somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ দুঃস্বপ্ন

২৬ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি কুঁজো হয়ে বসে আছি কানে ধরে আছি দুই হাঁটুর নীচের ভাজ দিয়ে হাত বের করে, কিছুতেই ধরতে পারছিনা বার বার সরে যাচ্ছে হাত সেই জন্য জঘন্য সব কথা শুনতে হচ্ছে।
ওহ না না আমি পারছিনা আমি পারছিনা আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ, আমার এখন এসব করবার বয়স না ঊনআশি বছর বয়সের বৃদ্ধ আমি আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন না?
-চুপ করুন, একদম কথা বলবেন না কথা বলে বলে আমার মাথা নষ্ট করে দিয়েছেন আপনি।
-তাই বলে আমার সাথে এভাবে অন্যায় করবেন?
-কোন অন্যায় করা হচ্ছেনা আপনার সাথে,
-অন্যায় করা হচ্ছেনা? ঊনআশি বছর বয়সের এক বৃদ্ধকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন আপনাদের আর্মি ট্রেনিং এ তবু অন্যায় হচ্ছে না?
-কিশের অন্যায় আপনি নিজে থেকেই এখানে এসেছেন, আবার জয়েন করেছেন এখন এই সকল রুলস আপনাকে ফলো করতেই হবে।
-আপনারা কি বলছেন আবোল তাবোল আপনারা কেন বুঝতে পারছেন না একবার চাকরীতে রিজাইন দিয়ে চলে গেলে আবার জয়েন করা যায় না।
-যায়
-কে বলেছে
-আমি বলেছি আমাদের সরকারের করে দেয়া আইন এটা।
-আপনি ভুল বলছেন,
-ঠিকাছে হয়তো আমি ভুল বলছি কিন্তু আমি বিশ বছর আগে রিজাইন দিয়েছি তারপর আর এই চাকরীতে জয়েন করিনি,
-করেছেন
-কেন আপনারা এমন করছেন আমি বৃদ্ধ মানুষ প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করুন।
-উঠে দাঁড়ান আপনি এখুনি উঠে দাঁড়ান বাঁশিতে ফু দেয়ার সাথে সাথে আমি দুই কিলোমিটার দৌড়াবেন।আমাদের পরবর্তী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, তাড়াতাড়ি উঠুন উঠুন দৌড়ান ওয়ান টু থ্রি.............
-বাবা, আপনাদের অবশ্যই ভুল হয়েছে আমি একটানা দশ মিনিট হাঁটলেই হাঁপিয়ে যাই আর আপনি কিনা বলছেন দুই কিলোমিটার দৌড়াতে, বোঝার চেষ্টা করুন বাবা আমি ঊনআশি বছর বয়সের এক বৃদ্ধ।
-চুপ চুপ একদম চুপ। বুঝেছি বুঝেছি, আপনাকে শাস্তি না দিলে ঠিক হবেন না, এই কে আছিস এইদিকে আয়, তাড়াতাড়ি। একে গায়ে এক বালতি বরফ ঢেলে দিয়ে যা, সে আমাদের সৈন্য বাহিনীর মর্যাদা এবং শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে।
-শৃঙ্খলা নষ্ট করেছি? আমি? দেখুন দেখুন স্যার আপনাদের কোথাও ভুল হয়েছে।
এমন সময় কে জানি হিমশীতল বরফ ঢেলে দিলো বৃদ্ধের সারা শরীরে, কাঁপতে কাঁপতে ঠাণ্ডায় নীল হয়ে গেলো বৃদ্ধ। ঘুম ভাঙল প্রবল ঝাঁকুনিতে, পাশেই তার স্ত্রী জুলেখা, সেই জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছিল কি হয়েছে? হয়েছে কি আপনার এত কাঁপছেন কেন??
ঠাণ্ডায় জমে গেছেন বৃদ্ধ কোন রকম কাঁপতে কাঁপতে বললেন আমার গাঁয়ে কম্বল পেঁচিয়ে দাও খুব শীত খুব শীত, বরফ বরফ উফ বরফ এত ঠাণ্ডা, জুলেখা যত্ন করে কম্বল জড়িয়ে দেয় তার স্বামীকে, ধীরে একটু সু স্থির হয়ে এলে কোমল গলায় জিজ্ঞেস করে জুলেখা সেই দুঃস্বপ্নটা আবার দেখেছেন বুঝি??
-ওরা না মানতেই চায় না আমি যে চাকরী থেকে রিটায়ার্ড করেছি, আমাকে বলে কিনা দুই কিলোমিটার দৌড়াতে, আমি ঊনআশি বছরের বৃদ্ধ মানুষ পারিনা দশ মিনিট হাঁটতে, থাক থাক আর বলতে হবেনা, যখন ঘুমাবেন তখন চাকরী নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না ঠিক আছে?
-তাহলে কি নিয়ে চিন্তা করবো?
-চিন্তা করবেন আমাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে নাতীনাতনী নিয়ে, আমাকে নিয়ে আমাদের সংসার নিয়ে।
-আর সংসার, সংসারের আর কিই বা আছে?
- সবই আছে, যতদিন আপনি আমি আছি ততদিন আমাদের সংসার ও আছে বুঝলেন?
আচ্ছা বলে বৃদ্ধ ছোট একটা নিঃশ্বাস নেয়।
জানলার গ্রিল বেয়ে কীভাবে যেন একটি ঝিঙার লতা বেয়ে উঠেছে, প্রতিদিন জানলা বন্ধ করা হয় তখন নিশ্চয়ই চাপ লাগে ওটার গায়ে, তবু কি করে টিকে আছে ওটা! এরকম কি মানুষের জীবন, সয়ে সয়ে ব্যথায় আর আঘাতের পর আঘাত নিয়েই টিকে থাকে বুঝি।কিন্তু ঐ দুঃস্বপ্নটা ভীষণ ভোগাচ্ছে, এই নিয়ে ছয় বার দেখা হল, খুবি বাজে স্বপ্ন, এরপর পাঁচ দিন কেটে গেলো ভালোই ঐ খারাপ দুঃস্বপ্নটা এলোনা বৃদ্ধের স্বপ্নে, জুলেখাও খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়। আর তারপরই আবার একদিন
- এই এই আপনি এখানে কি করছেন?? আপনি প্রতি পদে পদে আমাদের আইন আমাদের নিয়ম আমাদের শৃঙ্খলা নষ্ট করছেন?
-আবার আমি স্বপ্নে?
-আপনি স্বপ্নে না বাস্তবে? আপনি বৃদ্ধ হয়েছেন বাতাশে? স্বপ্ন আর বাস্তবের পার্থক্য ধরতে পারেন না বোকার হদ্দ কোথাকার! আরে আপনি নিজের গায়ে চিমটি দিন হ্যাঁ এইতো স্বপ্ন মনে হচ্ছে? ব্যথা লাগছে না? এবার বুঝুন স্বপ্নতে কেউ ব্যথা পায়?
-তারমানে এটা বাস্তব?
-হ্যাঁ হ্যাঁ বাস্তব বাস্তব, আপনি কি ভেবেছেন আপনার সাথে আমরা তামাশা করতে বসেছি, উঠুন দাঁড়ান যান প্র্যাকটিস করে নিন আমাদের পরবর্তী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে, উঠুন উঠুন বলছি,বলতে বলতে কি জোরে যে ঝাঁকুনি দিলো লোকটি যে জেগে ওঠার পর ও বৃদ্ধ পুরো এক ঘণ্টা থর থর করে কাঁপলো, পাশেই টেবিলের উপর জগ গ্লাস রাখা, সেটা থেকে পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো, তার স্ত্রী জুলেখা গভীর ঘুমে ছিল তাকে আর বিরক্ত করলো না।

