somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিড়াল ও কুকুরের উপকারের দুটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছুদুর যেতেই জনমানব শূন্য স্থানে ( খুব সকাল এবং রোজার দিন ছিল বলেই জনমানব শূন্য) এক বিপদজ্জনক দৃশ্য দেখে কি করা উচিৎ না ভেবে পলকের মধ্যে ঘটনার কেন্দ্রস্থলে ঢুকে গেলাম, সেখানে চার অথবা পাঁচ বছর বয়সের একটু শিশু হাতে রুটি নিয়ে কাঁপছেন এবং তাকে ঘিরে পনের বিশটা কুকুর তার হাতের দিকে তাকিয়ে হল্লা দিতে দিতে কামড় দেই দেই অবস্থায়, আমি মেয়েটিকে আমার ওড়নার আচল দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ভয়াবহ রকম খেঁপে যাওয়া কুকুরদের দেয়াল থেকে বের হবার কোন পথ দেখছিনা!! বাস্তবিক প্রচণ্ড ভয়াবহ দৃশ্য, একসাথে এত কুকুর ক্ষেপে যাওয়া দৃশ্য আমার জীবনে প্রথম।

ধমক দেবো কিন্তু উনাদের চিল্লাচিল্লির কাছে আমার কণ্ঠস্বর অনেক নিচু হওয়ায় কিচ্ছু উপায় খুঁজে পাচ্ছিনা। হাত দিয়ে চেপে ধড়া বাচ্চাটি ঠক ঠক করে কাঁপছে।
কুকুরদের চিৎকার আর আক্রমণ করার ভঙ্গি বাড়তে বাড়তে মনে হচ্ছে বাচ্চা মেয়েটিকে হাতের রুটি সহ খেয়ে ফেলার প্লান করছে। পাঁচ মিনিট এভাবে গেলো, পুরো রাস্তার দূর দূর পর্যন্ত কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নেব কিনা ভাবছি।
নিতান্ত দরিদ্র বাচ্চা ধুলোবালি ময়লা মাখা নাক দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে, হয়তো বাবা রিক্সা চালায় মা অন্য কাজে ব্যাস্ত এই ফাঁকে হাতে রুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল।

এই রকম দীর্ঘ বিপদজ্জনক মুহূর্তে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটলো, কোত্থেকে যেন একটা কুকুর শো করে ছুটে আসলো, এই কুকুরটাকে দেখে চিনলাম, সে প্রায়ই আমাদের গেট অতিক্রম করে বাড়িতে ঢুকে পড়ে, মাঝে মাঝে একে খেতে দিতাম।
একবার খেতে দিয়েছিলাম আইস্ক্রিম, ওইদিন পাশেই আম্মা ছিলেন এবং কুকুরকে আইস্ক্রিম খেতে দেয়ার জন্য সে সময় ব্যাপক তিরস্কৃত হয়েছিলাম।

তো সেই কুকুর কীভাবে যেন আমার বিপদের কথা টের পেয়েছিলেন এবং আমায় মনে রেখেছিলেন কুকুরটি এসে উনার সহ ভাই ব্রাদারদের কিছু একটা বললেন এবং আশ্চর্যরকম ভাবে সবাই তখন চিল্লাচিল্লি বন্ধ করে পথ ছেড়ে কুই কুই করতে করতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেন, দুই একজন কুকুর বাচ্চাটাকে আরও দুই একটা ধমক দিয়ে ঠাণ্ডা হলেন, ততোক্ষণে কিছু দোকানদার এসেছেন তাদের দোকান খুলতে তাদেরকে বাচ্চা মেয়েটিকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলে চলে গেলাম সেখান থেকে। তারপর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে শুনলাম আমাদের বাসায় আব্বা আম্মা কে ঘটনা অবগত করা হয়েছে। আম্মু আমাকে পড়া পানি খাওয়াতে চাইলেন মানা করে দেয়ায় উনি কফি পড়া খাইয়ে সেইবারের মতন আমার লাইফ সেইফ করলেন।।

