somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার চিন্তা চেতনা এবং একটি বৃষ্টির সকালে

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিটি গুলশান দুই থেকে তোলা।

রাস্তাঘাটে নানান দুর্যোগ মোকাবেলা করে ইউনাইটেড হসপিটালের অতি নিকটবর্তী চেকপোষ্টে বৃষ্টির জন্য নতুন এবং শেষ বারের মতন যে সমস্যার সম্মুখীন হলাম তা হল রিক্সাওয়ালা মামার হলুদ কমলা রঙের গুলশান অথবা বনানী সোসাইটি লেখা আছে এরকম কটি না থাকায়; উনি কিচ্ছুতেই উনার রিক্সা নিয়া চেকপোস্ট অতিক্রম করে আমার অফিস পর্যন্ত দিয়ে আসতে পারবেননা, ওইদিকে ঝমঝম করে বিপদ দেখে বৃষ্টি আরও বড় বড় ফোঁটায় বর্ষণ হতে শুরু করায়, আমি তখনি মনে করতে পারলাম আমার হাতে ছাতা নাই; ওটা ভুলে সি,এন,জিতে ফেলে আসছি।


অফিসে আমার জানালার ছবি

অফিস এন্ট্রি টাইম ধরার জন্য তখনো গণায় গনায় আট মিনিট ত্রিশ সেকেন্ড সময় চলন্ত অবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে দেখে, রিক্সাওয়ালা মামাকে বললাম মামা আমার ছাতা সি,এন,জিতে রেখে আসছি এই বৃষ্টির ভেতর হেঁটে আরেক রিক্সায় ক্যামনে উঠবো! কিছু একটা ব্যাবস্থা করেন।
বোকা বোকা এক পুলিশ চেকপোষ্টের উনাদের বসার ঘরের ছাদে গাছ উপরে পড়ে থাকা জায়গাটা পেছন রেখে ডিউটি থেকে পালাতে পারলে বাঁচে, এমন অলস চেহারা নিয়া দাঁড়িয়ে আছে দেখে; তারে কটি বিহীন রিক্সাওয়ালা নিয়া গুলশান ঢোকার অনুরোধ করতেই উনি হাত পা কান সজাগ করে আমার রিক্সা আটকে দিয়ে, ডিউটি তুমুল আনন্দের সাথে করতে থাকলেন।


বসুন্ধরার রাস্তা গতকালের তোলা

ঘড়ির কাঁটা দৌড়াতে দৌড়াতে তখন আরও দুই মিনিট অতিক্রম করছে করছে ভাব দেখতে দেখতে, বৃষ্টির বড় বড় ফোটা মানুষজনের ছোটাছুটি ভেজা আকাশ সবুজ কৃষ্ণচূড়া গাছ, নষ্ট হওয়া লেক এর পানির রঙ দেখতে দেখতে, আমার রিক্সাওয়ালা মামা এক কেরামতি করে ফেললো।
তিনি গুলশান দুই এর রিক্সার সাথে রিক্সা এডজাস্ট করেছেন অভিনব পদ্মতিতে, আমায় অপর রিক্সায় তুলে দিয়ে নতুন জনকে বললেন, সাবধানে নিয়া যাইও। উনাকে ধন্যবাদ দিতে দিতে দেখলাম ছেড়া গেঞ্জি টুপটুপে ভেজা সাদা ছোট চুল বুড়ো হয়ে যাওয়া বাঁকানো শরীরে দীর্ঘ জীবনের পরিশ্রম আর হাজারটা অসহ্য যন্ত্রনা সয়ে যাওয়া মুখের এক মহান মানুষ।
আগেরজনের মতন এই রিক্সাওয়ালার বয়স ও ষাটোর্ধ। হলি আর্টিজানের গেট ক্রস করতে করতে অফিস এন্ট্রি টাইম শেষ হল, তার আরও পড়ে অফিসে পৌছালাম।


রিক্সা ভাড়া দিতে দিতে দেখি প্রাডো গাড়ি থেকে এক ইঞ্জিনিয়ার নেমে দাঁড়িয়েছেন, এই অফিসে প্রায় সবার গাড়ি থাকায় বোধহয় অফিস ট্রান্সপোর্ট কেন দিচ্ছে না এ নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই।
উনি কাছাকাছি থাকেন এবং নিজ গাড়িতে করে এসেও লেট, আমায় দেখে অতি ভক্তি ভরে সালাম দিয়ে সিকিউরিটি গার্ডের পাশে দরজা ধরে সসন্মানে দাঁড়ালেন আগে আমায় ঢুকতে দিবেন আর কি।


অফিসের লবির সামান্য অংশ

এই জিনিষ আমার জীবনে শুধু অফিসেই ঘটে, যেইখানে বড় বড় গাড়ি থেকে নেমে পুরুষ ও মেয়ে কলিগরা সালাম দিয়ে গেট এর কাছে আগে ঢুকতে দিয়ে সন্মান জানান কারন উনারা এই অফিসে আমার পড়ে জয়েন করেছেন সেই হিসেবে উনারা জুনিয়র। আবার কেউ কেউ কারন ছাড়াই ভক্তি করেন, দেখা গেলো উনি পঞ্চাশ কিংবা ষাট ছুঁই ছুঁই বয়সের একজন ইডি হয়েও আমায় সালাম কিংবা সালামের প্রতিউত্তরে সালাম দিয়ে থাকেন এবং আমার যাওয়ার জন্য পথ ছেড়ে দাঁড়ান। বাইরে অবশ্য আমার দুই পয়সারও দাম নেই; বাসে উঠতে গেলে মহিলা সীট নাই বলে মাঝে মাঝে হেল্পারের ও ধাক্কা কিংবা ধমক শুনতে হয়। বাড়িতে ছোট মেয়ে বলেও সেইখানে আমার জ্ঞান বুদ্ধি সন্মান বড়দের পায়ের তলায় পড়ে থাকে।


আবারো আমার জানালায়

জীবন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম।
তবে এও ঠিক আমাদের সমাজে সন্মান অর্জন করা অনেক কঠিন বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়েদের, এটা ক্যারিয়ার গঠনের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।এই কারনেই আমি উপলব্ধি করি স্টাডির সাথে সাথে কর্মজীবন ও সমান ভাবে চালিয়ে নেয়া আবশ্যক। যা ইদানীং মার্কেট কিংবা রেস্টুরেন্ট কিংবা স্কুল অথবা সবখানে চোখে পড়ে, এস,এস,সি এইচ,এস,সি পড়া ছোট ছোট ছেলে মেয়ে কি উদ্যমেই না কাজ করছে বেশ কনফিডেন্স এর সাথে। এটা সময়ের সাথে সাথে মানুষকে শারীরিক, মানসিক দৃঢ়তা, জ্ঞান, চিন্তা, চেতনা, ধৈর্য, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, সাহায্য সহযোগিতা, সমাজের সব ধরনের মানুষকে মূল্যায়ন ও সন্মান ইত্যাদি সুদুরে এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করে দেয়।

সবশেষে শুধু সংসারে কিংবা পরিবারই নয় আপন মানুষ বাইরেও আছে অচেনা মানুষের মধ্যেই।। সেই সকল আপন মানুষ ব্যতীত জীবন কখনোই এত পরিপূর্ণ এবং সুন্দর হতোনা।


সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৭
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×