পাখির প্রমোদগানে পূর্ণ বনস্থল।
আমি ভাবিতেছি চোখে কেন আসে জল।
দোয়েল দুলায়ে শাখা
গাহিছে অমৃতমাখা,
নিভৃত পাতায় ঢাকা
কপোতযুগল।
আমারে সকলে মিলে করেছে বিকল
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার মেঝ আপুর মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় আমি কথার মাঝখানে কান্নাকাটির ফাঁকে হঠাৎ ভাগ্নিকে বললাম জানোস গত দুই দিনে তিনজন আমার কপালে চুম্বন করতে এসে ধড়া খাইছেন।
তাদের একজনের এই ধড়া খাওয়ায় আমি প্রচুর আনন্দিত সে তোর ছোট মামা, আমার এই ভাইয়া প্রচুর মেলো ড্রামা করতে পারেন, তাই উনার সাময়িক একটু হলেও কষ্ট পাওয়ায় আমি আনন্দিত।সে ইঞ্জিনিয়ার এবং সিঙ্গাপুরের একটি সরকারী কোম্পানিতে কাজ করেন এবং নিজেরে সম্ভবত এইকারনে ঐ দেশের প্রেসিডেন্ট ভাবেন। তিনি আপুর লাইফ সাপোর্ট এর যখন খবর পান এক দৌড়ে তার বসের রুমে যান গিয়ে দেখেন তিনি একটি মিটিং করছিলেন, ভাইয়া সেইখানে ঢুকে হাহাকার করতে করতে কাঁদতে কাঁদতে মাই সিস্টার মাই সিস্টার ইজ অন লাইফসাপোর্ট বা এই জাতীয় কিছু একটা বলে ধপাশ করে মিটিং এর টেবিলের উপর অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
ওয়েল আমার ধারণা এটা তার অভিনয়, সে দারুন অভিনয় করতে পারেন। তার বস তার এই অবস্থা দেখে যারপরনাই ব্যথিত হয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে প্লেনের টিকিট এরেঞ্জ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে প্লেনের কোন এক পেসেঞ্জারের কাছ থেকে ডাবল প্রাইজে টিকিট ম্যনেজ করে তাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
আপুর চলে যাওয়ার দিন থেকে আমার এক অদ্ভুত মাথা ব্যথা শুরু হয়, শুরুতে আমি এক্স মেখে টাফ্লিন খেয়ে থেকেও কাজ না হওয়ায় প্রচুর পরিমান মাথায় এক্স অথবা টাইগার বাম মেখে তারপর কাঁদতাম, আবার অফিস ও করতাম। আমার আম্মু , আমার পিচ্চু ভাগ্নি এবং এই ড্রামা কিং ভাইয়া কান্না থামাতে শান্তনা দিতে দিতে কপালে চুম্বন করে পরবর্তী ঘণ্টা ব্যাপী ঠোঁট জ্বলার পেরেশানিতে আক্রান্ত হন।
প্রথম যেদিন আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম তার বিভিন্ন উত্তর দিতে দিতে আমি লক্ষ্য করলাম তিনি একটা আধা পাগল দেখতেছেন এই চেহারা নিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমি তাকে কি কি বলছিলাম হুবুহু মনে করতে পারি, আমি তাকে বলছিলাম আমার পালস বেশি এসেছে? কত একশো ষাট?? নরমাল কত থাকতে হয়?? ৯০??