কতক্ষন ঘুমিয়েছিল মনে নেই, শেষ রাতের দিকে আবার স্বপ্নটি দেখলো তবে তেমন কোন আঘাত কিংবা ভয় পেলো না, এবার দেখলো সে একটি রাইফেল পরিস্কার করছে, তার মত অনেকেই তাদের রাইফেল পরিস্কার করছে, বোঝাই যাচ্ছে কোন এক যুদ্ধের প্রস্তুতি, আর কিছু ঘটলো না ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

সারাদিন বৃদ্ধের অস্বাভাবিক চিন্তায় কাটলো, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে ভাবতে গেলে এটা কেবলি একটা দুঃস্বপ্ন মাত্র। কিন্তু তবু মনটা কেমন জানি করছে, পাশের বাড়ি থেকে রহিম সাহেব এসে বেশ কিছুক্ষন গল্প করে গেছেন, তার বয়স বৃদ্ধের থেকে অনেক কম, তাই সে তার দুঃস্বপ্নের কথা বলি বলি করেও শেষ পর্যন্ত আর বললেন না। যখন রাত হল, কিছুতেই তার বিছানায় ঘুমাতে যেতে ইচ্ছে করছিলো না, জুলেখা এসে কপালে হাত রেখে কয়েকবার পরীক্ষা করে গেছে জ্বর এসেছে কিনা, নাহ! আসেনি, তারপর যখন রাত বারোটা বাজলো কিছুতেই আর চোখের পাতা মেলে রাখতে পারছিলনা, তাই বাধ্য হয়েই ঘুমাতে গেলো।।

কানে নানারকম শব্দ আসতে শুরু করলো, সবাই দৌড়াচ্ছে ছুটছে, কেউ কেউ রাইফেল দিয়ে অনবরত গুলি ছুড়ছে, বৃদ্ধ ব্যাকুল হয়ে চারপাশে তাকাচ্ছে, চিৎকার করে জানতে চাইছে, আমি কোথায়? কেউ তো বল এটা কিশের যুদ্ধ? কেউ তো বল আমায়? ওরা কারা? কিশের জন্য এই যুদ্ধ? আমাকে বাঁচাও সরাও আমাকে এখান থেকে, আমি রাইফেল চালাতে ভুলে গেছি, সেই বিশ বছর আগে আমি রাইফেল চালিয়েছি এখন আর সে সব কিছু মনে নেই, আরে আরে আমার গায়ে গুলি লেগে যাবে তো! ওহ না না! আমার হাত! ওহ আমার পেটটা, আমার পেটটা একদম ফুটো করে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলো গুলি, বাঁচাও বাঁচাও! পানি পানি! একটু পানি খাব। আমাকে কেউ একটু পানি দাও, আমি! আমি ঊনআশি বছর বয়সের এক বৃদ্ধ, চাকরী থেকে রিটায়ার্ড করেছি বিশ বছর আগে।

সকালে অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছে জুলেখা, স্বামীকে অনেকদিন পর স্বস্তিতে ঘুমাতে দেখে আর টু শব্দটি ও করেনি, ঝটপট রান্না ঘরে এসে নাস্তা বানিয়ে তবেই ডাকতে গেলো স্বামীকে।

যখন বৃদ্ধের শরীর স্পর্শ করলো, ততক্ষনে দেহটি বরফের মতন ঠাণ্ডা আর ভারী হয়ে গেছে।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৪৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×