somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে; জীবনের নিয়মে

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার মেঝ আপুর মৃত্যু হয়েছে দশ মাস হয়ে গিয়েছে। যখন অফিসে থাকি তখন মনেহয় সব কিছু ঠিকঠাক। আপু আছেন। তিনি নাই এই শব্দটা মাথার মধ্যে ব্ল্যাংক হয়ে থাকে। এই ফিলিংটা কিছু সময়ের জন্য হলেও নিশ্চয়ই স্বস্তিদায়ক?

এই জন্য আমি মনে করি কাউকে ভুলে থাকতে চাইলে বেশি বেশি ব্যস্ত থাকা উচিৎ। এত বেশি ব্যস্ত যে নিজের জন্য দুঃখ করবার যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবেনা।
আমার আপু পান্থপথ সমরিতা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তাকে সেখানে অসুস্থতার দ্বিতীয় দিন নেয়া হয়েছিলো, যখন তিনি কোমায় চলে গেছেন বলে ডাক্তাররা আগের হাসপাতাল থেকে ঘোষণা দিছেন, এবং তাকে সরিয়ে ফেলার উপদেশ দিয়েছেন, কেননা তাদের মতে রোগী বাঁচবেনা।

যেহেতু রোগী বাঁচবেনা কাজেই এই রোগী তাদের হাসপাতালে রেখে হাসপাতালের রেপুটেশন বরবাদ করতে চান না। যে কারনে সেখান থেকে সরিয়ে সমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, ঐ ভাবে ঐ হাসপাতালে আমার বোন লাইফ সাপোর্টে সারভাইভ করে ১০ দিনের মাথায় ইন্তেকাল করেন।

এই কথাগুলো বহুবার বলতে থাকি, কারো সাথে কথা বলতে গেলেই এই কথা বলি, বাসায় গিয়া আব্বা আম্মার কাছে বসলেই তারা এই কথা বলেন, আমিও বলি, তারা কাঁদেন, আমি কাঁদি না।

আমার মনেহয় আমার বাবা মা আমার নিজ সন্তানের মতন হয়ে গেছেন, বয়স হয়েছে তাদের, উনাদের সামনে আমাকে যথেষ্ট অ্যানারজেটিক থাকতে হবে এবং আমি সেটাই করি। কোনোদিন কারো মতে চলিনাই, কারন আমার ধারণা নিজের কি করা উচিৎ অনুচিত তা অন্যরা রিয়ালাইজ করতে পারবেন না, এবং কখনোই কার কি দরকার তা অন্যরা অনুধাবন করতে পারেনা।

আমি অনেক বাস্তববাদী মেয়ে কিন্তু আমি যন্ত্র নই, একটা হার্ট আমার ভেতরেও আছে এই কথা আমি যেমন বুঝি তেমন আমার আশেপাশের মানুষ বুঝে কাজেই তারা আমার হার্টের অপ্রয়োজনীয় অপব্যাবহার করার চেষ্টা করেন। তবে এইটাও ঠিক বেশির ভাগ মানুষ অন্যকে নিজের স্বার্থে অপব্যাবহার করতে গিয়ে নিজেই নিজের কাছে পরাজিত কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন।

হতে পারে সেই ক্ষতি মনস্তাত্ত্বিক অথবা সামাজিক শারীরিক যে কোনটা, আপুর লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন সবাই ছিলাম ঘোরের মধ্যে, যা হচ্ছে না হচ্ছে তা না হোক। যা মনে প্রানে চাই তা কিছুই হচ্ছেনা, সবার কোন প্রকার ড্রিঙ্ক এর প্রভাব ছাড়াই মাতাল আর খাপ ছাড়া অবস্থা, আপুর বাঁচার সম্ভাবনা কম!! কি অবিশ্বাস্য কথা!! সবার চোখে মুখে অবিশ্বাস!! ছোট ভাইয়া ডাক্তারের কলার চেপে ধরে চেয়ার তুলে মারতে গিয়ে পুরা হাসপাতালে তুলকালাম কাণ্ড বাধাইছেন, সেইদিকে আমাদের কোন হুস নাই, একটা কথা বলার শক্তি কেউ পাচ্ছিনা, ছোট ভাইয়া ওইদিন সকাল ৫ টায় দেশে এসে নামছেন, সেখান থেকে তারে সোজা হাসপাতালে নিয়া আসছি, ভাবি প্রেগন্যান্ট তিনি বাড়িতে আছেন।

