সন্ত্রাসীরা আস্তানা গেড়েছে গহীন জঙ্গলে। এমন তথ্য এল একটি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর টেবিলে। স্মার্ট স্বরাষ্টমন্ত্রী তখন নিজের স্মার্টফোনে ক্লাশ অফ ক্লাউনস নামের একটি গেম খেলতে ব্যস্ত।
বিরক্ত ভঙ্গিতে তিনি পিএসকে বললেন : এসব কি?
: গোয়েন্দা রিপোর্ট স্যার। দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যৌথ প্রতিবেদন।
: কী বিষয়? কী বৃত্তান্ত?
: স্যার, ফাইলের ওপর লাল কালিতে Confidential লেখা। আমরা কেউই পড়িনি স্যার।
: ধুর, ছাতার মাথা, আমি এসবের কিছু বুঝি নাকি? তাছাড়া, তথ্য হলো পরমাণু বোমার চেয়েও শক্তিশালী জিনিস। এসব নিয়ে নাড়াঘাটা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ওটা বরং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়ে দিন।
: জ্বি স্যার। আপনি যদি নোটটা দিয়ে দিতেন...
: ধুর, বা... নোটটাও আমাকে লিখতে হবে।
বিরক্তি নিয়ে গোপন তথ্য সংবলিত সেই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ফাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছোট্ট করে নোট দিলেন- স্পর্শকাতর তথ্য বিধায় প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য পাঠানো হলো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই দেশ ডিজিটাল হলেও ফাইল চালাচালি হয় অ্যানালগ মাধ্যমে। অতএব, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ফাইলের স্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেল স্পর্শকাতর (!) গোয়েন্দা প্রতিবেদন।
দীর্ঘ একমাস পর যখন প্রধানমন্ত্রী ফাইল পড়লেন তার ভ্রূ উঠলো কপালে। অনেক কষ্টে তিনি রাগ সংবরণ করে ছোট্ট নোট দিয়ে ফাইল ফেরত পাঠালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর টেবিলে। সাথে নোট : তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
ফাইল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর টেবিলে এল এবং তিনি ফাইল দর্শন করলেন আরও একমাস বাদে। এবার ব্যবস্থা নেবার পালা।
গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বৈঠক করে জঙ্গলে দুজন চৌকষ গোয়েন্দা পাঠানো হলো তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য।
সন্ত্রাসীরা ততদিনে জঙ্গলের আস্তানা ছেড়ে লোকালয়ে। তাদের ডেরায় তখন বাসা বেঁধেছে একটা ভালুক।
গোয়েন্দারা সেখানে যেতেই তাদের ওপর আক্রমণ করলো সেই ভালুক।
একজন কোনরকমে গাছে উঠে নিজেকে বাঁচালেও অপরজনকে নিয়ে ভালুক যাচ্ছেতাই ভাবে খেলতে লাগলো।
গাছের ওপর থেকে সেই গোয়েন্দা সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মোবাইলে ফোন দিল। কারণ ব্যাপারটা স্বয়ং মন্ত্রী মহোদয় মনিটর করছেন।
: স্যার, সন্ত্রাসী নাই। ভাল্লুক অ্যাটাক মারছে। আমার পার্টনার মনে হয় বাইচ্চ্যা নাই।
: বাইচ্চ্যা নাই মানে কী? তথ্য নিশ্চিত করো সে জীবিত না মৃত। আহাম্মক।
গাছের ওপর থেকে সে নিশ্চিত হতে পারছেনা। এদিকে নিচে ভালুক তখনও খেলছে। উপায় না দেখে সে রিভলভার বের করে নিচে পার্টনারের মাথা লক্ষ্য করে পরপর দুটো গুলি করলো।
কপাল ফুটো করে গুলি একবারে ভালুকের থাবায় থাকা গোয়েন্দার মগজে। গুলির শব্দে ভয় পেয়ে গোয়েন্দার নিথর দেহ মাটিতে ফেলে পালালো ভালুক।
গাছে থাকা গোয়েন্দা আবার ফোন দিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
: স্যার, পার্টনার মৃত। রিপিট করছি, আমার পার্টনার মৃত। ভালুকও গন।
তথ্য নিশ্চিত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রুত সংবাদ সম্মেলনের ব্যবস্থা করলেন। হাসিমুখে তিনি সাংবাদিকদের জানালেন, দেশে আই মিন জঙ্গলে কোন সন্ত্রাসী নাই। একটা ভালুক ছিল। সেটাকেও তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে, ভালুকের আক্রমণে আমাদের একজন গোয়েন্দা নিহত হয়েছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ২:৪৯