তারানা হালিম দেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী । তিনি দায়িত্ব নেবার পর বেশ কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন । ওনার দুটি পদক্ষেপ এরই মধ্যে বেশ আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে । একটি হল মোবাইল এর সিম নিবন্ধন অন্য হল ফেসবুক,টুইটার,ভাইবারসহ সহ বেশ কয়েকটি সোশ্যাল কমিউনিকেশন অ্যাপস বন্ধ করে দেওয়া । ভাইবার,টুইটার,টাংগ এগুলো ধনীদের ব্যবহার্য অ্যাপস । ধনীদের বলছি এই কারণে যে, সবাই এগুলো ব্যবহার করে না । কিন্তু ফেসবুক হচ্ছে, আমজনতার জিনিষ । আবাল বনিতা সবাই ব্যবহার করে । বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যান্ডউইথ খরচ হয় ফেসবুকের পেছনে । অনলাইন শপিং থেকে লেখাপড়া,প্রেম ভালবাসা,যোগাযোগ,রাজনৈতিক আলোচনা- সমালোচনা,গল্প-কবিতা সব চলে ফেসবুকের মাধ্যমে । ফেসবুক হয়ে গেছে তিন বেলা খাদ্য গ্রহণের মতো । সবকিছুতে ফেসবুক অন্য এক মাত্রা নিয়ে এসেছে । অবস্থা এমন খাবার না হলে চলে কিন্তু ফেসবুক না হলে চলে না । এটা সবাই স্বীকার করবেন ।
সাকা-মোজাহিদের রায় কার্যকরের সময় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সারা দেশে একযোগে ইন্টারনেট,ফেসবুক,টুইটার,ভাইবারসহ সহ বেশ কয়েকটি সোশ্যাল কমিউনিকেশন অ্যাপসগুলো কোন রকম ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয় । হুট করেই দেশের ব্যবসা বাণিজ্য সহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরে । হঠাত করে ইন্টারনেট না থাকায় সারা দেশে একটা অন্যরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । আইটিতে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে দৈড়ঝাপ পরে যায় । এ সময় অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক ক্ষতির সন্মুখিন হয় । টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর কল্যাণে মানুষ ধীরে ধীরে ব্যাপারটা জানতে পারে । এবং দেশের কথা ভেবে মেনেও নেয় । কেননা ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার যেমন কিছু করার নেই । ঠিক তেমনি, দেশের জনগণের অবস্থাও এখন তেমনি সব কিছু মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই । এগুলো বন্ধ করার পেছনে যুক্তি হিসাবে দেখানো হয়েছে দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা । মানুষের নিরাপত্তা কথার উপর তোর আর কোন কথা চলে না ।
এ পর্যন্ত হলে ঠিক ছিল । তারানা হালিমের যুক্তি ছিল সাকা-মোজাহিদের রায় কার্যকরের পর জামাতের লোকেরা ফেসবুক,টুইটার,ভাইবার ব্যবহার করে দেশে হামলা চালাবে । মানুষ হত্যা করবে । গুজব ছড়াবে । এ পর্যন্ত ও মেনে নিলাম । কেননা, মন্ত্রীর চারপাশে যার আছেন তারাই মন্ত্রীকে এসব বুঝিয়েছেন । আর মন্ত্রী নিশ্চয় তার হাই-কমান্ডকে ও তাই বুঝিয়েছেন । হাই-কমান্ড নীল সংকেত দিলে তিনি বিটিসিএলকে লাল সংকেত দিয়ে সব বন্ধ করে দিয়েছেন । (এমন টাই তারানা হালিম ভাবছেন ) । এ পর্যন্ত হলেও এ লেখাটা লিখতাম না । কিন্তু গত দু দিন আগে "তারানা হালিম নিজের শাস্তি চান" এমন একটি লেখা নিউজ পোর্টালগুলোতে খুব ঘুর পাক খাচ্ছে । লেখাটি আমি পড়েছি , সেখানে তারানা হালিম - একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে নিরাপত্তার জন্য এসব বন্ধ করার পেছনে যুক্তি দেখিয়েছেন । অন্যদিকে একজন মন্ত্রী হিসাবে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন ।
