মুঘল আমলে আমাদের রাজা রানি হবার ইচ্ছা ছিল প্রকট। কেউ সুযোগ পেলেই রাজা হয়ে যেতেন হোক তা স্বপ্নে কিংবা বাস্তবে। বেশীরভাগ রাজাদেরই বিলাসবহুল জীবন এবং যখন তখন যাকে ইচ্ছা তাঁকে সাজা দেয়ার ক্ষমতা দেখে মানব মন এমন এক ক্ষমতাশীল পদে আসীন হতে আগ্রহী হয়ে পরে।
জমিদার দের অত্যাচারে যে চাষি অতিষ্ঠ ছিল সেই চাষির মনের গোপন কুঠরিতে এই জমিদার হওয়ার বাসনা কিন্তু অতি যত্নে লালিত থাকত। (সকল জমিদার গণ অত্যচারি ছিলেন না এর মধ্য কিছু ব্যাতিক্রম ছিল)।
ইংরেজদের শাসন আমলে আমরা ইংরেজ মেম বা সাহেব হওয়ার জন্য যে কত লালায়িত ছিলাম তা মাইকেল মধু সূদন দত্তের জীবনই প্রমাণ করে।
যদিও সেই আমলেই তিতুমির, হাজি শরিয়ত উল্লাহ, রানি ভবানি, ভগত সিং, সাঁওতাল গণ এমন অনেকেই ছিলেন যারা এই সকল আত্মপরিচয়হীন লোকদের মাঝেও নিজেদের পরিচয় বড় করে তুলে ধরে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে বাংলার ইতিহাসে লিখে রেখেছেন।
অভাগা জাতীর কাণ্ডারি গণ আজ যেহেতু এই ব্যাক্তিদের নাম ভুলানোর সকল বন্দবস্ত শিক্ষা কার্যক্রমে করে ফেলেছেন তখন বুঝতে হবে এই শ্রেণীর লোকের অনুপাত সমাজে কত কমেগেছে।
তাইত এই একবিংশ শতাব্দীতেও আমাদের অবচেতন মন নিজেকে রাজা রানি ভাবতে শুরু করেছে। আজও আমরা সুযোগ পেলেই নিজেদের সেই মুঘল আমলের গৌড় গবিন্দের মত অত্যাচারি শাসক রুপে দেখতে পছন্দ করি। আমরা হতে চাই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি তবে তা নিজের কাজের দ্বারা নয় নিজের বংশ পরিচয়ে।
ডি এন এ নাকি হাজার বছরের ইতিহাস ধারন করে। অনেকে সেই ইতিহাস থেকে সাবধানী হয় আর অনেকে সেই হাজার বছর পূর্বের রাজা রানি হতে চায়। তবে সেই সার্থক যে তাঁর এই ডি এন এ এর ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।
নহে আশরাফ আছে যার শুধু বংশ পরিচয়,
সেই আশরাফ জীবন যার পুণ্য কর্মময় ।
এই বাক্য গুলো এখন অনেক পুরনো এবং সেকেলে তাই ডিজিটাল যুগের বুদ্ধিজীবী বা কবিদের নিকট অনুরধ সব যেহেতু পরিবর্তন হচ্ছে এই বাক্য গুলকেও একটু পরিবর্তন করে যুগের উপযোগী করে তুললে হয়ত অনেকেই উপকৃত হইত।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৫ ভোর ৬:১৪