somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ রুপকথার রাজকন্যা

১৮ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ নেট

পড়ন্ত বিকেলে আলোর রাজ্যের রাজকন্যা উদাস হয়ে জানালায় মুখ করে বসে কি যেন কি ভাবনায় মন বিষণ্ণ থেকে বিসন্নতায় ডুবে যেতে যেতে লক্ষ্য করেন, একটা প্রজাপ্রতি উড়ে উড়ে রাজকন্যার প্রাসাদের সামনের কিছুটা কাছেই তার অদেখা জঙ্গলটায় উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। কখনো সেটি গাছে গাছে পাতায় পাতায় ভেসে বেড়াচ্ছে, কখনো গাছের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে, কখনো আলোয় আলোয় ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, রাজকন্যা অবাক হয়ে আরও একটা ব্যাপার খেয়াল করলেন যে প্রজাপতির ডানা জ্বলছে নিভছে, এমন প্রজাপতি হয় নাকি! জোনাকির মত!

রাজকন্যা ভাবে, ভাবতে ভাবতে মন খারাপ করে,আহা যদি ঐ জোনাকি প্রজাপ্রতির মতন হতে পারতাম, মাত্র এইটুক দুরত্তের জঙ্গল, কখনো দেখা হয়নি, কখনো গাছের পাতা ছুয়ে দেখা হয়নি, কখনো হেঁটে বেড়ানো হয়নি কাঁচা মাটির উপর পা ফেলে, সেখানে প্রবেশ নিষেধ।
এই বন্দী জীবন থেকে তো যে কোন জীবন ভালো, রাজকন্যা না হয়ে সে মালি হয়ে জন্মাতে পারতো, রাঁধুনি হয়ে জন্মাতে পারতো কিংবা ধোপা হয়ে জন্মালেও মন্দ হতো না। কাপড় কাঁচা নিশ্চয়ই বন্দী জীবনের থেকে ভালো?
সাত রঙা রঙধনু চারপাশ উজ্জ্বল করে গর্ব ভরে ভেসে ওঠে আকাশে। আহা যদি ঐ রঙধনু হওয়া! যদি ঐ মুক্ত আকাশে থাকা যেত মুক্ত মেঘের মতন।

বিষণ্ণ মন আবার বিষণ্ণ হয়, খানিকটা অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে পড়তে চিক চিক করে। সেই অশ্রু দেখে পাখিরা এসে কিচিরমিচির করে রাজকন্যার জানালায়, কাঁচের দেয়ালের ফাঁক গলে উপচে পড়ে রংধনুর সাত রঙ।
কি সুন্দর কি সুন্দর! রাজকন্যা শব্দ করে কাঁদে আর বলে, আমিও মুক্ত হতে চাই তোমাদের মত, তার কান্নার ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে ফিরে আসে। সেই প্রতিধ্বনির সাক্ষী হয় রঙধনু, পাখি আর প্রজাপ্রতি।
প্রজাপতির উড়ে উড়ে ভেসে ভেসে রাজকন্যার অশ্রু ভেজা গাল ছুয়ে যেতে যেতে ইশারায় ডাকে।
কীভাবে মুক্ত হওয়া যায়! প্রহরীরা নিশ্চয়ই দরজার ওপাশে পাহারায়, প্রজাপতি পথ দেখায়, কাঁচের জানালা ভেদ করে আলো ছড়িয়ে পড়ে দেয়ালে দেয়ালে, খালি পায়ে জানালার ফাঁক গলে যখন জীবনের প্রথম কম্পিত পা মাটি স্পর্শ করে রাজকন্যার ঘন জঙ্গল থেকে তখন ভেসে আসে দিশেহারা সুর।

দিগবেদিক আলোর রাজ্যের রাজকন্যা কখনো দৌড়ায়, কখনো থমকে দাঁড়ায়, কখনো অবাক হয়, কি এক রহস্য চারপাশে! কি এক অপার মায়া। মরা পাতা, পায়ের নীচে খচখচ মড়মড় শব্দ করে, সর সর করে সরে যায় সাপ।
ঝিরঝিরে বাতাস আলোড়ন তোলে গাছের শাখায় প্রশাখায়। রাজকন্যার চোখে ঘোর।
প্রজাপতিটা হঠাৎ মিলিয়ে যায় বাতাসে, সেখানে উড়ন্ত অন্ধকার ঘুরে ঘুরে ধেয়ে আসে রাজকন্যার দিকে তবু সে নির্ভয় অবিচল আর বিস্ময়ে প্রকৃতি দেখে।

প্রকৃতি অন্ধকারের গোলকে ঢেকে ফেলে রাজকন্যার শ্বেত শুভ্র হাত।
পলকের ছাই বর্ণ ধারন করে পৃথিবী,বাতাসের ঘূর্ণি বাড়তে থাকে তুমুল বেগে, গাছেরা যেন হঠাৎ প্রান ফিরে পায়, তাদের প্রত্যেকের দুটি করে হাত গজিয়েছে মানুষের মত, সেই হাত দিয়ে চেপে ধরে রাজকন্যার কণ্ঠনালী,
এই বুঝি প্রান যায় যায় করতে করতে শেষ মুহূর্তে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে আসতে দেখে এক বিন্দু আলো।
মাত্র কয়েক হাত দুরত্তে, সেটিও ঘূর্ণি খাচ্ছে, অন্ধকারের আঘাতে সরে সরে যেতে যেতে ফিরে আসতে আসতে কি এক প্রচণ্ড ঝড়। আকাশ কোথায়! আকাশ যেন নাই হয়ে গেছে এই লড়াইয়ের মধ্যে।

আলোর বিন্দুর দিকে সমস্ত প্রান শক্তি একত্র করে রাজকন্যা।
আলোর স্পর্শে ঝড় থেমে যায়। রাজকন্যা দুর্বল পায়ে উঠে দাঁড়ায় অন্ধকারের ছিটে ফোটাও কোথাও নেই আর শুধু কপালে লেগে যাওয়া কালো দাগটা ছাড়া।

রুপকথার রাজকন্যা উৎসর্গ করা হলো তাদের কজনকে, যারা আমাকে নতুন গল্প লিখেন বলে উৎসাহিত করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×