মনটা দু'দিন যাবত খুবই ভারাক্রান্ত হয়ে আছে । যতবার নিউজটি দেখছি ততবারই নিজের মেয়ের কথা ভেবে শঙ্কিত হয়ে উঠছি । সামান্য গলা ব্যথার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে গেলে প্রয়োজন না থাকার পরেও অর্থ লোভী মানুষরূপী হায়েনার দল মেয়েটিকে ক্লিনিকে ভর্তি করে নিয়েছিলো । কিন্তু দায়িত্বরত চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণে শেষ পর্যন্ত ফুলের মতো নি:পাপ আরফাকে লাশ হয়ে ফিরতে হল । কে নেবে এ দায়, ওই চিকিৎসক, ক্লিনিকের মালিক নাকি দেশের গোটা সিস্টেমের সাথে জড়িত অর্থ লোভী কিছু হায়েনা ? ইতিমধ্যে ওই ক্লিনিকটি নাকি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । কিন্তু তাতে কি আরফাকে ফেরত পাওয়া যাবে ? শুরুতেই যদি ওই ক্লিনিকটিকে অনুমোদন না দেওয়া হতো তাহলে হয়তো আজ আরফাকে এভাবে মরতে হতো না ।
দেশের চিকিৎসকেরা বুকে ফুলিয়ে বলেন চিকিৎসা হচ্ছে মহান পেশা । তারা মহান পেশায় নিয়োজিত । কথা হচ্ছে, সেই মহান পেশায় নিয়োজিত চিকিৎসকের দায়িত্ব অবহেলার কারণে যদি ফুটফুটে একটি প্রাণ ঝরে যায় তাহলে সেই পেশাটি আর মহান থাকে কিভাবে ? প্রতিদিন দেশের আনাচে কানাচে এই সংক্রান্ত খবরগুলো পড়তে হচ্ছে । প্রতিদিন কারো না কারে এভাবে মৃত্যু হচ্ছে । প্রতিদিন কোন কোন লাশকে আটকে রেখে ব্যবসা হচ্ছে । বলি, কতোদিন এভাবে চলবে ? কতদিন এমনটা চলতে দেওয়া যায়?
রিকশাওয়ালা রিকশা চালায় অর্থের বিনিময়ে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, জাহাজ, প্লেন চালকেরাও তাই করেন। সবাই অর্থ উপার্জনের জন্যই এসব সেবা দিয়ে থাকে । বাড়ির কাজের বুয়া,নাপিত থেকে শুরু করে উকিল,পুলিশ থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী সবাই তাদের কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন । সেবার মধ্যে যখন কোন লেনদেনের বিষয় চলে আসে তখন আর সেই মহান পেশা আর মহান থাকে না । অন্য দশ পাচটা সেবার মতোই হয়ে যায়।
অর্থের বিনিময়ে আমরা যেমন প্রয়োজনীয় খাদ্য,বস্ত্র,দ্রব্য সামগ্রী কিনে ব্যবহার করি তেমনি হাসপাতাল বা ক্লিনিক নামের দোকানগুলো থেকেও আমরা চিকিৎসা নামের সেবাটি কিনে থাকি । এক দোকানদার না বেচলে অন্য দোকান খোলা আছে সেখানে থেকে তা নেওয়া যাবে । সেহেতু অর্থের লেনদেন হচ্ছে, সেহেতু দোকানী বাধ্য ভাল ব্যবহার করতে,ভাল, সঠিক চিকিৎসাটি দিতে । এখানে গাফলতির সুযোগ নাই । মহান সাজারও উপায় নাই । মহান সাজতে হলে, ফ্রিতে চিকিৎসা করো,সেবা করো । মাদার তেরেসা সাজো ।
কাজের বিনিময়ে যখন অর্থ নেবেন তখন রিকসাওয়ালা,ট্রেন ড্রাইভার কিংবা বাড়ির বুয়ার সাথে আপনাদের কোন পার্থক্য নাই । অর্থ নাও চিকিৎসা দাও ।
নিজের কাজটা ঠিক মতো যথাযথভাবে করতে আপনারা মহান পেশা্র দাবীদারেরা একান্তভাবে বাধ্য । কিন্তু এই কাজটাই অনেক চিকিৎসক ঠিক মতো করে না বলেই চিকিৎসক শব্দটির সাথে কসাই শব্দটি জুড়ে গেছে । এখন যতোই মহান পেশা, মহান পেশা বলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেন না কেন এই পেশা থেকে কসাই শব্দটি আর কিছুতেই বাদ দিতে পারবেন না ।
একসময় মানুষ রোগ মুক্তির আশা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতো কিন্তু এখন মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হচ্ছে । কিছু অর্থ লোভী মানুষের চক্রে পরে এই পেশায় নিয়োজিত অনেকে হায়েনার চেয়েও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে । দেশে এমন অনেক চিকিৎসক আছেন, যারা রোগী দেখার পূর্বেই তাদের ভিজিটের টাকা নিয়ে নেন । প্রয়োজন না থাকার পরেরও হাজারটা টেস্ট দিয়ে পকেটে কমিশনের পকেটে ঢুকান । আলতু, ফালতু ঔষধ ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেন । কথায় কথা এন্টিবায়োটিক, ভিটামিনের নামে চায়না ওষুধ রোগীদের খেতে বাধ্য করেণ । এরূপ চিকিৎসকের সংখ্যা এখন দেশে শতকরা ৯৯ জন। এরাই আবার দাবী করেন মহান পেশা । ছি: লজ্জা হওয়া উচিত আপনাদের । ও হে মহান পেশায় নিয়োজিত ভদ্রলোকগন আপনারা হারাম খাচ্ছেন । হারাম টাকায় ছেলে মেয়ে মানুষ করছেন । একদিন এর জন্য আপনাদের স্রষ্টার কাছে জবাবদিহি করতে হবে ।
এখন মহান পেশা বলে এখন আর কিছুই নেই । সর্বত্র চলছে বাণিজ্যের নামে শোষণ,ঝুলুম নির্যাতন । চিকিৎসকদের কসাই বানাবার জন্য একটি চক্র নানাবিধ ফাদ পেতে চাকচিক্যময় হাসপাতাল তৈরি করে ব্যবসা পেতে বসেছে । এবারই ভাল সৎ চিকিৎসদের টিকতে দিচ্ছেন না । তাদের বদলি করে এমন জায়গায় পাঠাচ্ছে সেখানে সেবা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই ।
সরকারী হাসপাতালগুলো অবস্থা এতোটাই করুণ করে রাখা হয়েছে যে বাধ্য হয়ে মানুষ একটু ভাল সেবার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হাসপাতালগুলোতে যাচ্ছে কিন্তু হায় সেখানেও জুটছে চিকিৎসা সেবার নামে নির্মম মৃত্যু । লাশ নিয়ে বাণিজ্য এখন অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে । এখন ই যদি প্রতিরোধ গড়ে তোলা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে এমন অনেক নিষ্পাপ ছেলে মেয়েকে ঝরে যেতে দেখার জন্য পিতা মাতাদের তৈরি থাকতে হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২১