somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শান্তি পুরস্কার...কিছু সিরিয়াস কথা

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নোবেল শান্তি পুরস্কার কেন দেওয়া হয় তা আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে বোধগম্য হয় না। আজতক যত পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই মনে হয় অযৌক্তিক এবং অপ্রত্যাশিত। অনেকগুলোর মাঝে দুয়েকটা খুব সহজেই বলে দেয়া যায়…যেমন, হেনরি কিসিঞ্জার। তাকে কেন দেওয়া হয়েছিল? পাকিস্তানীরা আমাদের ইচ্ছে মতো মারলো, ঘরবাড়ী পোড়ালো, কত নারীর সম্ভ্রম কেড়ে নিলো, উদ্বাস্তু করে শরণার্থী বানালো কোটি মানুষকে। আলে-বিলে, পথের পাশে বাঙালীর পড়ে থাকা লাশ কুকুরে খেলো। অথচ আমেরিকায় বসে মার্কিন নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান হেনরি কিসিঞ্জার পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে তাদের অস্ত্র পাঠিয়ে সেই বিভীষিকার রাজত্বকে পরম উৎসাহে সমর্থন দিলো। আমেরিকান শাসকরা কখনো পরাজয় মেনে নিতে পারে না কারন তাদের ইজ্জতের টিকিটা বেশী মত্রায় বড়। আর সে কারনেই তাঁরা আরও বেশী মত্রায় প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে, যেটা আরও ভয়ংকর! কারন তখন তাদের ষড়যন্ত্র চলে বদ্ধ ঘরে, যে কারনে কৌশল আনুধাবন করা কঠিন ছিল। সবই হয় অন্ধকারে।

বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের পরাজয় মানে আমেরিকার পরাজয়, ego-টা যেহেতু প্রচণ্ড রকম তেতিয়ে থাকে। ব্যক্তি মুজিবের কাছেও পরাজয় বটে! ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মতো নেতা যখন বংগবন্ধু শেখ মুজিবকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করে, তখন কিসিঞ্জারের প্রতিহিংসার মাত্রা বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তক্কে তক্কে থেকেছে কখন উড়িয়ে দেওয়া যায়। একদিন দিলও উড়িয়ে মুজিবকে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাকেও। যেমন উড়িয়ে দিয়েছিল চিলির সাল্ভাদর আলেন্দেকে ।

এই কিসিঞ্জার ভিয়েতনামের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। পেরে উঠবে কি করে, ভিয়েতনামীরা যুদ্ধ করেছে বছরের পর বছর। প্রায় দুই দশক যুদ্ধ করে করে ইস্পাতের মতো কঠিন হয়ে গেছে যাদের চিন্তা চেতনা, কে পারে তাদের হারাতে! মার খেয়ে দিক শুন্য হয়ে অবশেষে ‘প্যারিস চুক্তি’ করে আমেরিকা তার ইজ্জত বাঁচালো, যার নাম দিল শান্তি চুক্তি। আর সেই শান্তি চুক্তির ওপর ভিত্তি করে কিসিঞ্জারকে দেয়া হলো ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’। কি ভয়াবহ রসিকতা! তার এই শান্তি পুরস্কারের নিচে কত লক্ষ বনি আদমের লাশ চাপা পড়ে আছে কেউ দেখলো না! কত লক্ষ মানুষের জীবন-সংসার শ্মশানে পরিণত হয়েছে, কেউ দেখেনি! তাকে যখন শান্তি পুরস্কার দেয়া হয় তখন ফিলিস্তিনিদের হত্যা এবং বাস্তুহারার প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে। এই হলো একটার হিসেব।

বারাক ওবামাকে দেয়া শান্তি পুরস্কার স্বয়ং ওবামাকেই বিস্মিত করেছে। বিশ্ববাসীর কথা বাদই দিলাম। তাকে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছিলো সম্ভবতঃ লিবিয়া আর সিরিয়াকে ধুলিস্যাত করার কারনে। লিবিয়ার ধ্বংসযজ্ঞ সম্ভবতঃ প্রাইজ কমিটিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল যেন এই ব্যক্তিই পাড়বে সিরিয়াকে শায়েস্তা করতে। এবং হয়েছিলও তাই। পুরস্কার পেয়ে ৩/৪ বছরের মাথায় সিরিয়ার দালানকোঠা, মাটি আর মানুষ একাকার করে দিয়েছে। সব-থাকা মানুষেরা একদিন সব হারিয়ে পশুর পালের মতো দেশ থেকে বিতারিত হতে থাকলো। জলে কুমির দাঙ্গায় বাঘের মতো তাঁরা দিশাহীন সাগরে ভেসে ভেসে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলো। আয়েলান কুর্দির লাশ বিশ্ববাসীকে শুধু কাঁদালোই না, একটা ঝাকুনি দিয়ে বুঝিয়ে দিলো সামনের দিনগুলো কেমন যাবে। ওড়াও তো মানুষ ছিলো! ওবামার ঐ পুরস্কারের নিচে আয়েলান কুর্দির লাশ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। সেটা ওবামাও জানে।