রিসেন্টলি আরও একটি ঘটনায় আমি অভিভুত হয়েছি।
আম্মু বিড়াল কিংবা কুকুর পোষা কিংবা কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো পছন্দ করেন না বলে আমার নিয়ত ও অমন হয়ে গেছে কিন্তু এরা আমাদের বাড়িতে ঢুকলে খেতে দেই। এরকম খেতে দিতে দিতে এক ছোট্ট সাদা বিড়াল আমার ভক্ত হয়ে গেছেন। উনাকে অনেক সময় দেখা যায় আমার জন্য গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। রিক্সা ভাড়া দেয়ার সময় রিক্সাওয়ালার সামনে চুপ করে থাকেন তারপর গেট দিয়া ঢোকার পর মুল বাড়িতে ঢোকা পর্যন্ত আমার পাশাপাশি হাটেন এবং আস্তে আস্তে মিউ মিউ করেন যার অর্থ কেমন আছো? ভালো আছো? আমি ভালো আছি। তোমার দিন কেমন গেলো? আজকেও অফিসে কাজের চাপ বেশি ছিল? মন ঠিক আছে ? ইত্যাদি ইত্যাদি।


উনি সাপের হাত থেকে বাঁচানো সাদা বিড়াল যে প্রায়ই গেটের কাছে আমার বাসায় ফেরার অপেক্ষায় বসে থাকেন।

একদিন আমি বাড়ি থেকে বের হবার পথে এই বিড়ালটি আমার পথ আটকে দাঁড়িয়ে রইলেন, না কিছুতেই উনি আমাকে বাইরের গেট পর্যন্ত যেতে দেবেন না, না না-ই না। পা বাড়ালে এমন ভাবে উনার ছোট্ট শরীরটাকে আমার পায়ের সামনে ঠেলে দেন, যেন আমি এক পা ও সামনে বাড়াতে না পারি। দৃশ্যটা নিজ চোখে না দেখলে বোঝানো যাবেনা।

কি বিপদ মুভি দেখতে যাবো সময় চলে যাচ্ছে। আম্মু বললেন তুই না এই বিড়ালটাকে পছন্দ করিস দেখ ও তোকে যেতে দিতে চাইছে না, আজ কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। (আমি বাসায় থাকলে আম্মু বেজায় খুশি) ভাবছি ছুটির দিন বাইরে বের হবোনা একটা বিড়ালের বাঁধা মেনে এ কেমন কথা! কি যে করি !
আরও কিছুক্ষন চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েও সামনে পা বাড়াতে চাইতেই, বিড়ালটা বাঁধা দিয়ে কাজ হবেনা বুঝতে পেরে জাম্প দিয়ে গেটের বাইরে ঝাঁপিয়ে পড়লো!! মুহূর্তেই মুখে বড় সড় একটি সাপ নিয়ে আমি যেদিকে দাঁড়ানো তার বিপরীত দিকে দৌড় দিলো। পড়ে আম্মুর কাছে শুনেছি ওটা নাকি ওইদিন আমি যাবার পর সাপটার প্রচুর কামড় খেয়েছে। গেটের বাইরে পা রাখতে গেলে কামড়টা আমার পায়েই পড়তো।।
একটি বিড়াল এবং কুকুর আমায় বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে ঘটনাটা ভাবতেই আমি মাঝে মাঝে অভিভুত হয়ে পড়ি।।



কুকুরের তার মনিবের জীবন বাঁচানোর ঘটনা অনেক শুনেছি কিন্তু বিড়াল ও যে মানুষের জীবন বাঁচায় সেই সম্পর্কে নেট ঘেঁটে কিছু তথ্য পেলাম।

15 Cats That Are Real Life Superheroes By Saving Human Lives..



তবে মাঝে মাঝে এরা বেশ নোংরা, আমার আম্মু যে ইনাদের ঘরে এলাউ করেন না সেইটা এক হিসেবে ঠিকাছে, একদিন দেখলাম ইনি মরা পাখি কামড়াতে ব্যস্ত। ইয়াক।।

বিভিন্ন সময় আমার তোলা বিভিন্ন বিড়ালের চিত্র









শুধু বিড়ালের ছবিই দিলাম, কুকুরের ছবি যে তুলিনি তা নয় হাতের কাছে নেই বলে শেয়ার করতে পারলাম না।
বিড়াল কুকুর আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, প্রায়ই দেখা যায় বিনা কারনে এদের মেরে ফেলতে, পা ভেঙ্গে দিতে, এদের শরীরে গরম পানি ঢেলে দিতে। এসব সত্যিকার অর্থেই নিষ্ঠুর আচরণ। এরা আমাদের চারপাশের উপকারী প্রাণী যারা মানুষের আশেপাশে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এদের অকারনে আঘাত করা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৭
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×