আমাদের অফিসের কিছু কিছু মিটিং এ মেয়েদের কোন ভুমিকা নেই কাজেই মেয়েদের নাম ওসব মিটিং লিস্টে থাকেনা। এক ছেলে ইন্টার্ন করতে এসেছে বি বি এ স্টুডেন্ট ব্র্যাক ইউনিতে পড়ে, ইন্টার্ন করতে আসা ছেলেমেয়েগুলো করে কি যেহেতু জীবনের প্রথম অফিস কাজেই এরা যা দেখে তাতেই মুগ্ধ এবং অবাক হয়ে থাকেন, প্রতিদিন অফিসে নতুন নতুন শার্ট পড়ে আসেন, সব কিছু পারফেক্ট থাকা সত্ত্বেও সারাক্ষন তটস্থ হয়ে থাকেন, সবার মন রাখতে উঠতে বসতে সালাম দেন, এই ছেলে আসার পর থেকে আমার উপর বিশেষ লক্ষ্য রাখছেন বলে আমি ভেতরে ভেতরে খুবই বিরক্ত বিশেষ করে যখন চোরামি করে চাট করি অথবা নেট এ ঢুকি, অথবা টেবিলের উপর সকল কাজ সকল ফাইল পত্র ফেলে পায়ের উপর পা তুলে উদাস হয়ে আকাশ দেখতে দেখতে চা অথবা কফি পান করি কিংবা নিজের অথবা আমার ডেস্কের খাতা কলম ফাইল পত্র ফুল ফল আকাশ বাতাসের ছবি তুলি।
উনি নতুন তাই জানেননা আমাকে লক্ষ্য করলেই আমি রুড। এগুলো আমার খারাপ অভ্যাস। আরও খারাপ অভ্যাস হচ্ছে কর্পোরেট নাম্বার রিসিভ না করা এবং অফিস মেইল চেক না করা। এই জন্য আমার সুপারভাইজার ইডি স্যার আমায় বলতে বলতে বলতে ক্লান্ত, এখন সে মেইল করে এসে অথবা আমাকে কেউ মেইল করছে সেই কথা সে নিজে স্ব-শরীরে জানিয়ে যান, আমার এই সকল ছেলেমানুষী অবশ্যই পরিবর্তন করা উচিৎ এই নিয়া আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে অন্য ফ্লোরে গিয়া ধুমাইয়া আড্ডা দিতে দিতে শুনলাম স্যার আমারে তো হাজারখানেক ফোন দিয়েছেনই এরপর না পেয়ে এর ওর মোবাইলে ফোন দিয়া খুজছেন সম্প্রতি দেশের বাইরে আছেন কাজেই কিছু আর্জেন্ট মেইল সেণ্ট করতে হবে জানাইতে তিনি আইটিতে কল দিয়া অফিসের সিসিটিভি চেক করাইয়া আমি কোন ফ্লোরে আছি খুঁজে বের করিয়ে যার সাথে আড্ডা দিতেছিলাম তার মোবাইলে ফোন করে আমাকে পাইতে সক্ষম হয়েছেন।
ব্যাপারটা নিয়া ভাবতেই আমি লজ্জিত হয়ে যাচ্ছি এটা কি হল এই চিন্তা করতে করতে নিজেকে নিজে ধিক্কার দিতে দিতে দেখলাম ইন্টার্ন সেই ছেলে খুব সাহস সঞ্চয় করে পাঁচ পৃষ্ঠার এক লিস্ট নিয়া আমার সামনে এসে বলল আপনার নাম কি এই লিস্টে আছে তাহলে সাইন করে দেন প্লিজ।
আমি পায়ের উপর পা তুইলা চায়ের কাপ হাতে নিয়া তার দিকে না তাকাইয়া ভাবলাম রুড হবার সুযোগ এসে গেছে, আমাকে সারাদিন দেখো, কিন্তু আমি যে ডায়েন সেইটা দেখনাই ছোট ভাই।
অন্যদিকে মুখ করে তার বাড়িয়ে ধরা কাগজকে তুচ্ছ করে কণ্ঠ শক্ত করে বললাম ওটায় কোন মেয়ের নাম আছে? ছেলে বলল, না মানে আমি জানিনা। নেই হয়তো আমাকে স্যার বলল স্যার বলল,
স্যার বললেই হবে, চেক করে দেখবেননা? কতদিন হল ইন্টার্ন করছেন? কয়দিন মেয়াদ? ২০ দিন? এই ২০ দিনে এতটুকু উন্নতিও তো হয় নাই? মেজর কি? কত পয়েন্ট আসছে থার্ড সেশনে? একটা লিস্ট পেলে আগে সেটা পড়ে দেখতে হয়না ভেতরে কি আছে? এতদিন পড়ালেখা করে এখানে ২০ দিন কাজ করে এই শিখছেন? আপনাকে দিয়ে কি হবে??
ফর্শা ছেলেটির নাক মুখ লাল হয়ে গেছে থমথমে ভাব, বোঝাই যাচ্ছে প্রচুর অপমানিত বোধ করছেন। তারপর থেকে ছেলেটি অনেকক্ষণ ধরে হাওয়া ছিলেন, এখন দেখা যাচ্ছে তাকে চোখ মুখ ফোলা, ওয়াশরুম থেকে কেঁদে কেটে এসেছে কিনা কে জানে।।
কথা হচ্ছে ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। এখন আমার কপালে কখন কোত্থেকে পাটকেল এসে পড়বে কে জানে।।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:১১