ছবি দেখলে মাথা ঘুরতে পারে, সেক্ষেত্রে ছবি avoid করে লেখাটি পড়ুন।
আমি প্রথম নিউরো ডাক্তারের পঞ্চমবারের মতন মেডিসিন পরিবর্তন করার পর, আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ায়, সেই ডাক্তার পরিবর্তন করে, অফিসে এক্সিডেন্ট করে মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে জীবিত হয়ে আসা কলিগের, যার কিনা মাথার বিভিন্ন অংশ থেতলে গিয়েছিলো এবং কয়েক দফায় তার অপারেশন এবং সার্জারি হয়েছিলো, তার পরামর্শে তার ট্রিটমেন্ট করে সফল হওয়া তার মতে বাংলাদেশের নিউরোর সেরা ডাক্তারের কাছে গেলাম।
এবং পুরানো মেডিসিন পরিবর্তন করে দফায় দফায় নতুন মেডিসিন প্রেস্ক্রাইব এবং টাইমলি তা সেবন করতে হবে, এই অর্ডারের উপর ভিত্তি করে বাসায় যেয়ে নতুন মেডিসিন খেয়ে রাত নয়টার মধ্যে ঘুমালাম।
কাটায় কাটায় রাত আড়াইটা তিনটার দিকে ঘুমের মধ্যে আমি টের পেলাম, আমার শরীরের ভেতর ঠিক স্কিনের তলায় পায়ের পাতা থেকে পুড়তে পুড়তে কি যেন মাথা পর্যন্ত উঠে, মাথার প্রতিটা বিন্দু ও অলিগলিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমি আতংকিত হয়ে
উঠে বসে আরও আতংকিত হলাম।
চারপাশে গাঢ়ো সবুজ রং।
মাছের মতন চোখ আর ঝাঁকড়া চুলের ছেলে সুরমা অথবা কাজল দেয়া আমার পায়ের কাছে বসে আছে আমার বুকশেলফ এর মতনই নির্বাক জড় পদার্থের মত।
আমি এক লাফে খাট থেকে নেমে আলোর গতিতে রুমের দরজা খুলে আম্মুর কাছে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ততক্ষনে ঠক ঠক করে কাঁপছি। শরীর জ্বলে পুড়ে ছাড়খার! কাপুনি থামছে না, পানির পিপাশা বমি ভাব এই অবস্থায় আমি আরও তিন ঘণ্টা কাটিয়ে দিলাম।
আম্মু ঘুমের ঘোরে কপালে হাত রেখে বললেন কি হইছে মা! আমি তাকে আরও ঝাপটে ধরলাম কিচ্ছু বললাম না। কাপুনি থামছে না! সবুজ রং চোখ থেকে সরছেনা! ভাবলাম আমার কি ব্রেন স্ট্রোক হচ্ছে! আমার কি আপুর মতন মাথার রগ ছিঁড়ে গেছে! আমি কি মরে যাচ্ছি!
আব্বু স্ট্রোকের পর থেমে থেমে একটু একটু হাঁটতে পারেন, আম্মুর ও হাঁটু ব্যথা কাজেই যা করার আমাকেই করতে হবে।সকাল হতেই
রাস্তায় এসে সি এন জি না পেয়ে বাসে চড়ে বসলাম। জ্বলুনি সবুজ রং দুইটাই আছে জড়পদার্থের ছেলেটা নাই।
হেল্পার যখন ভাড়া নিতে এলো চিৎকার করতে গিয়ে নিজেকে সংযত করলাম! হেল্পারের মাথা কই!!? অনেক চেষ্টার পর ধোয়া ধোয়া মাথা দেখতে সক্ষম হলাম।
হাসপাতালে ঢুকে সরাসরি নিউরো জোনের রিসিপশনে গিয়া বললাম আমি হয়তো মরে যাইতেছি গতকালের দেখানো আমার নিউরো ডাক্তার কই!! ডাক্তার ওটিতে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সে আমাকে দেখে দ্রুত প্রেশার মেপে কয়টা আঙ্গুল দেখতে পাচ্ছি এইটা সেইটা টেস্ট করে আমার কাধে ঝাকুনি দিয়া বললেন you are absolutely fine my dear তোমারে বাসা থেকে বের হইতে বলছে কে??
নতুন কিছু শরীরে মানাতে তো একটু সময় লাগে। আমি ক্ষীণ কণ্ঠে বললাম আমি আসলেই ঠিক আছি? মাথার রগ ছিঁড়ে নাই? স্ট্রোক হয় নাই? উল্টাপাল্টা দেখছি কেন আমি কি তবে পাগল হয়ে গেছি? ডাক্তার অত্যন্ত যত্ন করে বোঝালেন আমাকে যে ড্রাগ দেয়া হইছে ওটার কারনেই এই সাইড এফেক্ট আর হেলুসিনেশন হচ্ছে এবং আরও সাতদিন পর্যন্ত হবে। এতে আমি যেন আতংকিত হয়ে না পড়ি।
যাক এই হল আমার অল্প কিছুদিন আগের এক্সপেরিয়েন্স।
অ্যালেক্স গ্র্যান্ড নামে এক চিত্রশিল্পী ২০১২ সালে হার্ট অ্যাটাক করে মানুষের মুখচ্ছবি এই রকম অদ্ভুত কিছু ডাবল চোখ visualize করেছেন এবং নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বেঁচে ফিরে তিনি পূর্ণ জন্ম পাইলেন এই রকম খুশি হয়ে, পরবর্তীতে বেশ কিছু ডাবল চোখের রানী শিরোনামে পোট্রেট ছবি আঁকেন এবং এক্সিবেশন করেন যা দেখে মানুষ অবাক যেমন হয়েছেন, তেমনি চিন্তিত ও হয়েছেন।।
শিল্পীর আঁকা ডাবল চোখের রানীরা---
প্রতিটি ছবির ভেতর অদ্ভুত বিষণ্ণতা
শিল্পী অসুস্থ অবস্থায় দেখা মুখচ্ছবি কাজে লাগিয়ে অদ্ভুত সুন্দর এই ছবিগুলো এঁকেছেন। যাই হোক হার্ট স্ট্রোক কিংবা ব্রেইন স্ট্রোক আজকাল এই অসুখটি যখন তখন যে কোন বয়সের মানুষের হচ্ছে। দুটাই অনেক ভয়ঙ্কর বেশির ভাগ বাঁচার সময়ই দেয় না। সবাই ভালো থাকুন।
ছবি শিল্পীর প্রতিবেদন; পাণ্ডা থেকে সংগৃহীত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১১