somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল পাচিনোঃ অন্য জগতের এক মহান অভিনেতা

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আল পাচিনো কে চিনেন না বা তাঁর মুভি দেখে আপ্লুত হন নি এমন সিনেমাখোর আছেন বলে মনে হয় না। আমি জানি এই মহান অভিনেতাকে নিয়ে অসংখ্য লেখা প্রকাশিত হয়েছে, ভবিষ্যতে আরো অসংখ্য লেখা আসবে। তাও তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের ভক্ত হিসেবে আমার ভাললাগা প্রকাশ করার জন্যে এই লেখা। যদিও আমার মনে হয় না আমি এই লেখার মাধ্যমে তাঁর প্রতি ভাললাগার কিয়দংশ ও প্রকাশ করতে সক্ষম হব!!

অসাধারণ শক্তিমান এই অভিনেতার অভিনীত মুভিগুলোকে শুধুমাত্র তাঁর অভিনয়শৈলীর জন্য আমার কাছে অন্যজগতের সৃষ্টি বলে মনে হয়!! এমন না যে তাঁর মুভিগুলোর সবগুলোই অসাধারণ স্টোরীলাইন বা বিশাল বাজেটে নির্মিত। অনেক সময় দেখা যায় যে ডিরেক্টরও আহামরী কেউ নন বা ক্যামেরার কাজ সহ মুভির অন্যান্য টেকনিক্যাল দিক গুলোও হয়ত বেশ দুর্বল। কিন্তু একটা কথা বুকে হাত দিয়ে বলা যায়, তাঁর মুভিগুলো আপনি গোগ্রাসে গিলবেন, মুগ্ধ হবেন এবং অনেক দিন মনে রাখবেন - শুধুমাত্র তাঁর অভিনয়ের জন্য। এমন অনেক মুভিপ্রেমীকে আমি দেখেছি যারা তাঁর একটা মাত্র মুভি দেখে সারাজীবনের জন্য তাঁর ফ্যান হয়ে গেছেন। এমনও সিনেমাপ্রেমী আছেন যারা তাঁর মুভি বছরে দু একটার বেশী দেখেন না - তাহলে তারাতারি শেষ হয়ে যাবে যে!!!

আরো অনেক সিনেমাপ্রেমীর মত এই ভদ্রলোকের সাথে আমার পরিচয়
The Godfather
মুভি দিয়ে। মাইকেল কর্লিয়নি চরিত্রে তাঁর অভিনয় এক কথায় ছিল অসাধারণ। গডফাদার বইটা পড়ার পর থেকে মুভিটা দেখার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। বই পড়ে মানস পটে যে ছবিটা ফুটে উঠেছিল মুভিতে তার মোটামুটি শতভাগ নিখুঁত প্রতিবিম্ব দেখে আমি চমকে উঠেছিলাম। আর মুভিতে উপন্যাসের এই সার্থক রুপায়নের পিছনে আল পাচিনোর দুর্দান্ত অভিনয়ের ভূমিকা ছিল অনেকখানি।
কিন্তু আমার মতে আল পাচিনোকে মুভি লাভাররা তাঁর স্বরুপে দেখতে পান
The Godfather Part II
মুভিতে। দুর্দান্ত অভিনয় করে তিনি জায়গা করে নেন সারা দুনিয়ার মুভি প্রেমিদের হৃদয়ে। এর পর আর কোন থেমে থাকা নেই, আল পাচিনো মানেই অসাধারণ অভিনয়, আল পাচিনো মানেই প্রতি মুভিতে নতুন করে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া। প্রতিনিয়ত নতুন ভাবে নিজেকে মেলে ধরে তিনি নিজেকে এমনি এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে তাকে লিভিং লিজেন্ড না বললে তাঁর প্রতি অবশ্যই অবিচার করা হবে বলেই আমার ব্যক্তিগত অভিমত।

দি গডফাদার ট্রিলজি ছাড়াও তাঁর যে মুভিগুলোর নাম না নিলেই নয় সেগুলো হচ্ছেঃ Dog Day Afternoon, Scarface, Scent of a Woman, Heat, Donnie Brasco, The Insider, The Devil's Advocate, Insomnia, The Recruit, Ocean's Thirteen, 88 Minutes, Righteous Kill ইত্যাদি। যদিও আমার ব্যক্তিগত মতামত - আল পাচিনো মানেই উপভোগ্য মুভি। কাহীনির, পরিচালনার জোড়ে না হলে ও অভিনয়ের জোড়ে সেই মুভি অবশ্যই সুখাদ্য হয়ে উঠতে বাধ্য!

