somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেনসিলে মায়াজাল

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এম সি এশারের ‌'ডে অ্যান্ড নাইট'

রঙ নেই। কমপিউটারের কারসাজিও নেই। থাকবে কী করে? কেন না, তখন যে কমপিউটার তৈরিই হয়নি। স্রেফ খাতা। আর হাতে রইল পেনসিল। আর তাতেই বাজিমাত। অসম্ভবও এখানে সম্ভব। এশারের ছবি।
সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে। জল ওপর থেকে নিচে নামে। সিঁড়ি দিয়ে হাঁটলে ওপরে উঠতে হয়। এগুলো তো ধ্রুব সত্য। উল্টোটা কি সম্ভব ? নাহ্। একেবারেই নয়।
কিন্ত্ত উল্টোটা যদি খাতায় আর পাতায় আঁকা হতে থাকে।
ধুর !
সেটা তো সম্ভবই নয়।
অসম্ভব!
কিন্ত্ত সেই কোনকালে , সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে গিয়েছেন একজন।
ম্যাজিশিয়ান নাকি ?
জাদু জানতেন ?
না। না। কোনওটাই নয়। স্রেফ আঁকতে পারতেন। আর কোনও কিছুই পারতেন না। পড়াশোনা ? বলার মতো রেজাল্ট কোনও দিনই করতে পারেননি। অনেকগুলো বিষয়ে তো রীতিমতো গাড্ডা। ওহ্ না। আরও একটা বিষয় শিখেছিলেন। কারপেন্ট্রি। কাঠের কাজ। ব্যস। কেল্লাফতে।
কীভাবে ? কী নাম ? কে তিনি ?
উত্তর একটাই। এম সি এশার



জন্ম ১৮৯৮ সালের ১৭ জুন। নেদারল্যান্ডস -এ। পুরো নাম মারিত্স কর্নেলিস এশার। বাবা পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার , নাম জর্জ আরনল্ড এশার। আরনল্ড আর তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী সারা গ্লেইখমান এর কনিষ্ঠ পুত্র এম সি।
ছোটবেলা থেকে রুগ্ন। ত্বকের সংক্রমণে জেরবার। ১৯০৩ সালে এশার পরিবার লিউভার্দেন থেকে আর্নহেম -এ। সেখানেই স্কুলের চৌহদ্দিতে প্রবেশ এশারের।
কিন্ত্ত স্কুলে গেলে কী হবে ? ছোট্ট এশারের যে শরীর খারাপ। আজ ভালো তো , কাল খারাপ। পড়াশোনায় মন বসে না মোটে। সেকেন্ডারি স্কুল থেকে এম সি -কে সরিয়ে ভর্তি করানো হল স্পেশাল স্কুলে। তখন তার বয়স সাত। খুব একটা লাভ হল না। স্কুল থেকে বাড়িতে দিনের -পর-দিন যে রিপোর্ট আসতে থাকল , তা এম সি কিংবা পরিবারের কারোর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য উপযুক্ত নয়। কখনও সেকেন্ড গ্রেড। কখনও আবার থার্ড। অনেকগুলো বিষয়ে ফেল। ব্যতিক্রম একমাত্র ড্রইং ক্লাস। সেখানে এম সি এশার এক্কেবারে ‘নিউমেরো উনো ’। একনম্বর।
পড়াশোনায় একেবারে হাল না ছেড়ে দিলেও এশার এবার পছন্দের বিষয়গুলোয় মনোযোগ দিতে শুরু করলেন। কৈশোরে পা -দেওয়া এম সি এশার ভর্তি হল হারলেম স্কুল অফ আর্কিটেকচার অ্যান্ড ডেকোরেটিভ আর্টস -এ। আঁকার ক্লাসের পাশাপাশি চলতে থাকল কার্পেনট্রি শেখা এবং পিয়ানো ক্লাস। কেননা , সাদা পাতায় পেনসিল ড্রইং -এর পাশাপাশি এশারকে টানছিল উডকাট্ আর লিথোগ্রাফ। সম্ভব -এর সীমাকে ভেঙেচুরে অসম্ভবকে টেনে আনার চ্যালেঞ্জটা কুরে কুরে খাচ্ছিল তাকে। তাই ...
১৯২২। এশারের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বছর। নেদারল্যান্ডস -এর সীমানা ছেড়ে বাইরের দুনিয়ায় পা বাড়ালেন তিনি। প্রথম গন্তব্য ইতালি। সেখান থেকে স্পেন। দেখে ফেললেন মাদ্রিদ , তোলেদো , গ্রানাদা। স্পেনের কান্ট্রিসাইড মুগ্ধ করল এশারকে। বিশেষ করে গ্রানাদায় মুরদের প্রাচীন কাসলগুলোর কেল্লার প্রেমে পড়ে গেলেন তিনি। পরে তাঁর ছবিতে মাঝেমধ্যেই বিষয়বস্ত্ত হিসেবে উঠে এসেছে এইসব কেল্লা। কেল্লার বাধানো সিলিং , ফ্রেমওয়ার্ক, বড় বড় থাম , দেওয়ালের গঠন এশারের মনে বড় ধরনের ছাপ ফেলে যায়। কাগজে -কলমে যখন অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন , তখন এগুলোর ডিজাইনকেই কাজে লাগিয়েছেন তিনি। একসময় ভ্রমণ সেরে আবার ইতালিতেই ফিরে আসেন তিনি। বিয়ে করেন। সংসার পাতেন। চলতে থাকে ছবি আঁকার কাজ।
কিন্ত্ত ইতালিতেও একসময় ছন্দপতন। সালটা ১৯৩৫। মুসোলিনির শাসনকালে দেশজুড়ে তীব্র অস্থিরতা। আকাশে -বাতাসে বারুদগন্ধ। বড় ছেলে জর্জকে যখন মাত্র ৯ বছর বয়সে চড়ানো হল ফৌজি উর্দি, তখন ইতালি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন এশার। এরপর পরিবার নিয়ে এশার চলে যান সুইত্জারল্যান্ডে।
ঘর থেকে ঠাঁইনাড়া এশার এই সময় কোনও জায়গাতেই থিতু হতে পারেননি। সুইত্জারল্যান্ড থেকে তাঁরা একসময় চলে যান বেলজিয়ামের ব্রাসেলস -এ। বিশ্বযুদ্ধের সময় ঘরছাড়া হয়ে থাকতে ভালো লাগছিল না এশারের। একসময় আবার ফিরে আসেন নেদারল্যান্ডস্-এ। লারেন শহরে তৈরি করেন নিজের স্টুডিও।
এম সি এশারের মৃত্যু ১৯৭২ সালের ২৭ মার্চ। ৭৩ বছর বয়সে।