ম্যাডাম আমিও আপনার অপসারণসহ শাস্তি চাই । কেননা আপনি দেশে মিথ্যা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন । এর ফলে শুধু দেশে নয় সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে । দেশে বিদেশে মানুষ আতন্কগ্রস্থ হয়েছে, ভয় পেয়েছে । দেশে-বিদেশের মিডিয়ায় স্বাধীনতা বিরোধীরা গুরুত্ব পেয়েছে । বিদেশিরা ভাবছে, বাংলাদেশের স্বৈরশাসন চলছে আর বিরোধী দলের নেতাদের সরকার ফাসি দিচ্ছে । সত্য ঢাকতেই সরকার সোশালমিডায়া বন্ধ করেছে । এমনটা আপনার জন্য ভাবছে । আপনার অজ্ঞতা,মূর্খতা এর জন্য দায়ী ।
আপনি খুব সম্ভব যে পদটিতে আছেন সেটির মূল্য বুঝতে পারেননি অথবা আইটি বুঝেন না । অন্যের কথায় চলেন । আপনি আপনার লেখায় বলেছেন, দেশের জনগণের নিরাপত্তার জন্য দেশে,আর্মি,র্যাব,পুলিশসহ নানা বাহিনী রয়েছে একটি সরকার রয়েছে । কিন্তু আপনার লেখা পড়ে এবং কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে আপনি একাই নিজের কাঁধে জাতির নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন আর সবাই নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে ।
মাননীয় মন্ত্রী, আপনি আপনার শাস্তি চেয়ে আসলে পুরস্কার চেয়েছেন । নিজের ঢোল নিজে বাজিয়েছেন । কিন্তু আমি সত্যি সত্যি আপনার অপসারণ চাইছি । কেননা আপনি সম্পূর্ণ অজ্ঞ এবং অদক্ষ একজন মন্ত্রী । আপনি যেসব অ্যাপস গুলো বন্ধ করেছেন, বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন, সেগুলো সব চালু রয়েছে । আপনি ফেসবুক, ভাইবার.টুইটার বন্ধ করতে পারেননি । এই বন্ধ করতে না পারা হচ্ছে আপনার ব্যর্থতা । এগুলো বন্ধ করেছেন, বলে তৃপ্তির যে ঢেকুর তুলছেন, তা হচ্ছে আপনার অদক্ষতা । দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য আপনার অপসারণ হওয়া উচিত । আপনার মন্ত্রিত্বের বয়স ছয় মাস হয়েছে কিন্তু বলতে পারবো না কিন্তু আপনার কথা বার্তায় মনে হয় আপনি কয়েক যুগ ধরে মন্ত্রী । দেশকে ডিজিটাল করার পেছনে যে সব মন্ত্রী আর মাথা কাজ করছে তাদেরকে আপনি এক ঝটকায়ে পেছনে ফেলে দিতে চাইছেন । এমনকি প্রধানমন্ত্রী পুত্র জয়ের অবদানকেও ।
এখন শুনছি ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তি করবেন, কি হাস্যকর প্রস্তাব আর কথাবার্তা । কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার পরিকল্পনাও করছেন নিশ্চয় । আমি আপনাকে একটি ফ্রি উপদেশ দিতে পারি , সেটি হল , ফেসবুকের সঙ্গে নয় চুক্তি যদি করতে হয় সেটি করতে হবে ইসরাইলের সঙ্গে । কেননা এই অ্যাপসগুলো স্থায়িভাবে বন্ধ করার প্রযুক্তি তারা আবিষ্কার করে ফেলেছে । আর আপনি তো নিশ্চয় জানেন ভাইবার কিন্তু তাদেরই তৈরি ।
যেহেতু ফেসবুক সহ অন্যান্য অ্যাপসগুলো বন্ধ করতে পারেন নি, তাই বলবো - জামাতের সন্ত্রাসীরা এগুলো এখনও ব্যবহার করছে কিন্তু তবুও তারা দেশে কোন অরাজকতার সৃষ্টি করতে পারেনি । কেননা এ দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় । ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে । ফেসবুক যেহেতু বন্ধ না তাই এটা খুলে দেবার জন্যও অনুরোধ করার প্রয়োজন ও দেখিনা । শুধু দেশের মানুষের মধ্যে আতন্ক সৃষ্টি না করার জন্য অনুরোধ করছি । সন্ত্রাসীরা আছে থাকবে এবং তাদের প্রতিহত ও করা হবে । কোন সন্ত্রাসীই ছাড় পাবে না । কিন্তু আপনি রাস্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কচু দেখাচ্ছেন । তাই আপনার এখনই অপসারণ দরকার ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০২