সে অত্যন্ত শঙ্কিত ভীতু কিছুটা ঘোরের ভেতর তখনো, অল্প কয়দিনে ওজন পাঁচ কেজি লুজ হয়েছে, বয়স ষাট ছুই ছুই, আমার দিকে তাকিয়ে বললেন আর বোলোনা ইতি ভেতরে কি গেঞ্জাম হুড়োহুড়ি চিল্লাচিল্লি, আমি যে রোগী একটা, সেদিকে ওদের খেয়ালই নেই, হাসছে , গান গাইছে , কথা বলছে,
আমি বললাম ভেতরে কারা ডাক্তারেরা?
নাআআআআআ, ওরা ওরা, ঐ যে থাকেনা ওয়ার্ড বয় ক্লিনার নার্স এইসব, ওরা অনেক, আর হইচই চিৎকার, আমি তো একমনে আয়াতুল কুরছি পড়ছি ওদের জ্বালায় পড়তেও পারছিনা শুরুতেই গোলমাল পাকিয়ে যাচ্ছিলো বলবো আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু বলতেছি আল্লাহুমা ছাল্লে আলা মোহাম্মাদ, ওরা এত কথা বলে, তখনো ডাক্তার আসেনি।
আমি তো ভয়ে আধমরা একবার ভাবলাম একটা ধমক দিয়ে বলি থামো এতো জোরে কথা বলছ কেন? এত নয়েজ করছ যে তোমাদের এখানে তো থাকতেই পারছি না ইচ্ছে করছে এখান থেকে উঠে চলে যাই।
আগ্রহ নিয়ে উনাকে বললাম বলছিলেন? উনি মুখ বেজার করে বললেন, নাআআআআআ কি করে বলবো আমি তো হাতটাই উঁচু করতে পারছিলাম না কি একটা ইঞ্জেকশন দিয়েছিল মনে হচ্ছিল সারা শরীর অবশ, আর মরা মানুষের মতন দুই টুকরা সাদা কাপড় গায়ের উপর, নীচে এক টুকরা উপড়ে এক টুকরা।তখন কেমন লাগে বলতো?
কি ইকজেকশন দিয়েছিল অ্যানেসথেটিক ?
হবে হয়তো এরকম কোন কিছু আবার নাও হতে পারে কারণ আবার আমাকে একটা রুমে ঢুকিয়েছিল কেমন বেল্ট বেল্ট চারদিকে ওটায় ঢোকার পর আর কিছু মনে নেই হতে পারো ওটা একটা অ্যানেসথেটিক রুম।
সে আরও জানালো যে তার পায়ের রগ কেটে নিয়ে ওটা বুকে লাগিয়ে দিয়েছে একদম উপর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত।
আমি বললাম রগ কেটে ফেলেছে! তাহলে আপনি হাঁটবেন কীভাবে, পঞ্চাশোর্ধ্ব তার অতি রূপবতী ওয়াইফ বললেন যে মানুষের পা এ দুইটা রগ আল্লাহ্ এক্সট্রা দিয়ে দিয়েছেন, যেন জরুরী প্রয়োজনে কেটে নিয়ে শরীরের কোনখানে লাগানোর দরকার পড়লে কেটে নিতে পারে।
উনি আমার অফিসের জী এম, সে তার জীবনের সবথেকে আতঙ্কগ্রস্ত একটি সময়ের বর্ণনা দিচ্ছিলেন ওপেন হার্ট সার্জারি অপারেশন এবং সে অত্যন্ত ভীতু মানুষ ।
উনার কথা শুনতে শুনতে মাথায় এলো যে এভাবে একটা মৃত মানুষ যদি আবার জীবিত হন এবং তার আত্মীয় স্বজনদের কাছে ফিরে এসে সবাইকে তার দুর্বিষহ সেই মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা করতে পারতেন!
কিভাবে সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন? তখন তার কি অনুভূতি হয়েছিলো? যখন তাকে খাটিয়ায় শুইয়ে অন্যান্যরা জানাজা পড়ছিলেন কিংবা তাকে কবরের উদ্দেশে নিয়ে যাচ্ছিলেন? কীভাবে তাকে কবর দেয়া হয়েছে ?কবর দেওয়ার পর তার কেমন লেগেছিল? যখন তার পেট ফুলে উঠেছিল যখন তার শরীরের মাংস পচা শুরু করল? পেটের নাড়িভুঁড়ি পচে যখন নাক মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছিলো তখন তার ঘৃণা লাগেনি? কবরের একেকটি অন্ধকার রাত কতটা ভয়াবহ ছিল? আল্লাহ্ মাবুদ।
আমার কলিগ বান্ধবী অনামিকা অবুঝের মতন আমাকে বলে আচ্ছা হানি মানুষ একসময় মরে যাবে মরে যায় তাহলে মানুষ কেন এত হিংসা করে কেন এত শত্রুতা করে কেন এত রাগ জিদ মারামারি হানাহানি লোভ ক্ষতি ?
বললাম, অন্য মানুষের কথা বাদ দাও আপন মানুষই তো কত অমন করে তবে এটাই জীবনের বৈচিত্র্য, কেউ ভালো কাজ করবে, কেউ খারাপটা, কেউ ভালবাসবে কেউ ঘৃণা করবে কেউ উপকার তো কেউ ক্ষতি পৃথিবীর আলো অন্ধকারের মতন, অমাবস্যা পূর্ণিমার মতন সত্য আর মিথ্যার মতন বিচিত্রতা মানুষের আচরনে থাকবেই এই হচ্ছে পৃথিবী এই হচ্ছে জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০৬