আমি ঠাণ্ডা গলায় আমার বাবাকে বললাম আমার লেখাপড়ার খরচ সহ যে কোন খরচ আপনার কাছ থেকে আর কোনোদিন নেবনা।
হ্যাঁ রাগের মাথায়ই বলেছিলাম, খুব রাগ খুব অভিমান থেকে যা হয় আর কি! সামনে এইচ এস সি ফাইনাল পরীক্ষা! ফ্রম ফিলাপের জন্য প্রায় এগারো হাজার টাকা জমা দিতে হবে! এত টাকা কোনভাবেই আমার পক্ষে ব্যক্তিগত ভাবে জোগাড় করা সম্ভব না, ঠিক করলাম এই টাকাটা আমি বাসা থেকেই নেব! বাবা কে না জানিয়ে নিতে হবে, নয়তো আমি হেরে যাব! নো তার সামনে কিছুতেই হেরে যাওয়া চলবে না! ঘটনার একদিন পর এরকম সিরিয়াস চিন্তা ভাবনার সময়ে আমার চাচাতো ভাইয়ের ফোন এলো! খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে হাসতে বলল খবর শুনছোস আমাদের বংশে একটা পাগল জন্মাইছেন যার নাম দুই অক্ষর দিয়া, তার নামের অর্থ হইলো গিয়া শেষ! শেষের অপর নাম জানোস?? শেষের অপর নাম হইল গিয়া সামু, আরেকটা নাম আছে তিন অক্ষরের।
আমি বললাম ভাই জানোস আমি একটা স্বপ্ন প্রায়ই দেখি! ঠিক স্বপ্ন না আশা! সেইটা হল ঘুম ভেঙ্গে দেখবো কোনভাবে একটা ফুল লোডেড পিস্তল সাথে শ খানেক বুলেট এক্সট্রা আমার ভাগে চলে আসছে, আমার প্রতি কমান্ড হল যাদের আচার আচরনে ভুল ত্রুটি আছে যারা মানুষরে বিনা কারনে খোঁচা দিয়ে কথা বলে অপমান করে শান্তিতে থাকতে দেয় না তাদের কে শায়েস্তা করা।
তখন কি হবে জানোস আমি পিস্তল দিয়া এই সকল দোষ ত্রুটিওয়ালা মানুষরে বিপুল আনন্দের সাথে শায়েস্তা করার কাজে লেগে যাব! উহু! জান এ মারবো না, কারন মরবার থেকে দুনিয়ায় বেঁচে থাকার শাস্তি কম না, তাই সবার এক হাত আর এক পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দিব। ব্যস বাকী জিন্দেগী এক পা আর এক হাত নিয়া সারভাইভ কর। কিন্তু ঘটনা ঘটানোর পর দেখা যাবে আমাদের বংশের প্রায় সবাই এক হাত কিংবা এক পা কিংবা দুইটাই হারিয়ে বসে আছেন। কারন এই সকল মানুষ তো আমাদের বংশে ভরপুর। তখন আমাদের বংশের নাম পরিবর্তন হয়ে নতুন নাম হবে পঙ্গু বংশ।
আমার জীবনে ঐ সময় আমার ঐ কাজিনের বুলিং ছিল সবচাইতে নিকৃষ্ট আর বাজে, নিউজপেপার ঘাঁটলে দেখা যায় ইভ টিজিং কিংবা বুলিং এর কারনে অনেক ছেলে মেয়ে আত্মহত্যা করে মরে যাওয়ার সংখ্যা ও কম নয়।
এটা আমাদের সমাজেই কিনা কে জানে মানুষের দুর্বলতা নিয়ে খোঁচা দিয়ে কথা বলা যেন অপরিবর্তনীয় প্রথা। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব পাড়া প্রতিবেশী কথা বলতে বলতে ঐ জায়গাটাতেই হাত দিবে যেইখানে আপনার সব থেকে বড় দুর্বলতা, দুর্বলতা না থাকলে দুর্বলতা বানিয়ে হাত দিবেন।
আর ধর্মের দোহাই দিয়া বুলিং এর তো শেষ নাই।
হযরত ওসমান (রা.) বলেছেন "তরবারির আঘাত মানুষের শরীর জখম করে কিন্তু মন্দ কথার আঘাত হৃদপিন্ড রক্তাক্ত করে দেয়"।
