somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক (ছবি ব্লগ)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুরে অবস্থিত। যদি পশু পাখি এবং নেচার প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে ৩৬৯০ একর আয়তনের এই সাফারি পার্ক আপনাকে মুগ্ধ করবেই বাজি ধরে বলতে পারি।


সাফারি পার্কের গেট এর একাংশ



এটাই সাফারি পার্কে ঢোকার এন্ট্রি গেট।
ট্রান্সপোর্ট হিসেবে সবাই যার যার গাড়ি ব্যাবহার করতে পারেন। পাবলিক যে কোন বাসে করেও গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যেতে পারবেন তারপর স্ট্যাচু ওয়ালা রাস্তা ক্রস করে একটু সামনে এগিয়ে গেলে দেখবেন লেগুনার ড্রাইভার হেল্পাররা সাফারি পার্ক সাফারি পার্ক বলে চিৎকার করে ডাকছে কেউ কেউ হাত ধরে(ছেলেদের) তার লেগুনায় নিয়ে বসাচ্ছে, ভাড়া তিরিশ টাকা, ঐ লেগুনা আপনাকে একদম সাফারি পার্ক এর সামনে নামিয়ে দেবে, তবে বেশি ভাগ দেখলাম পিকনিক বাস নিয়ে দল বেঁধে গিয়েছে তবে ওটা ক্লান্তিকর আর হিজিবিজি লেগেছে।
যাইহোক আমি লেগুনার ব্যাপারটা এত ডিটেইলস কীভাবে বললাম নিশ্চয়ই ধরে ফেলছেন! হু আমি ও লেগুনায় গিয়েছি কেননা আমি যে বন্ধুর সাথে গিয়েছি সে আমায় এক টাকাও খরচ করতে দিবেনা।



সাফারি পার্কে ঢোকার জন্য আপনাকে অবশ্যই টিকেট ক্রয় করতে হবে, প্যাকেজ টিকিট দেড়শ টাকা, এটা কিনলে আপনাকে আলাদা আলাদা তিনটি পঞ্চাশ টাকার টিকেট দিবে, শুধু এন্ট্রির জন্য টিকেট কিনলে শুধু ভেতরে ঢোকার অনুমতি পাবেন তারপর ভেতরে ঢোকার পর একেকটা জোন দেখার জন্য আপনাকে প্রতিবার পঞ্চাশ টাকার টিকেট কাটতে হবে।তার মানে প্যাকেজ নিয়া লাভ নেই।



ভেতরে ঢোকার পর যে ব্যাপারটা মুগ্ধ করবে তা হল বিশালতা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। তারপর নানা রকম পশু পাখির স্ট্যাচু, আর এই রকম বেশ কয়টা ছাতা, ইচ্ছে ছিল এই ছাতার নীচে বসে উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা ছবি তুলবো, কিন্তু তুলতে পারিনাই কারন আমার দেখা এই রকম তিনটা ছাতা ছিল। তিনটা ছাতার ভেতরেই লাভারসরা বসে বসে নিরিবিলি সময় কাটাচ্ছেন বলে উনাদের আর বিরক্ত করিনাই।



দোয়েল পাখির স্ট্যাচুটা কিন্তু অনেক বড় ছিল।

টাইগারটা তেমন একটা বড় না তবে তাকে যেন জ্যান্ত দেখায় সেই চেষ্টা করেছেন ।

পেংগুইনটা স্ট্যাচু নাকি বিন ছিল এখন মনে করতে পারছিনা।।

মাকড়শা বাপ্রে



সাফারি পার্কে আমরা বোকার মতন সব থেকে এবং একমাত্র খারাপ দর্শনীয় স্থানে গিয়েছিলাম, এখানে কুমির, ব্যাঙ, লবস্টার , বিশাল লতানো প্যাঁচানো সাপ, হাস, মুরগী, শকুন পাখি, হরিন, বাঘ , সিংহ ষ্টীম করে রাখা, খুবই নিষ্ঠুর লাগলো, সেখানে মেডিসিনের গন্ধ আর ছবি তোলা নিষেধ।
দুই একটা ছবি তোলার জন্য ওইটার কেয়ারটেকারের শাসানী খেয়ে মন খারাপ করে আমার ক্যামেরা সাথে থাকা ফ্রেন্ড এর হাত দিয়ে দিতে দেখে কেয়ারটেকার আমারে সরি জানাইতে চেয়ে বলল, আপনি পাখির খাঁচায় গেলে অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তুলতে পারবেন ওয়াদা, ওইখানে ছবি তোলার নিষেধ নাই যত ইচ্ছা ছবি তুলবেন আপনি বললে আমি সাথে আসব, উনাকে সাথে আসতে হবেনা বলে সেখান থেকে চলে এলাম এবং পাখি দেখতে গিয়ে রিয়েলি সারপ্রাইজ হলাম।


পাখিদের সামনে বিভিন্ন রকম খাবার সাজিয়ে রাখা।

মরিচ যে এদের প্রিয় খাবার জানা ছিল না।



এই পাখিটা দেখতে কবুতরের মতন



আমার বন্ধু পাখি দেখে আনন্দে বাকরুদ্ধ প্রায়,
বার বার বলছে দোস্ত কাণ্ড দেখছস আমরা পাখির মধ্যে! আমি বিরক্ত হয়ে বললাম এত এত ডিগ্রী নিয়াও এখনো ভালো করে নিজের মাতৃভাষটা গুছিয়ে বলতে পারিস না, তুই জীবনে কি করলি!!

