আপুর রক্তের গ্রুপ ছোট ভাইয়ার রক্তের গ্রুপে এক কাজেই এসেই তাকে রক্ত দিতে হয়েছে, সারাদিন রাত আমাদের নাওয়া খাওয়া ঘুম কিচ্ছু নাই, শুধু বাচ্চাগুলার দিকে দাঁত বের করে তাকাবার চেষ্টা করে, পাশের এক হোটেলে খাইয়ে নিয়া আসি, আর বলি এবং আমি নিজেও বিশ্বাস করি, আপু সুস্থ হয়ে যাবেন, এগুলো মাত্র কয়েকদিনের ব্যাপার।


বড় দুই বোন এবং তাদের পরিবার বাড়ির কাছাকাছি থাকায় তাদের কে সময় দেবার জন্য হোক কিংবা ভালো মন্দ খাওাবার জন্য হোক আমি দাওয়াত কিংবা পার্টির আয়োজন করি নিজ হাতে রান্না করি। আব্বু তখন ছোটাছুটি করেন বাজার করেন, আম্মা সব কেটে কুটে গুছিয়ে দেন।

শেষ দাওয়াত দেবার সময় আপু নিজেই ডেট ফিক্সড করলো, কি উৎসাহ তার আর আনন্দ। আমার দাওয়াত মানেই স্পেশাল আইটেম স্পেশাল আনন্দ সবার। ডেট দিল ২৬ মে, রোজার আগের দিন, আমি বললাম আপু রোযা হয় যদি! আপু হাসতে হাসতে বলে নারে সামু রোযা তার পরদিন আমি ক্যালেন্ডার দেখছি।

২৫ তারিখ মে মাসে সন্ধ্যায় আপুকে হাসপাতাল থেকে মৃত বের করা হলো, ২৬ তারিখ সকালে আমার দাওয়াতের দিন আপু খাটিয়ায় শুয়ে রইলো। আমার সহজ সরল আপুর তার প্রিয় রাধুনি তার প্রিয় সামুর হাতের রান্না খাওয়া হল না।

পঁচিশ তারিখ পান্থপথের রাস্তায় আমি হাত পা ছড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদছিলাম তখন সন্ধ্যা হয় হয়! এক মোটা কালো সাধারণ চেহারার ড্রাইভার প্রাইভেট কার থেকে মাথা বের করে করুন আর মমতা মাখানো গলায় আকুল হয়ে বলছিল মাগো আপনার পা টা সরান মাগো এই ভাবে পা রাখলে পা এর উপর দিয়া কেউ গাড়ি তুইলা দিতে পারে, ওমা আপনার পাও টা সরান। পড়ে কোন এক মহিলা আমার কান্না দেখে কাঁদতে কাঁদতে এসে পা সরিয়ে দিয়েছিল, আমার শরীর যেন জমে গিয়েছিলো, ছোট ভাইয়া সেদিন যথারীতি অজ্ঞান। আমার কাছে সেই দিনের কথা মনে পড়লে মনে হয় স্বপ্ন দৃশ্য। এত কষ্ট বাস্তব হতে পারে না।

It’s scary to think that one day we’re going to have to live without our mother or father or brother or husband or wife. Or that one day we’re going to have to walk this earth without our best friend by our side, or them without us. Appreciate your loved ones while you can, because none of us are going to be here forever.

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৯
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×