পর্বঃ ১
ভার্সিটির দিন গুলো ভালই কাটছিল,পুলকের|সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লাশে যাওয়া,ক্লাশ শেষে ঝুপড়িতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া|কখনো বা বন্ধুদের সাথে বেসুরে গলায় গান গাওয়া|গানের ফাঁকে ফাঁকে আলী ভাইয়ের দোকানের চা এ ,চুমুক না দিলে যেন গানই জমতো না|পুলক, লেখাপড়া পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে প্রথম থেকেই জড়িত ছিল|পুলকের মনে যে কখনো প্রেম,ভালবাসা নাড়া দেয়নি|এমনটা নয়|পুলক অবশ্য আগে কখনো প্রেমে পড়েনি|আসলে প্রেমে পড়া হয়ে ওঠেনি...।
পুলকের ছোট বোন তিশা|এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীহ্মা দিতে এসেছে|তিশা, পুলকের আদরের একমাত্র বোন হওয়ায়,মাঝে মাঝেই ওর সাথে মনের কথাগুলো শেয়ার করে|তিশা ক্যাম্পাসে নতুন আশায় ।ওকে ক্যাম্পাস টা ঘুরেফিরে দেখাচ্ছে|কথার ফাঁকে তিশা ওর ভাইকে বললো|
ভাইয়া,তোমার জন্য একটা মেয়ে দেখেছি|
আমার জন্য মেয়ে দেখেছিস মানে?
বুঝলাম না|
আচ্ছা,বলছি তোমাকে|
তিশা বলা শুরু করলো|আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীহ্মা দেওয়ার সময়|একটা মেয়েকে দেখেছি|ওর নাম লিলি|ও আর আমি একরুমেই ছিলাম|অনেক ভাল বন্ধুত্ব হয়েছে, আমার সাথে|মেয়েটি অনেক ভাল,ভদ্র,নম্র এবং অনেক সুন্দরী|তুমি যেমনটা চাও|মেয়েটার ফোন নাম্বারও আমার কাছে আছে|
পুলক এতহ্মন ধরে,ওর বোনের কথা শুনছিল|
ওর বোনকে বললো,মেয়েটার বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ কর,তোর ক্যাসেটাও এবার অফ কর|
শোন,ভার্সিটিতে তিন বছর ধরে আছি|এখানেই কোন প্রেম ভালবাসা হল না|আর এটা তো অদেখা মেয়ে|ওসব আমার দ্বারা হবে না|আমি একা আছি,খুব ভাল আছি|কয়কদিনের মধ্যে তিশার পরীহ্মা শেষ গেলে|ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়|
ভার্সিটিতে ভর্তি পরীহ্মা শেষ হয়ে গেল|পুলক আবার ক্লাশ পরীহ্মা নয়ে ব্যাস্ত হয়ে যায়|
কয়েকমাস পর,হঠাৎ করে একদিন মেয়েটির কথা মনে পড়ে |তিশাকে ফোন দিয়ে মেয়েটির কথা জিজ্ঞাসা করে, পুলক|পরে তিশার কাছ থেকে মেয়েটির নাম্বারটাও নেয়|এতে ওর বোন কিছুটা খুশি হয়|পরে পুলককে বলে, ভাইয়া ,লিলির কোন নিজস্ব ফোন নেই|এটা ওর আম্মুর নাম্বার|ও মাঝে মাঝে এ ফোনটা ব্যাবহার করে|পুলক,ও আচ্ছা বলে রেখে দেয়|
কিছুদিন পর,তিশা একদিন লিলির সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দেয়|পুলক এর আগে কখনো ,এভাবে কোন মেয়ের সাথে কথা বলেনি|তাই প্রথম দিন কথা বলতে কেমন জানি, একটু ইতস্ত বোধ করছিল|পরিচয় পর্বটুকু সেরেই সেদিনের মত ফোন রেখে দেয়, পুলক |
কয়েকমাস পর আবার তাদের মধ্যে কথা হয়|মেয়েটিও তেমন কথা বলতে পারছিল না|কেমন জানি লাজুক লাজুক ভাব মেয়েটির|এমনভাবে কথা বলছিল মেয়েটি,যেন এমন মহোনীয় কন্ঠ,পুলক এর আগে কখনো শোনেনি|মেয়েটির সাথে যতই কথা বলছিল,ততই তার ভাল লাগছিল|একসময় পুলক মেয়েটিকে অনুরোধ করে,তার সাথে কথা বলার জন্য|কিন্তু,মেয়েটি রাজি হচ্ছিল না|মেয়েটি বার বার বলছিল,সে কথা বলতে পারবে না|কারন তার কোন নিজস্ব ফোন নেই|এটা তার আম্মুর ফোন|পুলকের অনুরোধ,মেয়েটি একসময় ফেলতে পারে না|মেয়েটি রাজি হয়ে যায়|তবে এটাও বলে, সে দিনে কথা বলতে পারবে না| তবে রাতে কথা বলার জন্য চেষ্টা করবে|এই বলে দুজনে সেদিনের মত ফোন রেখে দেয়|
মাঝে মাঝে লিলির সাথে পুলকের কথা হয়|পুলক বুঝতে পারে,মেয়েটির প্রতি সে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে|এদিকে লিলির ও একই অবস্থা|আগে মাঝে মাঝে লিলির সাথে কথা হতো|এখন প্রায় প্রতিরাতেই,কথা হয়|একদিন কথা না বলতে পারলে দুজনরই মন খারাপ থাকে|তাদের মাঝে কথা না হলও,কেউ কাউকে একমুহ্নর্ত ভুলে থাকতে পারে না|কথা বলতে বলতে,তারা কখন দুজন দুজনকে ভালবেসে ফেলে|এটা তারে কেউই বুঝতে পারে না|
এভাবেই চলছিল ভালবাসার রঙিন দিনগুলি|