ওয়াটারফল

এশারের আরেক অসম্ভবের লিথোগ্রাফ। প্রথম প্রিন্ট ১৯৬১ সালের অক্টোবর মাসে। পুরোটাই প্যারাডক্স। জলপ্রপাতের জল পড়ছে ওপর থেকে। সেটা তো স্বাভাবিক৷ কিন্ত্ত ওপর থেকে পড়া সেই জলই আবার উঠে যাচ্চে নিচ থেকে ওপরে। উচ্চতা কিংবা তল, একেবারে ঘেঁটেগুলে একসা। এটা গবেষকদের পছন্দের ছবি। মাথা ঘামানোর বিষয়।



ড্রইং হ্যান্ডস্
এশারের কথা বললেই ইঠে আসে এই ছবির উদাহারণ। এটা একটা লিথোগ্রাফ। প্রথম প্রিন্ট ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে। ছবিতে দেখা যচ্ছে একটা কাগজের দু'টো হাত এঁকে চলেছে। এঁকে চলেছে পরস্পরকে। সেটা কীভাবে সম্ভব? উত্তর নেই। অসম্ভব। অসম্ভবের ছবি সেজন্যই।


রিলেটিভিটি
এম সি এশারের বিখ্যাত লিথোগ্রাফ। প্রথম প্রিন্ট ১৯৫৩ সালে। নাম রিলেটিভিটি, কিন্তু এ -ছবিতে ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে গ্র্যাভিটি বা মাধ্যাকর্ষণের টান এবং তত্ত্ব। দ্বিমাত্রিক ছবিতে ত্রি -মাত্রিক পারস্পেকটিভ। একই রকমের, ভাবলেশহীন চরিত্ররা সিঁড়ি দিয়ে হাঁটছে। কিন্তু কে কোন দিকে যাচ্ছে, উপরে উঠছে না, নিচে। দেখে বোঝার উপায় নেই। সিঁড়ির বাইরে আবার বাগান কিংবা পার্কের মতো জায়গাও দেখা যাচ্ছে। সেখানে কয়েকজন বসে আছে। শুধু শিল্পের দিক থেকে নয়, বিজ্ঞানীদের কাছেও ছবিটি দীর্ঘদিনের গবেষণার বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×