সাদুল্লাহপুর গোলাপ গ্রামের কথা অনেকদিন ধরে শুনতে শুনতে ছবি তুলতে সেখানে যাবার কথা মাথার মধ্যে ছিল, সময়ের সবার অভাব হলেও আমি সেটাকে তেমন একটা গায়ে মাখিনা, যখন যা মাথায় আসে এই ইচ্ছের উপর সকল কাজ নির্ভর করে।
যারা যারা সেখানে গিয়েছেন সবাই এত এত প্রশংসায় মুখর ছিলেন যে সেই সকল অমর বানী উপেক্ষা করা ছবি তুলতে পছন্দ করেন এরকম মানুষের পক্ষে উপেক্ষা করা অসম্ভব দরুন; গতকালের আগের দিন গোলাপ গ্রামে ফটোগ্রাফির ইভেন্ট এ না গিয়ে ব্যাক্তিগত ভাবে সেখানে গিয়ে ছবি তুলে আসবো ঠিক এবং তা বাস্তবায়ন করি।।
গোলাপ গ্রামে যাবার এটাই হচ্ছে প্রধান যানবাহন, মিরপুর এক থেকে ট্রলারে তিরিশ মিনিটের মত লেগেছিল, জার্নি ভালোলাগেনি।।
ট্রলারে উঠার পরই যে ট্রলার ছেড়ে দেবে তা নয়, রুলস আছে, একেকটি ট্রলার তিরিশ মিনিট পর পর ঘাঁট ছেড়ে যায়, তাতে যাত্রী বেশি হোক কিংবা কম, তবে তিরিশ মিনিট অপেক্ষার পর দেখা যায় ট্রলার মোটামুটি ভরেই যায়।
ট্রলার ছাড়ার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে কিচ্ছু করার নাই তাই বসে বসে এই ঘোড়াটাকে গোসল করানো দেখতে দেখতে সময় পার করার চেষ্টা করেছি। ইউনিভার্সিটির ছোট এক ভাইকে সাথে নিয়েছিলাম ও মহানন্দে বাদাম কিনে চিবাতে চিবাতে বলল গোলাপ গ্রামের ফুল দেখলে তুমি এত বিরক্ত হবানা, চারদিকে ফুল আর ফুল , শাহবাগ সহ ঢাকার সবখানে এইখান থেকেই ফুল নেয়া হয়। বললাম এই নিয়া তোর কয়বার যাওয়া হবে, ও আঙ্গুল দিয়ে অনেকগুলো সংখ্যা গুনতে গুনতে আমার সামনে মেলে ধরল, বলল চা- র - বা-র!!!!!!!!!!!
ওর আঙ্গুল সামনে থেকে সরাতে বলে আবার ঘোড়ার ছবি তুলতে থাকলাম।
যেতে যেতে নৌকা, পানি, পানির ভেতর দুইটা পাশাপাশি গাছ, আকাশ, রোদ, সূর্য এসব দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। লম্বা জার্নি। ট্রলার চলছে তো চলছেই।।
রোদের আলোয় নদীর পানি ভীষণ রকম চিক চিক করতে লাগলো, এই ব্যাপারটা সমুদ্র ভ্রমণের সময় দেখেছিলাম। নদীতে প্রথম দেখলাম। তুরাগ নদী যে এত বড় সেটাই জানতাম না।
গোলাপ গ্রামে পৌঁছে ট্রলার থেকে নেমে দুই চারটা দোকান, একটা হোটেল, কয়েক সারি ট্রলার এবং একটি বট গাছ দেখতে পেলাম।
একটা ভাঙ্গা হোটেলের পাশে এক লোক আমাকে দেখে তার হাতে থাকা বাঁশিতে দুটা ফু দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে রইলেন, তখন ব্যাপারটা বুঝতে না পারলেও ফেরার পথে যখন সে আবার একিই কাজ করলেন বুঝলাম উনি প্রফেশনাল বংশিবাদক, দুটা ফু দিয়া উনি বসে থাকেন এই জন্য যেন উনার বংশির সুরে মুগ্ধ হয়ে পুরোটা শোনার জন্য তার কাছে নতুন আগত লোকজন আবদার করবেন এবং অবশ্যই টাকার বিনিময়ে।।
যেতে যেতে ছোট ভাই বলল সামনে এক বুড়ার গোলাপের ক্ষেত আছে উনার ওখান থেকে ছবি তুলতে গেলে বিশ টাকা করে চাঁদা নেয় মানুষ কত রকম ধান্দা যে করে নতুন কোন মানুষ এলে।
অটোতে গোলাপ গ্রামের মুল এরিয়ায় গেলাম।
গিয়ে দেখলাম বিরান ভুমি কোথায় গোলাপ বাগান কোথায় কি, দুই চারটা যাও বা গোলাপের ক্ষেত দেখা যাচ্ছে দূর থেকে ওগুলো দেখে মনে হচ্ছে লাল শাকের ক্ষেত, ছোট ভাই বলল ওইটা আসলেই লালশাকের ক্ষেত।
