A stitch in time saves nine.
খুব ছোট বেলার একটি সত্য গল্প-
আমার দুই কাজিনের বউও ছিল আমার কাজিন। তাই তাদের আমরা ভাবি না বলে বুজান (বুবুজান এর ভোলার সংস্করণ) ডাকতাম। একজন হলেন মারুজান (মারুফা + বুজান) আরেকজন কালুজান। কালুজান বয়সে মারুজানের বড়। ওনাদের দুই জনেরই কিছু ছাগল ছিল। একদিন মারুজান কালুজানকে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বললঃ আরে কালুজান সর্বনাশ হয়ে গেছে!
কালুজানঃ চোখে মুখে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল কি হয়েছে?
মারুজানঃ আরে আপনার ছাগলে তো অমুকের ধান খাইয়া শেষ কইরা ফালাইতেছে।
কালুজানঃ তো তুমি ধইরা নিয়া আসলা না কেন?
মারুজানঃ একটা হইলে কথা ছিল দুইটা আমি ক্যামনে একা আনি?
কালুজানঃ (বয়সের ভারে হাটা একটু কষ্টের হইলেও) কথা না বাড়াইয়া হাটা দেও তাড়াতাড়ি নিয়া আসি।
দুইজনে ছাগলের কাছে যাওয়ার পর কালুজান বললঃ মারুফা এইগুলা তো তোমার ছাগল। আমার গুলো তো অইজে ঐ পাশে ঘাস খাচ্ছে।
মারুজানঃ অহ! আমার ছাগল? তাইলে অসুবিধা নাই এগুলা ধান খায় না এগুলো ধান গাছের পাতা খায়!!
এই গল্পের আমার দুই বোন এত শিক্ষিত এবং আধুনিক ছিলেন না।
শিখনফলঃ
১। প্রতি বছর (আমি অন্তত যতগুলোতে দেখেছি) আমাদের ঢাবি তে বর্ষবরণ/ সরস্বতী পুজা/ বই মেলা তে এই নারীর প্রতি সহিংসতা একটি কমন ঘটনা। এই বছর এর ঘটনাটিকে অনেক শিক্ষিত বিজ্ঞানমনস্ক গন এই বছরই প্রথম বলে জোর গলাতে কথা বলছেন অথচ সরবচ্চ এইটুকুন বলা যায় এই বছর মাত্রা টা বেশি। কিন্তু এর পরেও আমার কালুজানের মত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান আজ আমরা ৬-৭ বছরেও দেখলাম না। তাহলে আমাদের এই তথাকথিত শিক্ষা ব্যাবস্থা এত মুক্তমন কি দিয়েছে আমাদের?
২। একাত্তর সংযোগ এ রোকেয়া প্রাচি এবং জামান আপা খুব জোর গলাতে যেন বলতে চাইলেন এই প্রথম ঢাবি ক্যাম্পাসে এমন হয়েছে এবং গন-জাগরন মঞ্চ এর সময় ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়ন সবাই অখানে ছিল কিন্তু ছাত্র লীগের বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ তখন ছিল না ( :O )। অর্থাৎ জগন্নাথ, জাহাঙ্গির নগরে যা ঘটেছে তা কিছু বহিরাগত (!!) ছাত্রলীগ অর্থাৎ সুবিধা ভোগী ছাত্রলীগ নাম ধারীদের কাজ। অর্থাৎ এরা দুজনেই ওদের মারুজানের মত বাঁচিয়ে দিল। অথচ এরা নাকি বাংলাদেশের নারী অধিকার নিয়ে আন্দলনের অগ্রপথিক।
৩। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্যের সাথে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটল তাতে গতকাল আমাদের মিডিয়া একেবারেই নিরব ছিল এমন কি শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয় ও এ ব্যাপারে কিছু বললেন না। তাহলে এদের নৈতিকতা আর আমার কম শিক্ষিত সেকেলে মারুজানের নৈতিকতার পার্থক্য কোথায়?