এতে টেনশনের কিছু নেই আমার বোন মারা গেছেন তো তার জন্য এখন দুঃখ তো লাগবেই আমি না চাইলেও চোখ দিয়ে পানি পড়বে সো আমি তো নার্ভাস থাকবই , ঘুম তো হবেই না স্বাভাবিক তবে আমার ঘুম নিয়ে সমস্যা নেই, আমার চোখে অনেক ঘুম কিন্তু আমি ঘুমাতে পারিনা । আপু মাটির নীচে শুয়ে আছেন আর আমি বিছানায় আরাম করে আছি আর কত বৃষ্টি হচ্ছে ইদানীং, বলেন বৃষ্টিতে কবরের ভেতর কাঁদা হবে না ? পানিও তো জমতে পারে , আমি এসব চিন্তা তো ইচ্ছে করে করছি তা নয় এরকম চিন্তা তো আসবেই তাই না? ডাক্তার কথা বলতে বলতে আমার নানান টেস্ট করছেন পেছন থেকে নার্স এসে আমার দুই কাধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছেন আরেকবার পালস দেখলেন প্রেশার দেখলেন। অনেক অনেক টেস্ট দিলেন ওষুধ দিলেন। পুরোটা সময় নার্স আমাকে ইতিমনি ইতিমনি বলে ডাকলেন, ইতিমনি শব্দটা কানে লাগছিলো খুব।
তিনি আমাকে যেসব টেস্ট করতে দিয়েছিলেন তার একটি টেস্ট ছিল খুব খারাপ একটি রোগের টেস্ট, ঐ টেস্টের রিপোর্ট দেখার সমর ডাক্তারের কি ছেলেমানুষি তিনি হাত দিয়ে ঢেকে আগে নিজে দেখলেন তারপর প্রচণ্ড খুশি হয়ে হলেন। পুরো রুমটাতে ডাক্তার নার্স এর আনন্দ ছড়িয়ে গেলো আমি নার্সকে বললাম এখন আমার পালস মাপেন নরমাল আসবে।
কথা সত্য প্রমানিত হল। ডাক্তার আমার দিকে প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে তাকালেন এবারের দৃষ্টিতে পাগল দেখছেন সেই ভাব নেই।
এখন আমি অনেকটা সুস্থ । আপুর জন্য ও রাত জেগে থাকিনা, শুধু মাঝে মাঝে খুব কষ্ট লাগে ভেতরে। আজ আবার কিছু টেস্ট করাতে গিয়েছিলাম এক বিদেশিনী প্রচণ্ড টেনশন নিয়ে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার কষ্ট হচ্ছে ভেবে বললাম ইউ ক্যান সীট হিয়ার ইফ ইউ ওয়ান্ট। সে হাত দিয়ে মাছি তাড়াবার মতন নানানা বলে না করে দিতেই আমি বুঝলাম উনি দুই মিনিটের মধ্যেই এসে বসবে। করলেন ও তাই। আমি মাঝে মাঝে মানুষকে এত বুঝি!!
এই সেই বিদেশিনী, তাকে যে ইচ্ছে করে তুলেছি তা নয় আমার যেহেতু একটু আধটু সেলফি তোলার রোগ আছে তাই তিনি উঠে গেছেন ছবিতে।।
ব্লগে এবং এফবিতে দেখি সবাই কোন একটা দোষ কোন একটা ভুল যে কোন কিছু নিয়া আলোচনা করে ভুল আর খারাপ জাতি হিসেবে বাংলাদেশিদের পঁচিয়ে যে কোন বিদেশীদের গুনকীর্তন করতে করতে তাসবিহ জপতে থাকেন।
গুলশানে প্রচুর বিদেশি বসবাস করেন এবং হাঁটতে চলতে সবখানে এরা থাকেন এদের আমি দেখিনা তেমন কার্টেসী দেখাতে বরং এদের চালচলনে এমন ভাব থাকে যে তারা এতই উচ্চ আসনে আছেন যে তাদের পা ভুমিতে পড়ে না তারা ভুমি থেকে দুই ইঞ্চি উপড়ে ভেসে চলতেছেন।
একবার এক অতি স্বাস্থ্যবান বিদেশি মেয়ে আমাকে ভীষণ জোরে পা মারিয়ে গিয়ে একটি নুন্যতম সিম্প্যাথি কিংবা সরি বলে নাই। এই জন্য অবশ্য তার সাথে সেধে পরিচিত হয়ে তারপর জানিয়ে দিয়েছি '' সে সরি ফাস্ট , হোয়েন ইউ ডিড সামথিং রং ''
সবাই দেশ ছেড়ে বিদেশ যেতে চায় আর বিদেশীরা দিনে দিনে আমাদের গুলশান বনানী দখল করে বসছেন। চোর ও নাকি শুধু বাংলাদেশেই হয় কিন্তু আমি দেখেছি আমাদের কোম্পানির শপিং মলে প্রায়ই চোর ধড়া পড়ে অধিকাংশ কোরিয়ান, জাপানি , মালায়শিয়া সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক তারা। আমাদের নিরক্ষর সিকুরিটি গার্ডদের হাতে কি করুন ভাবে মা'র ও খা্ন তারা।
একবার ফেডএক্স এ দেখেছিলাম এক চাইনিজ ছেলে একটা কার্টুন তাদের দেশে পার্সেল করার জন্য এসেছেন ভেতরে নাকি কাপড়চোপড়। রুটিন চেক আপের জন্য কার্টুন খুলে দেখা গেলো কয়েকশো মোবাইল ফোন তাতে।
সব ছবি সকালে তুলেছি হসপিটাল আর হসপিটালের লন থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