গতকাল আমার দু'ই সাংবাদিক বন্ধু অফিসে এসে উপস্থিত । ওদের দেখে আমি বেশ টাসকি খাইলাম । কারণ ওরা সাধারণত আমার অফিসে আসে না । কিন্তু সেইটা ওদের বুঝতে না দিয়া বললাম, কিরে এতোদিন পরে ? কি মনে কইরা ?
ওরা কইলো চল তো ডুব মাইরা আসি । আমি অভ্যাস গত ভাবে কপালে তিনটা ভাজ ফেলাইয়া জিজ্ঞাসা করলাম, মানে ? আমার কপাল কুঁচকানো দেইখা শামিম বলল, চল সিনে কমপ্লেক্সে ফারুকির ভেতর "ডুব" মাইরা আসি । তিনটা টিকেট পাইছি ।
আমি ব্যাপারটা বুঝতে পাইরা ওদের জন্য চায়ের কথা বলে তারপর কইলাম একটা প্রশ্ন করমু , যদি সঠিক উত্তর দিতে পারিস তাইলে তো গো লগে যামু । শামিম আজিজের সাথে চোখাচোখি কইরা কইলো, কি প্রশ্ন ? কর, দেখি উত্তর দিতে পারি কিনা ?
তোরা "ডুব" ক্যান দেখতে যাবি ?
কেন আবার দেখতে যামু মানে যামু ।
না মানে ছবিটা কেন দেখবি ? আমি হাতে পেন্সিল নাচাতে নাচাতে আবারো প্রশ্নটা করলাম ।
ভাল ছবি , বাংলা ছবি তাই যামু ।
তুই কি আগে ছবিটা দেখছিস ?
না দেখি নাই ।
তাইলে ক্যামনে জানলি ছবিটা ভালা না মন্দ ।
অনেকে কইতাছে, তাই কইলাম ।
অনেকে তো টাকাও ফেরত চাইতাছে শুনলাম । আচ্ছা, এখন ক তো দেখি, হুমায়ূন আহমেদ যে শাওনরে বিয়া করছে, এইটা তুই কোন দৃষ্টিতে দেখোস ? মানে ব্যাপারটা কি তুই সমর্থন করোস ? না কোরোস না ।
না করি না । বুইড়া একটা দামরা, মাইয়ার বান্ধবীরে বিয়া করছে। এইডা সমর্থন করার কি আছে ?
আচ্ছা, ছবিটা তো হুমায়ূন আহমেদ এর হাফ বায়োপিক, মানে শাওনের সাথে সম্পর্কের কিছু আগে পরের ঘটনা নিয়ে তৈরি । এইডা জানোস তো ?
জানুম না ক্যান? জানি।" রোকেয়া পাচি" এই কথা তো আগেই ফাঁস কইরা দিছে । ফারুকিও তার ফেসবুকে এই নিয়ে কথা কইছে । এর লাইগা ফারুকি নাকি পাচি'র সব দৃশ্য ছবি থেইকা বাদ দিয়া দিছে । শামিম এমন ভাবে হাসতে হাসতে কথাটা বললো যেন পাচির দৃশ্য ছবি থেকে বাদ দেওনে ও বেশ মজা পেয়েছে ।
মানে তুই সব জানোস ।
হুম, মিডিয়া যতোটা জানাইছে ততোটাই জানি ।
তারপর ও তুই ছবিটা দেখতে যাইতাছোস, কারণ তুই আসলে একটা ক্যাচাল দেখতে চাইতাছোস । তুই টিপিক্যাল বাঙ্গালির মতো গুলতেকিনের পক্ষ নিয়া ই হলে যাইতাছোস, ঠিক না?
হুম, তা কিছুটা ঠিক । শামিম আমতা আমতা করে বললো । গুলতেকিনের জন্য আমার একটা সফট কর্ণার আছে । লোকটা একবারের জন্যও বউ এর কথা ভাবলো না, পোলা পানের কথা ভাবলো না । মন চাইলো প্রেম করলো, মন চাইলো বিয়া করলো । তাও আবার মেয়ের বয়সি মাইয়ার সাথে । ছি : শামিমের মুখ দিয়ে এক রাশ ঘেন্না ঝরে পরলো। পিতা হিসাবে সে কি একবারও ভেবেছে তার এ কর্মের জন্য তার সন্তানদের উপর দিয়ে কি ঝড় গেছে ? বউয়ের কথা না হয় বাদ ই দিলাম । ওই ব্যাটা আমার বা..র সাহিত্যিক । একটু থেকে ও আবার বললো, আসলে সব দোষ ওই ডাইনীটার । কি দেইখা যে এই বুইড়ার প্রেমে পরলো এখনো বুঝি না ।
শোন দোস্ত, আমি হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড দিয়া তার সাহিত্যরে পরিমাপ করি নাই । এই সব ক্যাচাল দেখতে আমার ভালও লাগে না । শাওনরে বিয়া কইরা হুমায়ূন আহমেদ কোন অন্যায় করে নাই । প্রাপ্তবয়স্ক একটা মাইয়া'রে কবুল পইড়া সাদি করছে । যে কোন সম্পর্কের ভেতরেই টানা পোড়ন আছে । থাকবে। এক নারীর সংসার আরেক নারীর জন্যই ভাঙ্গে । ফারুকি ও নিশ্চয়ই শাওন'রে ভিলেন বানাইয়াই ছবিটা বানাইছে । গুলতেকিনের প্রতি দর্শকদের সহানুভূতি জাগাইছে । কিন্তু সে কি পারবে গুলতেকিনের, বিবাহিত জীবনের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে? পারবে না । কারণ সবটা সে বা আমরা জানি না । ছবিতে যা আছে সেটা শুধুই অনুমান নির্ভর,লোক মুখে শোনা এর বাহিরে ফারুকি যেতে পারবে না । যা তুই, আমি,আমারা সবাই জানি । তাছাড়া, আমি মনে করি মানুষের সব প্রেমই প্রথম প্রেম। প্রেম নিয়া ক্যাচাল করার কিছু নাই । যারা এটা করে তাদের আমি এড়িয়ে চলি । সুতরাং এই ক্যাচাল দেখতে আমি যামু না। তোরা যা । "স্পাইডার ম্যান আর আইটি" নামে দুই'টা ছবি নামাইছি তাই বাসায় ফিরে দেখমু।
আমার দীর্ঘ বক্তব্যে শুনে শামিম কিছু বলল না । চায়ে চুমুক দিলো । আমি আজিজের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম ,তুই ক্যান যাইতাছোস ?
আজিজ হেসে বলল, দোস্ত দু'ই বউয়ের গাঙ্গের চিপায় পরলে ক্যামনে ডুব দিয়া ভাইসা উঠতে হইবো হেউডা শেখার জন্য যাইতাছি ।
৩০/১০/২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৩১