আমরা ভুলে যেতে পারি না আমাদের প্রাণের কবিকে, শ্রদ্ধা জানাতে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু দিবসকে কেন্দ্র করে নানান ভাবে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমাদের প্রতি সময়ের কবিকে সন্মানের আয়োজন চলছে। প্রথম আলো ব্লগের সকলের পক্ষ্য থেকে আমাদের প্রাণের কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু দিবসে আমাদের অন্তরের শ্রদ্ধা ও মহান আল্লাহ তালার কাছে মোনাজাত।
পুরানা দিনের একটি পোষ্টের কথা আবারও শেয়ার করা হলো কবির প্রতি সন্মান জানিয়ে-
নথি-পত্র থেকে জানা যায় ১৯৪০-এর ১৩ই অক্টোবরে কবি অটোগ্রাফ লিখে দিয়েছিলেন কোন একজনের খাতায় :
" শক্তি-সিন্ধু মাঝে রহি হায় শক্তি পেলো না যে,
মরিবার বহু পূর্বে জানিও মরিয়া গিয়াছে সে।"
এই দুই লাইন অটোগ্রাফ লিখে দেওয়ার পর প্রায় ৩১ বছর পরে ১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধের যে ডামাডোল, কবির কবিতাগুলি দিল মহান শক্তি, শত্রু মুক্ত করার জন্যে, ঝাপিয়ে পড়লো তারণ্য, যোদ্ধারা, মুক্তি যুদ্ধে।
১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধে চতুর্দিকে শক্তি-মহা, সিন্ধু শক্তি। শক্তির সিন্ধু। কবি তখন নির্বাক। নির্বাক হয়ে গেলেন ১৯৪২ এ। ১৯৭১ সালে শক্তির সিন্ধু মাঝে থেকেও কোন শক্তি মেলাতে পারলেন না তিনি। কোন শক্তি পেলেন না। অথচ সবই তিনি বুঝেছিলেন, জেনে গিয়েছিলেন সেই ১৯৪০ এ।
তিনি জানতেন একদিন বাংলায় মুক্তি যুদ্ধ হবে। ১৯৪২ এর আগেই কবি দিয়ে গেলেন যুদ্ধ জয়ের অস্ত্র।
ঝাপিয়ে পড়ল দামাল ছেলেরা, মৃত্যকে উপেক্ষা করে। কন্ঠে ধ্বনিত্ হলো।
" চল চল চল!
ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদক
নিম্নে উতলা ধরণি তল,
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চল রে চল রে চল
চল চল চল।
ঊষার দুয়ারে হানি' আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত,
আমরা টুটাব তিমির রাত,
বাধার বিন্ধ্যাচল। "
কখনও কথনও ---
" কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান,
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ
ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।"
অথবা -----------
" মোরা ঝন্ঝার মত উদ্দাম
মোরা ঝর্নার মত চঞ্চল
মোরা বিধাতার মত নির্ভয়
মোরা প্রকৃতির মত সচ্ছল।"
কখনো বা ---------------
" এই শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল।
এই শিকল পরেই শিকল তোদের করবো রে বিকল।।
তোদের বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয়,
ওরে ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন-ভয়।
এই বাঁধন প’রেই বাঁধন-ভয়কে করবো মোরা জয়,
এই শিকল-বাঁধা পা নয় এ শিকল ভাঙা কল।"
কবি চির তরে চলে গেলেন ১৯৭৬ এ মৃত্যের মধ্য দিয়ে।
কিন্তু তিনি বলে গিয়ছিলেন মৃত্যে ৩৬ বছর আগে। তিনি মারা গিয়েছেন ১৯৪২ এ। মানসিক মৃত্যের মধ্য দিয়ে। নির্বাক হওয়া মধ্য দিয়ে। বাক শক্তি হারিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে।
" মরিবার বহু পূর্বে জানিও মরিয়া গিয়াছে সে।"
প্রিয় কবি জেনে ছিলেন, বুঝেছিলেন যাদের জন্য তাঁর এ লেখনি " এই শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল।
এই শিকল পরেই শিকল তোদের করবো রে বিকল।"
তারা ১৯৪৭ এ বিদায় নিয়েছিলেন। যে ভাষায় তাঁর লেখা, সুর, ছন্দ। সে ভাষা হুমকিতে ছিল ১৯৫২ এ। আর প্রতিষ্ঠাও পেয়েছিল ১৯৫২ এ।
কবি ভারতে বসে বুঝেছিলেন তিনি যে যুদ্ধ জয়ের অস্ত্র পাতায় পাতায় লিখে দিয়েছিলেন। বাংলার দামাল ছেলেরা যুদ্ধ জয়ের শক্তি হয়ে ছিনিয়ে এনেছেন বাংলার স্বাধীনতা।
কবি বুঝেছিলেন সীমান্তের রেখা ভেদ করে এবার প্রিয় জন্মের স্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুড়ুলিয়া গ্রাম ছেড়ে কবি এবার তাঁর নিজের দেশের পথে।
কবি বুঝেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতা থেকে অসুস্থ কবিকে সপরিবারে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন, বরাদ্দ হয়েছে বনানীতে ও ধানমন্ডিতে দুটি বাড়ী।
কবি বুঝেছিলেন তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
কবি বুঝেছিলেন তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি হয়েছেন।
কবি বুঝেছিলেন কিছুদিন তিনি বাংলাদেশের সাবেক পিজি হাসপাতালে ছিলেন।
"তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিবনা
কোলাহল করি সারা দিনমান
কারো ধ্যান ভাঙ্গিবনা।
নিশ্চল-নিশ্চুপ,
আপনার মনে পুড়িব একাকী
গন্ধবিধুর-ধূপ।”
দেশে তখন সামরিক শাসন। বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র, অনেকের সাথে জিয়াউর রহমান কবির শেষ আশা পূর্ন করালেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণ।
" মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।।"
আলোচিত ব্লগ
আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(
আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন
কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।
এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।
ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন