somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও সামাজিক চেতনার মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে যে সংকর!

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন মানুষের চরিত্র ও তার চিন্তা চেতনা কেমন হবে সেটা নির্ভর করে তিনটি জিনিসের উপর। প্রথমত তার ধর্ম, দ্বিতীয়ত তার সামাজিক চেতনা এবং সর্বশেষ তার সংস্কৃতির উপর। আমি ব্যক্তিগত ভাবে যা দেখেছি সেটা হলো, শিশু যখন বড় হয় তখন ধর্মীয় চেতনার আলোকে ভালো এবং খারাপের ভেতর পার্থক্য করতে শিখে। শিশু যখন ছোট থাকে তখনই তার মাথার ভেতরে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিষয়টা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাকে বেহেস্ত দোজখ সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হয়। যার ফলে বাচ্চারা ছোট থাকতে খুবই ধর্মভীরু হয়। যে কোন খারাপ কাজ করতে গেলে তারা বলে, এটা করলে আল্লাহ শাস্তি দিবে।

সময় বাড়ার সাথে সাথে এবং সামাজিক চালচলন বৃদ্ধি পেতে থাকলে এই ধারনাগুলোর প্রভাব কিছু ম্লান হতে থাকে। কারণ সামাজিক আচার অনুষ্ঠান, মানুষের চালচলন তখন ধর্মের চাইতেও বেশি বিস্তৃত হতে থাকে। ফলে তুলনামূলক ভাবে তখন ধর্মীয় অনুভূতিগুলো এতোটা প্রবল হয় না। খারাপ কাজ করতে গেলে মনে হয় বাবা যদি দেখতে পায় তাহলে খবর আছে। কিংবা এরচেয়েও খারাপ কাজের ক্ষেত্রে সামাজিক অনুশাসনের ভয় জাগে মনে। সৃষ্টিকর্তার ভয় অন্তরে ব্যাপ্ত থাকলেও শাস্তির বিষয়টা পরকালে বলে অনেকেই এটাকে গ্রাহ্য করে না।

এবার আসি আমাদের সাংস্কৃতিক বিষয়ে। যদিও আমার মতে ধর্মও এক ধরনের সংস্কৃতি বা সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু সংস্কৃতির একটি ব্যাপকতর অর্থ থাকলেও প্রচলিত অর্থে আমরা সাংস্কৃতি বলতে এর কিয়দংশই বুঝতে পারি। যার অনেকটা জুড়ে আছে মিডিয়া। ছোটবেলায় যখন সিনেমা নাটকে প্রেম ভালোবাসার বৈধতা দেখেছি তখন অবশ্য মানুষিক ভাবে এর প্রতি আমরা কিছুটা সমর্থনও দিয়েছি। যে বাবা নিজের মেয়েকে অন্য ছেলের সাথে মিশতে বারণ করে সেও সিনেমাতে নায়িকার বিরহ দেখে অশ্রু বিসর্জন করে।

প্রেম পবিত্র, স্বর্গ থেকে আসে এই সব ব্যাপারগুলো আমাদের মাথায় ঢুকতেও সময় লাগে না। আমার মনে আছে, একটা সিনেমায় দেখেছিলাম নায়কের সাথে নায়িকার শারীরিক সম্পর্কের জের ধরে নায়িকা গর্ভবতী হলে নায়ক সগর্বে বলে উঠে, “এটাকে অবৈধ বলো না, এটা আমাদের ভালোবাসার পবিত্র ফসল”। আমরা দেখেছি, আফসোস করেছি। তবে এই সিনেমায় আমাদের সমর্থন থাকার মানে দাঁড়াবে জারজ সন্তানকে অন্তর থেকে সাপোর্ট করা। যদিও সামাজিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এটা পুরোপুরি অবৈধ।

এতোটুকু আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের উপর ধর্মীয়, সামাজিক এবং সংস্কৃতির প্রভাবটা বুঝানো। যাহোক, মূল আলোচনায় আসি। আমি আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করছি বিগত দুই’এক বছর থেকে জাতীয় দিবসগুলোর বায়রে অন্য দিবসগুলো উদযাপনের ধুম পড়ে গেছে। যেমন পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস (আগে পিছে শ্লীল-অশ্লীল আরও অনেক দিবস আছে), কিংবা বৈশাখ উদযাপনে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইত্যাদি। আমরা কিন্তু ভালো করেই জানি যে, এগুলো ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনুচিত। তারপরেও অনেক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের ছেলেমেয়েরা এগুলো উদযাপন করে আসছে।

এসব দিবস নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনটি শ্রেণী পাওয়া যাবে। প্রথম শ্রেণীতে থাকবে যারা মহা-উৎসাহে দিবসগুলো পালন করবে। এটম বোমার আঘাতেও তাদের উৎসাহ দমিয়ে রাখা যাবে না। দ্বিতীয় থাকবে যারা এগুলো পছন্দ করবে না। এবং শেষে হলো হাইব্রিড জাতি, যারা এই দুয়ের মাঝামাঝি থাকবে। মানে হলো তারা বিষয়গুলো নিয়ে কোন চিন্তা ভাবনা করবে না, যেতে পারলে আনন্দ করবে, না যেতে পারলে হয়তো খুব বেশি মন খারাপ করবে না। আমি চিন্তিত এই বিশেষ জাতিটার জন্য, কীভাবে এদের সৃষ্টি হলো তাই নিয়ে।

আমরা দেখে দেখে অনেক কিছু শিখি। যেকোনো কাজে সাপোর্ট পেলে বা অন্যকে করতে দেখলে আমাদের উৎসাহ দ্বিগুণ হয়ে যায়। কেউ হয়তো পহেলা বৈশাখে অনেক বেশি আমোদ করতেছে সেটা দেখে সেও উৎসাহিত হয়ে যাবে। ভালোবাসা দিবসে যখন একগাদা ছেলে মেয়ে অবাধে মিশতেছে সেটা দেখে তার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। তার ভেতরে যাবতীয় ভালো চেতনা থাকলেও অন্যকে দেখে নিজের চেতনা বিসর্জন দিতে তার সময় লাগে না। এবং আমার বিশ্বাস এই ক্রমবর্ধমান অশ্লীল সংস্কৃতি উদযাপনের নেপথ্যে এদের অবদানটাই সবচেয়ে বেশি। এদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথেই একটি অশ্লীলতাপূর্ণ জাতির উদ্ভব হবে।

ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে ধর্মীয় দোহায় হয়তো অন্যদের উপর দেওয়া যায় না। তবে সামাজিক এবং নৈতিক দিক থেকে দেখলে এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। আজ অথবা কাল পথে ঘাটে কিংবা বিনোদন স্পটগুলোতে যে প্রকারে অশ্লীলতার চর্চা হবে সেটা হয়তো আমাদের কারও কাম্য নয়। কারণ যারা এসব করবে তারা হয়তো আমাদেরই কারও পরিজন। আমরা নিজের পরিজন সম্পর্কে কখনোই এসব কামনা করবো না। শেষ করার আগে প্রজন্মের শালীনতার পরিবর্তন বুঝাতে একটি কৌতুক বলছি-

২০০০ সালের দিকে মা এবং মেয়ের একটি কথোপকথন:
মেয়ে – মা, আমি আজ জিন্স পরে বায়রে যাই?
মা – না সোনা, জিন্স পরলে লোকে তোমাকে খারাপ বলবে।
হয়তো ২০২০ সালে এমন হবে-
মেয়ে – মা আমি শর্টস পরে বায়রে যাই?
মা – ঠিক আছে মা, অন্তত কিছুতো একটা পরে যাও।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৪৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×