বাঙ্গালী মুসলিমদের জোব্বার প্রতি বিশেষ ধরনের একটা দুর্বলতা আছে। কোন মূর্খ যদি সুন্দর জোব্বা এবং টুপি পড়ে গ্রামের কোন মসজিদে গিয়ে হাজির হয় তাহলে ইমাম সাহেব নির্দ্বিধায় তার জায়গা ছেড়ে দিয়ে সেই জোব্বাধারীকে ইমাম হিসাবে দাঁড় করিয়ে দিবে। অথচ অন্য কোন ছেলে যদি ইসলামিক যথার্থ জ্ঞান নিয়ে সাধারণ শার্ট কিংবা টিশার্ট পরে নামাজ পড়তে যায় তাহলে তাকে পোশাকের জন্য নানা রকম তিরস্কারের শিকার হতে হয়। এর মানে এই দাঁড়াচ্ছে যে কারও মুসলিম এবং মুত্তাকী হওয়ার মানদণ্ড অনেকটা জোব্বার উপরেও নির্ভর করে।
কিন্তু সত্যিকার অর্থে যারা জোব্বাধারী তাঁদের অনেকের আচরণ দেখলে এই সব জোব্বাপ্রেমিদের মাথায় বজ্রপাত হওয়ার মতো অনুভূতি হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের যেসব শেখরা অঢেল অর্থ সম্পত্তির মালিক তাঁরা সুন্দর জোব্বা পাগড়ি পরে সাথে অর্ধ-নগ্ন কিংবা আংশিক পোশাকে আবৃত মেয়ে পাশে নিয়ে চলাচল করে। জোব্বা পরে পার্টিতে গিয়ে নাচে, কিংবা জোব্বা পরে বাদ্যযন্ত্র বাজায়। যার কোনটাই ইসলাম কর্তৃক স্বীকৃত না।
আসলে পোশাকে কারও ধর্মীয় আনুগত্য প্রকাশ পায় না। আমরা যদিও পাঞ্জাবী কে ইসলামিক পোশাক হিসাবে মনে করি কিন্তু এটাতে অনেক বড় ধরনের একটা ভুল আছে আছে। আমার জানা মতে ইসলাম ধর্মে নির্দিষ্ট কোন পোশাক কে ইসলামিক পোশাক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়নি। ইসলামিক পোশাক হলো ঢিলেঢালা পোশাক, যাতে কারও নামাজ পড়তে কোন প্রকার ঝামেলা না হয়। আপনি যদি কোন টাইট পাঞ্জাবী পড়ে নামাজে দাঁড়ান এবং এতে করে আপনার রুকু সিজদা করতে সমস্যা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে পাঞ্জাবীও ইসলামিক পোশাক হিসাবে বিবেচিত হবে না।
মহানবী (সাঃ) মক্কায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেটা ছিলো মরুভূমির দেশ যেখানে দিনে অসহ্য গরম এবং রাতে প্রচণ্ড শীত থাকতো। তাই দিনে মরুভূমির বালি যাতে শরীর ও চোখে মুখে লাগতে না পারে এবং রাতে শীতের কারণে যেন কষ্ট করতে না হয় তার জন্যই জোব্বা এবং পাগড়ির প্রচলন ছিলো। রাসুল (সাঃ) যদি মক্কায় জন্মগ্রহণ না করে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতেন তাহলে তিনি বাংলাদেশের সাথে মানানসই পোশাকই পরতেন। অবশ্যই তখন গলা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত আবৃত জোব্বা পড়তেন না।
আমাদের অনেক গোঁড়া মুসলিমদের কিছু কর্মকাণ্ড আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগে। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞানের অভাবে তাঁরা অনেক ধরণের মুর্খামি করে। যেমন রাসুলের যুগে যে জিনিস ছিলো না তাঁরা তা ব্যবহার করবে না। যেমন মসজিদে মাইক ব্যবহারেও অনেক হুজুরের আপত্তি দেখেছি আমি। ইসলাম সব সময় একটি আধুনিক ধর্ম। রাসুল (সাঃ) যে যুগে ইসলাম নিয়ে আসেন তখন ইসলাম ছিলো একেবারে স্ট্যান্ডার্ড। আধুনিক রণকৌশল, পররাষ্ট্রনীতি, সংবিধান, রাষ্ট্রপরিচালনার সিস্টেম সব ইসলাম থেকেই এসেছে। আপনারা জানেন কিনা জানিনা, পৃথিবীর সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান হলো মদিনার সনদ।
রাসুল (সাঃ) যদি সেই যুগে জন্মগ্রহণ না করে বর্তমান যুগে জন্মগ্রহণ করতেন তাহলে তাঁর কাছে থাকতো সব আধুনিক প্রযুক্তি। আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম, তাঁর সাহাবীরা থাকতেন বড় বড় রাষ্ট্রীয় নেতাগণ। তিনি থাকতেন বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত এবং ক্ষমতাধর মানুষ। ইসলাম এমন একটা ধর্ম যেখানে সব সময় আধুনিকতা থাকে। গোঁড়ামি ইসলামের সাথে মানানসই কোন বিষয় না। ইসলাম সহজ এবং সুন্দর ধর্ম এবং সর্বকালের মানুষের জীবনযাত্রার সাথে মানানসই। ইসলামের সঠিক জ্ঞান আপনাকে ১৪০০ বছর আগের যুগে ফিরিয়ে দিবে না। বরং বর্তমান যুগে সঠিক এবং সুন্দর জীবন যাপনের ধারণা দিবে। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৩৮