অনেকে আছেন তাদের মতে তারা ভালো ভালো মানুষজন কারন তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, মসজিদে যান বলেই উনারা মনে করেন বেহেশত পেয়ে গেছেন এই অহংকারের কারনেই না কি কারনে উনি যেই ধরনের তার থেকে ভিন্ন চরিত্রের মানুষকে অনবরত ছি ছি করতে থাকেন বেপর্দা মেয়েকে দেখলে নাউযুবিল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার উছিলায় পারলে খুন করে ফেলবেন, এই রকম করতে করতে মন্দ কথার আঘাত দিয়া হৃদপিন্ড রক্তাক্ত করে ছিঁড়ে ছিন্ন ভিন্ন করে দেন।
বেশিরভাগ মানুষের মুখে সব থেকে বেশি যে কথাটি শোনা যায় তা হলো মানুষ এত খারাপ! মানুষ এত খারাপ! মানুষ এত জঘন্য! পৃথিবীতে মানুষের মতন খারাপ আর কিছু হতে পারেনা, আমি বুঝিনা তারা কি ভুলে যান যে তারা নিজেরাও মানুষ। মানুষ খারাপ বলে সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে খারাপ বলার কোন রাইট কারোই নাই, দুনিয়ায় খারাপ মানুষ যেমন আছেন ভালো মানুষ ও আছেন আমরা না জেনে সমগ্র মানুষ জাতিকে খারাপ উপাধি দিতে পারিনা, এই কথা একজনকে খুব কড়া গলায় শুনাতেই সে চুপ হয়ে গেলো।
অন্যকে খারাপ বলে নিজের সম্পর্কে দুটা ভালো কথা বললেই সেইটা সবচাইতে বেশি হিট, ফেইসবুকে এই হিট প্রথা সবথেকে বেশি চালু। একটা মানুষকে পঁচানোর মতন শান্তি যেন আর কিছুতে নাই।
কথা হচ্ছে কোন মানুষই ভুল ত্রুটির উর্ধ্বে নয়, কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে মাথায় টুপি লাগিয়ে আমি ভালো আমি ভালো এরকম অন্ধ বিশ্বাস করলেই যেমন ভালো হয়ে যায় না, তেমন কিছু কিছু হিজাবিরা সে হিজাব পড়ে বলেই নিজেকে বেহেস্তের হুর পরী ভাবার ও কিছু নাই।
যেসব মেয়েরা হিজাব পড়ে তারা জান্নাত হাতে নিয়ে ঘুরতেছে এরকম ভাবা যেমন ঠিক না। হিজাব পড়ে সারাদিন নানা পুরুষের সাথে আড্ডা দিয়ে গল্প করে যা ইসলাম ধর্মে নাই যদি জান্নাত হাতে নিতে পারেন তাইলে হিজাব না পরা নিশ্চুপ নিজের মনে দিনের পর দিন কাজ করা মেয়ে কেন পাপী হতে যাবে?
ধর্ম কিন্তু বলেনা আপনি অপরকে ছোট করে কথা বলেন।
ধর্ম বলেনা কিছু যাচাই না করেইএকটা মানুষ বাইরে থেকে দেখেই সে ভালো না মন্দ সেই ব্যাখা দেন।
ধর্ম বলেনা আপনার কথার ভয়ে আপনার আশেপাশে মানুষ থাকতে ভয় করুক।
ধর্ম বলেনা শুধু নিজেকে ভালোবাসুন আর নিজের মতের সাথে না মিললেই তাকে ঘৃণা করুন।
আপনি ধর্ম পালন করলেন কিন্তু আপনার চোখ কিংবা মুখের আঘাত থেকে মানুষ রেহাই পেলনা, নিরাপদ থাকতে পারলো না তাহলে আপনি কিই বা ধর্ম পালন করলেন।
আপনি তখনি ভালো মানুষ হবেন যখন আপনার সাথে মানুষ কথা বলতে কিংবা আপনার পাশে থাকতে মানুষ ভয় পাবে না।
আমাকে সেদিন একজন বলল এই যে এটা সেটা নিয়ে মানুষ বুলিং করে এটা নিয়ে কিছু লিখনা।
লেখাটি তাকে উৎসর্গ ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৫