করিম মিয়ার গৃহে সাজসাজ রব পরে আছে। এলাকার সকলে ব্যাস্ত এই বিশাল আয়োজনকে সফল করার জন্য। শত হলেও এলাকার মোড়লের অনুষ্ঠান বলে কথা! যে ডাল রান্না করার যোগ্যতা রাখে না সে কোর্মা রান্নার দায়ীত্ব পেয়েছে! কি বিশাল করিম সাহেবের মন!
এভাবে নানা কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের পর এলো সেই আকাঙ্খিত দিন। করিম মিয়ার ছেলেবেলার বন্ধু রহিম সাহেবও বিয়ের আগের দিন সপরিবারে হাজির হয়েছেন বন্ধুর এক মাত্র মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য।
রাতে করিম মিয়া তার চ্যালা চামুন্ডা সহ রহিম সাহেবের সাথে বসে আলাপ করছিলেন উদ্দেশ্য বন্ধুকে দেখিয়ে দেয়া যে, টেনেটুনে ডিগ্রিটা পাশ করলেও সে আজ তার রাজনৈতিক পরিচয়ে কত বৃহৎ এক মহীরহু।
করিম: বুঝলা রহিম আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা কিন্তু আমাকে তোমাদের মত ব্রিলিয়ান্টদের চেয়ে খুব খারাপ রাখে নাই।
চামচারা সমস্বরে বলে উঠল "নেতা ঠিকই কইছে, এলাকার একটা বাচ্চার সুন্নতে খাৎনা করাতেও ওনার অনুমতি নিতে হয়, এর চেয়ে সম্মানের বিষয় আর কি হইবে? রহিম মিয়া আমগোর গ্রামের গর্ব কিন্তু হেয় আপনের মত ইজ্জত কই পাইব?
রহিম সাহেব শুনছিলেন আর মনে মনে হাসছিলেন এক ভেবে যে, ইজ্জতের কত প্রকারভেদ!
করিম মিয়া যখন মনে মনে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছিলেন এই ভেবে যে, এখন বন্ধু ঠিকই আফসোস করবে তার প্রভাব প্রতিপত্তি দেখে।
ঠিক এমন সময়েই রহিম সাহেবের ছোট ছেলে এসে বলল "বাবা করিম চাচ্চুর না শুধু একটাই মেয়ে তাহলে সুন্নাতে খাৎনা করবে কার?"
রহিম মিয়া বলল "সুন্নাতে খাৎনা কই পাইলা ভাতিজা, এইডা তো বিবাহের আয়োজন!"
ছেলে বলল "তাহলে গেটে যে লেখা আজ স্বর্নের সুন্নাতে খাৎনা? আর অনুষ্ঠানের আয়োজন দেখে তো আমার সুন্নাতে খাৎনা বলেই মনে হচ্ছে!"
রহিম সাহেব ছেলেকে থামিয়ে দিয়ে সকলকে অন্ধের হাতি দেখার গল্পটি বললেন। গল্প শেষে বললেন "আসলে মানুষ অতি অদ্ভুত এক সৃষ্টি, সে কখনো অন্যকে নিজের চেয়ে ভালো ভাবতে পারেনা, সে সর্বদাই ভাবে তার আশপাশের জগতটাই সব এর চেয়ে ভালো বা এর চেয়ে সম্মানের কিছু থাকতে পারেনা। কেউ এর চেয়ে ভালো কিছু করতে পারে না। ফলে নিজেকেই জাহির করতে যেয়ে অনেকেই বিয়ের অনুষ্ঠানকে সুন্নাতে খাৎনার মানে আয়োজন করেও তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। তুলবেই না কেন সে যে চাটুকার দ্বারা বেষ্টিত থাকে তারা তো তাকে কখনও বলবেনা যে এটা না করে ওটা করলে ভালো হত।"
সকলেই যে এই মানের মানুষ তা নয় কিছু সংখ্যক মানুষ আজও জীবিত আছে যারা অপরের সঠিক মূল্যায়ন করতে জানে। তবে আতংকিত হবার মত বিষয় হল এ শ্রেনীর মানুষের সংখ্যা জ্যামিতক হারে কমছে প্রতিনিয়ত।
পরম ভালোর কোন স্কেল না থাকলেও যে/যারা খারাপের স্রোতে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছে তাদের থেকে কত টুকুন ভালো আশা করা যায়?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৪