আমি স্কুল জীবন শেষ করে সরকারী কলেজ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই লেখা পড়া শেষ করেছি । প্রাইমারিটাও সরকারী বিদ্যালয়ে পড়েছি। বেশ মনে আছে, যেখানে স্কুলে বেতন দিতাম ৬৫ টাকা সেখানে একাদশ শ্রেণীতে বেতন দিতাম মাত্র ১৯ টাকা। অথচ আমার ভাইয়ের বোনের কলেজ বেতন ছিল তখন ৩০০ টাকার ও বেশি। ছাত্র কেমন ছিলাম জানিনা, কিন্তু যেখানেই ভর্তির জন্য আবেদন করেছি,পরীক্ষা দিয়েছি বেশ ভাল ভাবেই টিকে গেছি। আমাকে ভর্তি করাবার জন্য বাবা মাকে কোথাও দৌড় ঝাপ করতে হয়নি।
এভাবে এমএসসি পর্যন্ত কখনো ২২ টাকার বেশি বেতন দিতে হয়নি। এর অর্থ হচ্ছে, যতদিন পড়েছি ততদিন জনগণের টাকাতেই পড়েছি। অন্যের করের টাকায় পড়েছি। তাই দেশের প্রতি আমার যতো ক্ষুদ্রই হোক না কেন দায়বদ্ধতা রয়েছে। যেহেতু আমি সরকারের টাকায়, দেশের মানুষের টাকায় পড়ে অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়েছি সেহেতু আমি দেশের জন্য কাজ করতে বাধ্য থাকবো এটাই হওয়া উচিত। অথচ দেশের টাকায় লেখা পড়া শেষ করে অনেক পাখি উড়াল দেয় বিদেশে। বিদেশে মোটা ইনকাম করে নাক ছিটকায়, ন্যাষ্টি দেশে মানুষ থাকে? দেশটা উচ্ছন্নে গেছে। এই নব্য বিলাতি ভাইয়েরাই আবার দেশের জন্য মেকি কান্না কাঁদে। কথা হচ্ছে,এদের পেছনে কাড়িকাড়ি অর্থ ব্যয় করে রাষ্ট্রের কি লাভ হল? ডাক্টার ইন্জিনিয়ার তৈরি করলাম আমরা আর মোয়া খায় ইউরোপ আমেরিকা অথবা মধ্যপাচ্যের কোন দেশ । দেশের কি লাভ হলো ? সময় এসেছে হিসাব নিকাশ করার। বন্ডিংস তৈরি ও বাধ্য করার । সরকারি টাকায় লেখা পড়া শেষ করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কেউ পালিয়ে যেতে পারবে না। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের জন্য সময় দিতে হবে। যেতে চাইলে দায় শোধ করে যাও।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০ টাকা সিট ভাড়া ৩০ টাকায় খাওয়ার কথা। আমি ও ওনার সাথে একমত। এই খরচ এখন বৃদ্ধি করার সময় এসেছে। সরকারী স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেতন খরচ বৃদ্ধি করা হোক। যে পিতা মাতা ছেলের শিক্ষার জন্য ২০ টাকা খরচ করে সেই ছেলেই ক্যাম্পাসের চিপায়, চাপায় হাজার টাকার চা, সিগারেট খায়। শুধু একা নয় দল বদ্ধ ভাবে খায়। তাদের কাছে শিক্ষার মূল্য চা, বিড়ি সিগারেটের চেয়েও কম। ৩০০- ৫০০ টাকা মাসে বেতন দিয়ে এখন সকল বাবা, মা ই তাদের সন্তানদের সরকারী কলেজ বিশ্বঃ বিদ্যালয়ে পড়াতে সক্ষম। যদি কেউ তা দিতে না পারে তাহলে গরিব ছাত্রদের জন্য প্রতিটি কলেজ বিশ্বঃ বিদ্যালয়ে আলাদা ব্যবস্থা আছে। আবেদন করে সেই কোটায় পড়তে হবে।
কথায় আছে, সস্তার তিন অবস্থা থাকে। সস্তা পেলে কেউ তার মূল্য বোঝে না। একবার চিন্তা করুন একটি বেসরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে মেয়েকে পড়াবার টাকা যোগার করার জন্য পিতা মাতাকে কি পরিশ্রম ই না করতে হয়। এই সুযোগটা নিয়ে বেসরকারি খাতে শিক্ষা এখন বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। এই বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। বেসরকারি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য সরকারের ভর্তুকি দিতে হবে। সেটা আসবে সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃদ্ধি করা অর্থ থেকে। এ ব্যাপারে সরকারের এবং বেসরকারি ছাত্রদের আলোচনায় বসে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। শিক্ষা কোন পণ্য নয় । এটা অধিকার । কেউ পাবে কেউ পাবে না তা হবে না । তা হবে না । রাষ্ট্র যদি সবার হয় তাহলে সরকারী খরচে শিক্ষা লাভের অধিকার দেশের প্রতিটি ছেলে মেয়ের রয়েছে । তাদের এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে । শুধু মেধার কারণে সরকারী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবার সুযোগ পাওয়া ছেলে মেয়েরাই সে অধিকার পাবে এটা হবে না ।
ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীকে ইস্যুটি সামনে নিয়ে আসার জন্যে। যেখান বেসরকারি কলেজে পড়তে হাজার হাজার টাকা খরচ হয় সেখানে সরকারী এই খরচ কিছুই না। সকলেই এই দেশের নাগরিক, সকলের ই অধিকার সমান। তাই এই বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। দূর করতে হবে। সরকারের উচিত বেসরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধ্যয়নরত ছেলে মেয়েদের দিকেও নজর দেওয়া। তাদের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করা। লেখা পড়ার সুযোগ সৃষ্টিতে এই বৈষম্য এখন ই দূর করা প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:১৫