তার পাশেই আছে গ্লাডিওয়ালার ক্ষেত, তারপর মাঠ, মাঠের পর মাঠ, দিগন্ত জুড়ে মাঠ। দূরে দুইটা মাত্র জীবিত গোলাপের ক্ষেত, বাকীগুলো খালি এবং মরে যাওয়া গোলাপের কাঁটার ডালপালা।
মরা গোলাপ গাছ
লজ্জাবতি ফুল
মাঠের সবুজ ঘাস
অচেনা ফুল
একটা মরিচ গাছ
ভিটামিন এর অভাবে আক্রান্ত পেঁপে গাছ। নাম না জানা গাছ, এরকম অহেতুক অনেক কিছু দেখলাম কিন্তু তেমন ভালো কোন গোলাপ ক্ষেত দেখলাম না
সাথে থাকা ছোট ভাই দূরে একটা গোলাপের বাগান আছে জানাতে জানাতে আমাকে রাগ করার সুযোগ না দিয়ে সেই দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে এগিয়ে গেলো। এবার একটা গোলাপের বাগান পাওয়া গেলো, কিছু ফুলের যে কয়টা ছবি তুলেছি সেখান থেকেই শুধু।।
ক্ষেত ভর্তি গোলাপ গাছ এই দৃশ্যটুকুই কেবল চমৎকার।।
ওইখানে যে কয়টা গোলাপ ছিল সব লাল গোলাপ, সব সব, আসলে শুধু লাল গোলাপেরই নাকি চাষ হয়। কিন্তু এই এক রঙ কি আর ভালো লাগে তাই আমি মনের শান্তির জন্য দুই একটা গোলাপের রঙ পরিবর্তন করে দিলাম।।
ফেরার পথে আবার সেই ক্লান্তিকর ট্রলার জার্নি। ছোট ভাই বার বার কৈফিয়ত দেয়ার মতন করে বলতে থাকলো এইখানে অনেক ফুল থাকে আজ কেন নাই কিছু বুঝতে পারছিনা আপু। ওকে কিছু বললাম না এম্নিতে এই সকল টুকটাক সমস্যা আমার জীবনে থাকেই, একবার খুব আয়োজন করে ছবি তুলতে গিয়েছিলাম সোনার গাঁ গিয়ে দেখলাম সেখানে সংস্কার কাজ চলছে তাই ক্লোজ। ভেতরে ঢোকা যাবেনা। নিরাশ হয়ে বাইরে সোনার গাঁ এর গ্রিলের দেয়ালের ফাঁক দিয়ে একটা ছবি তুললাম, ঝুম করে দেখা গেলো সেটার দোতলায় ওখানে কাজ করে এরকম এক শ্রমিক পা ঝুলিয়ে বসে আছে, আমি অবশ্য ফটোশপ দিয়ে পড়ে ছবিটা ঠিক করে নিয়েছিলাম।
এই যে সেই ছবিটা।
ফেরার পথে সূর্যের অস্ত যাওয়া দৃশ্য উপভোগ করতে করতে কিছুটা বিষণ্ণ মনে ফিরে এলাম, বিষণ্ণ কেন লাগছিলো জানিনা, হয়তো সময় কিংবা চারপাশের দৃশ্যাবলী এই বিষণ্ণতা সৃষ্টি করেছে।
গোধূলি বেলার কিছু ছবি
বেশ কিছু গ্রুপ দেখলাম ফ্যামিলি গ্রুপ। তারা স্বামী বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে বেড়াতে এসেছে। তাদের অনেক উত্তেজনা, ফুল নিতে চায়, গাছ নিতে চায়, বাচ্চা স্বামী সহ ফুল বাগানে ছবি তুলতে চায়। তাদের কাণ্ড কীর্তি দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে গোলাপ গ্রামে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কিছু নেই, সবখানে কাঁটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে, ওদের কাজ ওদেরকে করতে দেয়া উচিৎ। পুরা ফ্যামিলি শুদ্ধ গিয়ে পিচ্চি পিচ্চি বাচ্চা কাচ্চা গোলাপের কাঁটা ভর্তি বাগানের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে বাবু হাসো হাসো করে ফটোসেশন করলে যে কোন হোক ছোট খাটো তবু দুর্ঘটনা তো ঘটতেই পারে তাই না! আর ফুল নেব গাছ নেব নেব নেব করে খাই খাই করা অস্বস্তিকর।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৭