমাদের দেশ Genderqueer, কিংবা genderfluid বিশ্বের ভেতরে প্রথম স্থানে পৌঁছে গেছেন অনেক আগেই; কখনো এই বিষয়ে জরিপ হয়নাই বলেই কেউ এতদিন জানতে পারেননাই।।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৫১