উপরের মুভিগুলোর মধ্যে যে দুটি মুভির নাম আমি আলাদা ভাবে নেব তা হচ্ছেঃ
Scarface
এবং
Scent of a Woman
এই মুভি দুটো না দেখলে আল পাচিনোকে চেনা অপূর্ণ রয়ে যাবে। স্কারফেস মুভিতে আল পাচিনো একজন কিউবান বংশদ্ভুত যে কিনা ভাগ্যন্নেষনে আমেরিকায় চলে আসে। রূপান্তরিত হয় ভয়ানক গ্যাংস্টারে। মুভিতে স্পস্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একজন ক্রিমিনালের সাইকোলজি এবং চূড়ান্ত পরিণতি। অসাধারণ মুভিটা সব মুভিপ্রেমীর জন্য মাস্ট সি। সেন্ট অফ আ ওমেন মুভিটা একা পাচিনো টেনে নিয়ে গেছেন। এই মুভিটা এখানে টেনে আনলাম এই জন্য যে এই মুভির জন্য তিনি তার একমাত্র অস্কারটি পেয়েছিলেন। মুভির কাহীনি আহামরী কিছু না। কিন্তু এখানেই আল পাচিনোর সার্থকতা। মোটামুটি মানের একটা মুভিকে কিভাবে শুধুমাত্র অভিনয় দিয়ে জাতে ওঠানো যায় তা এই মুভি না দেখলে বিশ্বাস হবে না!! মুভিটা দেখার পর এতটাই আপ্লুত হয়েছিলাম যে গোটা একটা পোস্টই দিয়ে দিয়েছিলাম সামুতে!! ইচ্ছা হলে দেখতে পারেন এখানেঃ
Scent of a Woman - অসম্ভব ভালো লাগা একটি মুভি

আল পাচিনো মঞ্চে অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের প্রতি তার সুতীব্র ভালবাসা। তার বেশ কিছু দুর্বল স্ক্রিপ্টের মুভি দেখে আমার মনে হয়েছে তিনি এই মুভিগুলো করেছেন শুধুমাত্র চ্যালেঞ্জিং অভিনয়ের প্রতি তার দুর্বলতা থেকে। এবং তিনি সার্থক। তার অভিনয়ের গুণে মুভির অন্যান্য দুর্বলতা অনেকটাই চাপা পড়ে গিয়েছে।

প্রচার বিমুখ এই অভিনেতা পেয়েছেন অসংখ্য স্বীকৃতি। অস্কার তো পেয়েছেনই, জিতে নিয়েছেন ৪ বার গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার। পেয়েছেন অ্যামি অ্যাওয়ার্ড, টনি অ্যাওয়ার্ড। অ্যামেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট তাকে সম্মানিত করেছে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দিয়ে। কিন্তু আমার মতে এসব অ্যাওয়ার্ড তাঁর অভিনয় প্রতিভার খুব সামান্য অংশের স্বীকৃতি মাত্র । আল পাচিনো এমন একজন অভিনেতা যাকে পুরস্কার দিয়ে মাপা যায় না। বিচার করা যায় না প্রশংসার স্তুতিবাক্যে। আল পাচিনোর অবস্থান দুনিয়ার তাবৎ সিনেমা প্রেমির হৃদয়ে। আর সিনেমা প্রেমীদের এই অকুন্ঠ ভালবাসাই হচ্ছে তাঁর আসল পরিচয়, আসল স্বীকৃতি। এই ভালোবাসার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় আসল আল পাচিনোকে।

তো দেখুন আল পাচিনোর মুভিগুলো। মুগ্ধ হোন একজন একনিষ্ঠ শিল্পীর অনবদ্য সৃষ্টি দেখে। আল পাচিনোর জন্য রইল একজন মুভিপ্রেমীর শ্রদ্ধাবনত স্যালুট।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৫৪
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×