৪। বুয়েটের একজন শিক্ষক একটি ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন। এর জন্য এখন যে উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে (অর্থাৎ মামলা) এটাই কি যথেষ্ট ছিল না? তাঁকে এমন ভাবে মারধর করা কি সকল শিক্ষক সমাজ কে মারধর করা নয়? আবার একজন বড় নেতা এই ঘটনাকে বৈধ বলে মিডিয়াতে গর্ভমূলক বক্তব্য দিলেন এবং ওখানে উপস্থিত দুইজন ঢাবি শিক্ষক আত্মতৃপ্তির সহিত তা শুনলেন। আজ আপনি চুপ করে দেখলেন এবং এর ৫/৬ দিনের মাথাতে রাজশাহী এর ভিসি স্যার চড় খেলেন। ইতি পুরবেও এমন অনেক ঘটনাকে আমরা পাতা খাওয়ার মত যুক্তি দিয়ে দলীয় লেজুড়বৃত্তি ঠিক রাখতে গিয়ে নিরবে হয় হেসেছি না হয় একটু মন খারাপ করে সিস্টেম কে গালি দিয়েছি। এ ছাড়া আপনাদের আর কি করার আছে আপনারা তো ইন্টেলেকচুয়াল মূর্খ দের মত চিল্লানো তো আপনাদের শোভা পায় না। তাই অন্যায় দেখলেও আপনারা ইন্টেলেকচুয়ালিটি ধরে রাখতে উট পাখির মত মাথা মাটিতে পুতে বলেন আমরা কিছু দেখি নাই। আমার ভাবতে অবাক লাগে আপনারা প্রোফেসর আলি হায়দার, প্রোফেসর সিরাজুল ইসলাম, ডঃ মিলন, কবি মহুউদ্দিন, প্রিন্সিপাল হানিফ স্যার দের উত্তরসূরি।
৫। জাহাঙ্গির নগর এবং জগন্নাথ এর ঘটনার সাথে জড়িতদের সাস্তি হয়েছে তাদের দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। ইতিপূর্বে হলে এক বড় ভাই (ছাত্র দলের) এমন বহিস্কার হইল তো অনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এমন করার কি দরকার ছিল এখন কি হবে আপনার? উনি বললেন আরে বোকা পোলাপান রাজনিতিতে বহিস্কার হওয়া মানে পরশ পাথর। উৎসুক মনের প্রশ্ন ক্যাম্নেঃ উনি বলিলেন, বহিস্কার মানে আমি এখন যাই করি না কেন দল তাঁর দায়িত্ব মুক্ত, আমার হলের সিট ভারা দেয়া লাগবে না, আরও অনেক কিছু তোরা বুঝবি না। আমি আর বুঝতে যাই নাই। কিন্তু ব্যাপার আসলেই সত্যি ছিল যেমন বিশ্বজিৎ হত্যাতে জরিত কয়েকজন হয়ত আগ থেকেই কোন কুকর্মের কারনে দল হইতে বহস্ক্রিত ছিল। এ যেন মারুজানের পাতা খাওয়ার অজুহাতে ছাগল কে আরও বড় কিছু করার সুযোগ প্রদানের মতই সাস্থি।
আসুন অন্তত কালুজানের মত ঘটনার সাথে সাথেই তাঁর প্রতিকারের চেষ্টা করি আর পাতা খাওয়ার মত কথা বলে অপরাধীদের শেল্টার দেয়া বন্ধ করি। কারন অপরাধী কারো আপন নয়। আজ আপনি তাঁকে পাতা খাওয়ার কথা বলে বাঁচিয়ে দিলেন কাল সে আপনার বোন/ মেয়ের গায়ে হাত দিবে। আজ আপনি তাঁকে "ক" দলের শিক্ষক কে অপমান বা মারার ফলে শেল্টার দিবেন কাল আপনাকে সে চড় দিবে। তখন আপনার ইন্টেলেকচুয়ালিটি আপনাকে ব্যাঙ্গ করে হাসবে। অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না জনাব।
এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে আর দেরি নয়। দ্রিপ্ত কন্থে, সিদ্ধ হস্তে, শক্ত মনবল, সৎ সাহস নিয়ে এই সকল অপরাধীদের বিরুদ্ধে দলীয় লেজুরবৃত্তির উরধে উঠে আওয়াজ তুলুন এবং প্রতিহত করুন। তা না হলে এমন পাতা খেতে খতে এক সময় ধান গাছটির মত জাতিকে এরা অন্ধকারের এক অতল গহ্বরে তলীয়ে দিবে। সেই কৃষ্ণ গহ্বর থেকে কেউ আর আপনার চিৎকার, আর্তনাদ, কান্না কিছুই শুনবে না।