বেশ কিছুদিন আগের এক সকালে অনাবিল বাসে বসে আছি, ঘুম থেকে উঠেই সকালে দৌড়ের ফলে পুরো বাসেই ঝিমানো ভাব থাকে, যদি দেখি পাশে বসা লোকটি, কিংবা মেয়েটি, কিংবা ছেলেটি অতি ভদ্র, তবে আমি সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকি।
বাস গত দুই বছর ধরে সিটিং সার্ভিস চালু হওয়ার ফলে, ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, কাজেই এই কারনে যাত্রীদের জন্য এই সকল বাসে অন্যগুলোর তুলনায় বেশি সুযোগ দেয়া হয় ,এটা বুঝাইতে প্রায় সকল বাসে ফ্যানের পাশাপাশি টিভি মনিটর লাগাইয়া তাতে গান অথবা নাটক কখনো কখনো ওয়াজ শুনার ব্যাবস্থা করেছেন বাস কর্তৃপক্ষ।
সেইদিন এক মেয়ের পাশে বসেছি ,মেয়েটার ক্যাম্ব্রিয়ান কলেজের কালো পোশাক পড়নে, বাচ্চা ভাব চেহারা এবং আচার আচরণ, আমাকে চক্ষু বন্ধ করে থাকতে দেখে সেও আমার কাধের কাছাকাছি মাথা রেখে আরামছে ঘুম দিয়েছেন, মাঝে মাঝে নাক ডাকার আওয়াজও করছেন।
এইরকম আমাদের দুইজনের আরামের ঘুমের সময় টের পাইলাম খুবই অশ্লীল একটি ভিডিও সং কানে আসতেছে, গানটার চিত্রায়নের আছেন বিপাশা বসু, কিত্নি বেইচান হোকে তুমছে মিলি, তুমকো কেয়া থি খাবোর থি ম্যায় কিত্নি একেলি, এরপর এই ক্যাটাগরির আরেক গান যাদু হায় নেশা হায় মাদ হোসিয়া তুজকো ভুলাকে ম্যায় জাউ কাহা!!
এই ঘটনা চলাকালীন ভাবলাম কেউ ধমক টমক দেবেন, কিন্তু কোন প্রতিবাদের শব্দ কানে না আসায় আমি চোখ খুললাম, দেখলাম মহিলা সীটে বসা মহিলাগন এবং মেয়েগুলা এহেন জড়াজড়ি দৃশ্য পাবলিকে দেখে, মাথার হিজাব দিয়া, ওড়না দিয়া মুখ ঢেকে মাথা নিচা করে বসে আছেন।
অল্পবয়সী নতুন চাকরী করা ছেলেগুলা হা করে দেখতেছেন, বয়স্ক বুড়া দুই তিনজন অন্য দিকে মুখ করে আছেন, স্ক্রিনকে উপেক্ষা করে ঘন ঘন বাইরে তাকিয়ে ব্যাপারটাকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করতেছেন।
ইতিমধ্যে ঐ গান শেষ হয়ে নতুন রোমান্টিক গান শুরু হইছে আজ ফির তুমপে পেয়ার আয়া হায়। মাইয়া বিকিনি পড়া সুইমিং পুলে তারপর পোলার সাথে বেডে। এই পর্যন্ত হবার পর আমি আমার ঘুম কম হওয়া লাল জ্বলজ্বলে চোখ খুলে বললাম, গান বন্ধ করেন সকাল সকাল অশ্লীল গান বাজাচ্ছেন! অশ্লীল ড্রাইভার কোথাকার! গান এক্ষন বন্ধ করেন! পাব্লিকে এরকম অশ্লীল গান বাজায়!!
বলার মধ্যে কি ছিল কে জানে! সাথে সাথে গান স্টপ। পুরা বাসের পরিবেশ পরিবর্তন। যাত্রীরা চুপ। মেয়েগুলা মাথা উঁচু করেছেন, আমাকে খুশি হয়ে দেখছেন, নতুন ব্যাঙ্কে চাকরী পাওয়া ফিটফাট স্যুট টাই পড়া চাকরিজীবী ছেলেগুলা আমার দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন, হাসি কিছুতেই ভেতরে রাখতে পারছেন না এরকম অবস্থা।
মুরুব্বীগনদের ভেতর একজন এতক্ষনে মুখ খুললেন, বললেন; মিয়া তোমরা লোক ভালোনা এই সব গান মানুষ দ্যাহে! সোজা দোজখে যাওয়ার পথ করছো।সকাল সকাল এমন গান ছাড়ছো তাকান যায় না।
ঐ বাসে এরপরের দিনই আবার উঠছিলাম দেখলাম ওয়াজ নসিয়ত চলছে। তার কয়দিন পর দেখলাম টিভি মনিটরটা নাই শুধু খুঁটিটা আছে। তারপরের ঘটনা আরও চমৎকার টিভি টুভি আজকাল আর বাসে চলতে দেখা যাইতেছেনা।।
ওয়েল
সমাজ সংস্কার যে কেউ করতে পারেন, আপনার সৎ ইচ্ছাই এইজন্য যথেষ্ট।।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