১৯৯১ সালে অং সান স্যু কি-কে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হলো অহিংস আন্দোলন আর মানবাধিকারের জন্য। যখন তাকে পুরস্কারটি দেয়া হয় তখন সারা বিশ্বের সঙ্গে আমিও খুশি হয়েছিলাম এই ভেবে যে পুরস্কারটি হয়তো ঠিক জায়গাতে দেওয়া হয়েছে।
অহিংস আর মানবাধিকার আন্দোলনের সেই নেত্রি এখন বার্মার (মায়ানমার) ক্ষমতার অংশীদার। অথচ তার দেশের সরকার এখন নির্বিচারে এবং নৃশংসভাবে রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে। বিতারিত করছে তাদের ভুমি থেকে। তিনি নারী হয়ে নারীদের উপর পাশবিক অত্যাচার শীতল নয়নে দেখছেন। শান্তি পুরস্কারের ধ্বজাধারী স্যু কি এখন নির্বিকার! সম্প্রতি তিনি রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচারের কথা বলতে যেয়ে বলেছেন, বর্মী বাহিনী আইনানুগ কাজ করছে। অহিংস মানবী এখন সহিংস হয়ে উঠেছেন। তিনি মিলিটারিদের মতো মনে করছেন যে রোহিঙ্গারা বার্মার কেউ নয়, তাঁরা বহিরাগত। তাহলে তাঁরা এলো কোত্থেকে? তাঁরা কি মানুষ নয়? তাদের কোন মানবিক অধিকার নেই? এই যেমন আপনার আমার মতো বেঁচে থাকার? শান্তি পুরস্কারে ভূষিত স্যু কি চাইলেই পারতেন এই অমানবিক অধঃপতন রুখতে। কিন্তু তিনি অহিংস হতে চেয়েছেন শুধু বার্মিজদের বেলায়, মানবাধিকার বলতে বুঝেছেন শুধু বার্মিজদের অধিকার। যে নেতা নিজের দেশ ছাপিয়ে চিন্তা ভাবনায় বিশ্বের পর্যায়ে যেতে পারেন না, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষ ভাবতে পারেন না, তাকে কোন বিচারে নোবেল শান্তি পুরস্কারের মতো বিশ্ব শান্তির পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে? অং সান স্যু কি কোন অবস্থাতেই জাতীয় এবং ধর্মীয় অবস্থানকে ছাপিয়ে উঠতে পারেননি। অর্থাৎ রোহিঙ্গারা বর্মী নয়, বৌদ্ধও নয়! সুতরাং তাদের অধিকার থাকে কি করে! অথচ ওরা ওদের ভুমিতে বসবাস করছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। অহিংস, শান্ত অচঞ্চল নেতার এ কেমন স্থলন, এ কেমন সঙ্কীর্ণতা! ঔপনিবেশিক শক্তিই হোক আর মিলিটারি জুন্টাই হোক, পঞ্চাশ একশ’ বছর পর চুষে চিপরে খেয়ে এমনিই একদিন ওরা ক্ষমতা ছেড়ে চলে যায়। অং সান অহিংস থাকতে যেয়ে প্রায় তিরিশ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন অন্তরিন অবস্থায়, তিরিশ বছরে মিলিটারি জুন্টা দেশটাকে লুটে পুটে খেয়েছে, তেমনি তিনশ’ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। আর তিনি বা তার আন্দোলন মিলিটারি ইন্সটিটিউটকে খুব একটা নাড়াতে পারে নি বলেই তাদের ক্ষমতার ভাগিদার করতে হয়েছে।

এই সব শান্তি পুরস্কারগুলোকে বাতিল এবং প্রত্যাহার করা উচিত। কারন এসবের ক্ষেত্রে ব্যক্তি নির্বাচন ভুল ছিল। শান্তি পুরস্কারের নামে এই সব রগড় করাও বন্ধ করা উচিত। বরং যুগের পর যুগ তৃতীয় বিশ্বের মানুষের উপর যত অত্যাচার অবিচার হয়েছে, নিজ ভুমি থেকে উতখাত করা হয়েছে, তার হিসেব নিকেশ করে বিচারের বন্দোবস্ত করা উচিত।

এই সব শান্তি পুরস্কার যারা দেয় তাদের মতলবটা আমরা ভালই বুঝি।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×