ভূমিকা : যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার চলছে । একের পর এক রায় আসছে । ইতিমধ্যে দুটি রায় কার্যকরও হয়ে গেছে । মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর পাশাপাশি আরও চারটি অভিযোগে তাঁর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড বহাল রয়েছে। তবে একটি অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় রাজনীতিতে বহু বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দেওয়া সাকা চৌধুরী ১৯৭৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ছয়বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তবে তাঁর আচরণ মোটেই আইনপ্রণেতাসুলভ ছিল না বলে অভিযোগ আছে। মুসলিম লীগ থেকে রাজনীতি শুরু করেন, পরে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনামলে তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
সাকা চৌধুরী ১৯৭৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ছয়বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তবে তাঁর আচরণ মোটেই আইনপ্রণেতাসুলভ ছিল না বলে অভিযোগ আছে। মুসলিম লীগ থেকে রাজনীতি শুরু করেন, পরে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনামলে তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। প্রায় চার দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন, তারপরও বারবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন মূলত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে ভরা কথার জন্য।
অপরাধ সমুহ :
মুক্তিযুদ্ধকালে সাকা চৌধুরী কাজ করতেন পাকিস্তানি দখলদার সেনাদের সহযোগী হিসেবে। তাঁর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন কনভেনশন মুসলিম লীগের সভাপতি ও পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার। ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ফজলুল কাদেরের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার অন্যতম অংশীদার ছিলেন তাঁর ছেলে সাকা চৌধুরী। বাবার নির্দেশ পালন করার জন্য একাত্তরের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহকে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় হত্যা করেন। এটিসহ চারটি অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এর প্রতিটিতে ফাঁসি বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
রায় সমুহ :
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গতকাল বুধবার সাকা চৌধুরীর আপিলের এই রায় ঘোষণা করেন। এ নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের পঞ্চম মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করলেন আপিল বিভাগ।
* মধ্য গহিরা গণহত্যা
* নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা
* জগৎমল্লপাড়া গণহত্যা
* সুলতানপুর বণিকপাড়ায় গণহত্যা
* ঊনসত্তরপাড়ায় গণহত্যা
* সতীশ চন্দ্র পালিতকে হত্যা
* মোজাফফর ও আলমগীরকে হত্যা
* নিজামউদ্দিনকে নির্যাতন
* সালেহউদ্দিনকে নির্যাতন
ট্রাইব্যুনাল আপিল বিভাগ রায় সমূহ ...
২০ বছর ২০ বছর
ফাঁসি ফাঁসি
২০ বছর ২০ বছর
ফাঁসি ফাঁসি
ফাঁসি ফাঁসি
২০ বছর খালাস
ফাঁসি ফাঁসি
৫ বছর ৫ বছর
৫ বছর ৫ বছর
পরিবার কি বলে :
রায়ের পর সাকা চৌধুরীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করব। আশা করি, রিভিউয়ে এই সাজা থেকে মুক্তি পাব।’
খন্দকার মাহবুব হোসেন দাবি করেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যদি একাত্তরে রাউজানে এত বড় অপরাধ করতেন, তাহলে তিনি বারবার একই এলাকা থেকে সাংসদ নির্বাচিত হতেন না। তাঁর দাবি, মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি করে রাজনৈতিক উদ্দেশে রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলা সাজিয়েছে।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে উপস্থিত সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘রায়ে আমরা হতাশ হয়েছি। আমার বাবা যে নির্দোষ ছিলেন, সেটা একদিন না একদিন প্রমাণিত হবেই।’
আপিলের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রায় ঘোষণার পর নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই রায় আমরা আশা করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যাপারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভূমিকা ছিল ভয়াবহ। তাঁর এই সাজা যদি না হতো, তাহলে আমরা প্রচণ্ড হতাশায় নিমজ্জিত হতাম।’
অপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ রায়ের: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এর আগের রায়গুলোতে দেখা গেছে, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তা ট্রাইব্যুনালে পাঠান সুপ্রিম কোর্ট। সেটি হাতে পেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওই মৃত্যু পরোয়ানা কারা কর্তৃপক্ষ আসামিকে পড়ে শোনায়।
সাকা চৌধুরীর এখন কি করবে :
একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে তা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারবে আসামিপক্ষ। পুনর্বিবেচনার আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার পরেও যদি মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে, তাহলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেবে কারা কর্তৃপক্ষ। সব শেষে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ পাবেন। সেটা নিষ্পত্তি হলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। এর আগে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় বাস্তবায়নের সময় এসব প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়েছে। অবশ্য তাঁদের পুনর্বিবেচনার আবেদন নাকচ হয়ে যায়।
সূত্র : প্রথম আলো ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৩৮