এরপর গেলাম একুরিয়ামে রাখা মাছ দেখতে, তেমন ভাললাগেনি, কিছু মাছ দেখলাম মরে ভেসে আছে, খারাপ দৃশ্য।







প্রজাপতির খাঁচায় ঢুকে তেমন কোন প্রজাপতি দেখলাম না, সেখানে ভালো লাগলো বুনো ঝরনা আর কাঠের সাকো ।



এটা রঙিন মাছের লেক এবং মাছকে খাওয়ানোর জন্য গেট থেকে ১০ টাকা দিয়ে কিনে নিতে হয় খাবার।
সত্যিই ব্যাপারটা উপভোগ্য।







হাতির পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াবার রাইড






যেদিকে তাকাবেন ভালোলাগার মতন কিছু না কিছু চোখে পড়বেই। আমার ফ্রেন্ড এক কাপলকে দেখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল আপু এখানে দেখার আর কি কি আছে , মেয়েটি বলল দেখার মত চোখ থাকলে সবি দেখার মতন, বলেই অদ্ভুত সুন্দর করে আমার বন্ধুর দিকে তাকাল, তখনি আমি লক্ষ্য করলাম ও একটা কলাপাতা রঙের টি শার্ট পড়েছে এবং ওকে দেখতে আজ ভালোই লাগছে, আসলে বন্ধুদের কাছে বন্ধুদের চেহারার কোন ভালো মন্দ নাই ।








চারপাশে সবুজের সমারোহ







এটা শিশুদের পার্ক, এর ভেতর কুমিরের মুখ দিয়া ঢুকতে হয়।

হুম, এখানে নির্জনে কেউ কেউ প্রেম ও করে থাকেন ।



এরপর ওয়াইল্ড লাইফ বাঘ, সিংহ, হরিন, হাতি , জেব্রা, বন গরু, ভালুক ইত্যাদি দেখার জন্য একশো টাকা দিয়ে টিকিট কেটে বাসে করে ঘুরে ঘুরে দেখার জন্য যখন লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি, তখন সামনে প্রায় নব্বইজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। একটা বাস থেমে আছে বাসে উঠতে পারবেন ২০ জন যাত্রী, এর পরের বাস কখন আসবে ঠিক নেই! কমপক্ষে ২ ঘণ্টা লাগবে উঠতে ভেবে আমি মনের সুখে আইস্ক্রিম খাইতে খাইতে দেখি বাসের কন্টাক্টর দূর থেকে তিন আঙ্গুল ইশারা করলেন মানুষজনের দিকে ফিরে , কেউ কিছু বোঝে নাই বলে নাকি কে জানে সব চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে আমি আঙ্গুলের জবাবে দুই আঙ্গুল দেখাইতেই আমাকে ও আমার বন্ধুকে ডেকে বাসে তুলে নিলেন আমার জায়গা হল ড্রাইভারের পাশের সীটে সবার সামনে। বিশাল গ্লাস থাকায় বেশ কিছু ছবি তুলতে পারলাম।



বাস চলতে শুরু করলো। আমরা প্রথমেই জঙ্গল আর গাছ গাছালির ভেতর ডোরাকাঁটা জেব্রা দেখে আনন্দে উল্লাসিত হলাম।

তারা রাস্তায় উঠে বেশ কিছুক্ষণ আমাদের বাসের পথ রোধ করে ছিল।







পাশেই এক ছেলে মোবাইল দিয়া রেকর্ড করে আমার ছবি তোলায় বাঘাত ঘটাতেই তাকে এক ধমক দিয়া সরিয়ে দিলাম, সে আসলে ধমক না দিলেও সরতো, সত্যিকারের ভদ্র ছেলে।




এরপর দেখলাম জিরাফ, উনি কাছে আসেন নাই , গভীর জঙ্গলে গাছের পাতা খেতে ব্যস্ত ছিলেন ।


সুন্দরী চিত্রা হরিন ও আমাদের সামনে রাস্তায় নেমে এলো







ভালুক একটিবার মুখ ঘুরিয়ে আমাদের দিকে তাকালোই না।।

সিংহ অলস ঘুমাচ্ছে।

আমরা শুধু বাঘ মিস করলাম।। মোটামুটি আর সব কিছুই দেখা হল।। এখানেই নাকি প্রাণীগুলোর জন্ম হয়েছে, তবে দর্শনার্থীর জন্য পাঁচটি বাঘ ছেড়ে রাখা হয় নিরাপত্তার খাতিরে, ওখানে বাঘ আছে মোট ১২টি। একেকটা প্রাণীর বিশাল গেট দিয়ে সেন্সর করা, একটা গেট ওপেন হলে গাড়ি ভেতরে ঢুকলে পেছনের গেট বন্ধ হলে তবেই সামনের গেট খুলে, বেশ ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পুরো বাসে আমি ড্রাইভারকে প্রচুর প্রশ্ন করলাম সে মাউথ স্পিকারে সেগুলোর উত্তর দিচ্ছিল যেন তথ্যগুলো সবাই শুনতে পায়। বাসের প্রতিটি যাত্রী আমায় বেশ সুযোগ করে দিয়েছিল ছবি তুলতে। এই ব্যাপারটায় আমি মুগ্ধ।।















সব দেখা শেষ করে আমরা বিকেল তিনটার মধ্যে বেরিয়ে এলাম, কেননা ওখানে চুরি ছিনতাই হয় অনেক, এই যে আমি যে লেগুনার গ্লাসের ছবি তুলেছি ওটার গ্লাস দুর্বৃত্তরা কোপ মেরে ভেঙ্গে দিয়েছে মাত্র দুই দিন আগে, সে যে সীটে বসে লেগুনা চালাচ্ছিল সেটা মাঝ বরাবর কাঁটা, কোন রকম জান বাঁচিয়েছিল সেদিন।।


ফেরার পথে



মাঝে মাঝে মনেহয় জীবন সুন্দর



সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪০
৪৪টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×