(১) মহিলাটি হাত-পা ছড়িয়ে রাস্তায় বসে পড়লো, চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকলো আমার মোবাইল নিয়া গেছে গা মোবাইল নিয়া গেছে গা।
হাতে আগের যুগের নকিয়া ১২শো মডেল টাইপ catching দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন এইডা থুইয়া গেছে মোবাইল লইয়া গেছে গা।
Well... আজকালকার ভিক্ষুক যেমন এক টাকা দুই টাকা ভিক্ষা নেয় না, তেমনি পকেটমাররা ১২শো মডেলের মোবাইলও চুরি করবে না। নূন্যতম টাচ স্ক্রিন তো তাদের চাই।
কাজেই আমি মহিলার কাছে গিয়ে বললাম, আপনার ব্যাগের ভেতর দেখেন মোবাইল ভিতরে আছে, সে কাঁদতে কাঁদতে ব্যাগের ভেতরে হাতরাতে হাতরাতে বললেন নাই, আমি বললাম ভালো করে দেখেন, সে বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর মোবাইল খুঁজে পেলেন।
(২) একটি যাত্রী শূন্য বাস এসে দাঁড়াতেই, অপেক্ষমান পূরুষদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পরে গেল, পনের বিশ জন একসাথে উঠতে গিয়ে বাসের ছোট দরজায় আটকে গেল ফলে ভেতরে ঢোকার গতি ধীর হলো।
সদ্য বাজার করা এক বৃদ্ধের হুড়োহুড়িতে ব্যাগ ছিঁড়ে টমেটো পেঁয়াজ রোশন সড়কে ছড়িয়ে পড়লো, কয়েকজন রিকশাওয়ালা হাসতে হাসতে সেগুলো কুড়াতে এগিয়ে এলো, একজনের বাসে ওঠার চেষ্টায় জুতা ছিঁড়ে হাহাকার, সে কাকে যেন বকতে বকতে ভীর থেকে বেরিয়ে এলো, হেল্পার বলতে থাকলো আস্তে উঠেন সব সীট খালি, সবাই তার কথাকে উপেক্ষা করে বাসে ওঠার ফাইট অব্যাহত রাখলো।
পেছনে একই পথের আরো দুটি খালি বাস এসে থেমে রইলো। একজনের হাত কেটে রক্ত বেরিয়ে একাকার, তবু সে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে, পেছনের খালি বাস দুটোর দিকে কেউ ফিরে ও তাকায় না।
দিন দিনা মানুষজন মস্তিষ্ক শুন্য হয়ে যাচ্ছে।
(৩) বাস থেকে নামার সময় হ্যাঁচকা টানে পকেটমার এক নিরীহ যুবকের মানিব্যাগ নিয়ে দেয় দৌড়।
যুবকটি ছিনতাইকারীর হ্যাঁচকা টান সামাল দিতে দিতে রাস্তায় পড়ে যায়, বেশ কয়বার দাঁড়াতে গিয়ে বুঝতে পারে ব্যর্থ চেষ্টা, বোধহয় পা মচকে গেছে।
পকেটমারকে তখনও দেখা যায় মানিব্যাগ হাতে, দৌড়ায়।
যুবক ভাঙা গলায় বিলাপ করে, ধরো ধরো আমার মানিব্যাগ নিয়ে পালাচ্ছে আটকাও ওকে আটকাও।
একটু দূরে রেস্টুরেন্টের সামনে দারোয়ান চেয়ারে বসে ঢুলছে, রিকশার হুড তুলে বসে বসে ঝিমায় রিক্সাওয়ালা, অদূরে দাঁড়িয়ে অগনিত যাত্রী বাসের অপেক্ষায়, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে, ইফতারের সময় হয়ে এলো। ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশ ভাবলেশহীন।
যুবকটি আর চেঁচালো না, কিংবা কেউ তার চেঁচানো শুনলোনা, পড়ে রইলো একভাবে সে।
আমরা সবাই সবাইকে স্বার্থপর বলি। স্বার্থপর বলতে বলতে মুখে রক্ত তুলে ফেলি।
তবু এ শহরের অগনিত মানুষ প্রায়ই পা মচকে পড়ে থাকে রাস্তায়।
রোদে তাপে মহাসড়কের পিচ গলে পায়ের তলা স্পর্শ করে তাদের, গুটি কয়েকজন এসবের সাক্ষী।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:০৫