পাঠ্যপুস্তকে ভুল মুদ্রণ বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্য বললে অত্যুক্তি হবে কি?
আমার প্রায় ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা (৩.৫ বছর এই পেশাটিই ছিল আমার আয়ের উছিলা) বলে সর্ব আমলে এবং সকল কালেই এমন ভুলে ভরা বইই আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছি।
তবে ভুলের মাত্রা বা তীব্রতা কিছুটা কম ছিল। জানি না বিশেষজ্ঞগণের কত শতাংশ জানেন যে গত কয়েক বছর যাবত আমাদের বইয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ কলিকাতা থেকে ছাপা হয়! নিজের সন্তান না পড়লে যে ধরণের ভুল হতে পারে তা হওয়াই কি স্বাভাবিক নয়?
#ভুল_কেন_হয়?
প্রথমত পাঠ্যপুস্তকের যারা লেখক কিংবা এডিটর অথবা যারা এর কনটেন্ট নির্ধারণ করেন তারা কিন্তু কেউ শিক্ষক নয়! অবাক হলেন, জেলে মাছ ধরবে কিন্তু জালের মাপ বা ডিজাইন নির্ধারণ করে কামার! হুম এটাই হয়ে আসছে। এটা নিয়ে বহু কথা বললেও মাননীয় আমলাগণ এবং দেশের একমাত্র শিক্ষিত শ্রেণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের মাথার মধ্যে কিছু ঢুকাতে পারি নি (বিদ্রঃ ব্যাতিক্রম উদাহরণ নয়)। ও, হ্যাঁ একজন বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক থাকেন ঐ কমিটিতে তিনি কেমন মেরুদণ্ডের মানুষ হলে ওখানে থাকার যোগ্যতা পান সেটা নিজেই গণনা করে নিন দয়া করে। এই ত্রুটি হল আমাদের সিস্টেম জনিত ত্রুটি যে কারনেই কুসুম কুমারী দেবির কবিতা মন মত এডিট হতে পারে। কিংবা রসায়নের বইতে মাদাম কুরির নামের বানান ভুল অথবা কার্বন কে মেটাল বলে চালিয়ে দিতে পারে। মুদ্রনের ভুল সহ এই ভুলের মাত্রা হয়ত এবার বড্ড বেশিই হয়ে গেছে ফলে আপনারা এত কথা বলছেন। অথচ এই ভুলে ভরা বই গুলো যে শিক্ষক পরম যত্নে ঠিক করে পড়াচ্ছেন তাঁকে যে আপনারা তৃতীয় বা দ্বিতীয় শ্রেণীর (নন ক্যাডার) মর্যাদা দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন। তাঁদের সাথে এক টেবিলে বসে আলোচনা করাকে নিজেদের ইজ্জতের জন্য হানিকর মনে করেন সেই খেয়াল কি আছে মহাশয়?
#সুযোগ_সন্ধানী_কারা?
যেমন মনে করেন হুমায়ুন আজাদ সাহেবের কবিতা খানা যখন শিক্ষাগুরুর মর্যাদার মত মাণ সম্পন্ন কবিতা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হল তখন কিন্তু অনেকে তথাকথিত 'সেকুল্যার' কানে চোখে তালা লাগিয়ে বসে ছিল। ফলাফল হল হেফাজতের লোকজন এটা নিয়ে দাবী তুলল। তুলাটাই কি স্বাভাবিক নয়? ৯৪ শতাংশ মুসলিমের কথা যদি বাদই দেই তার পরেও কোন ধর্ম গ্রন্থকে হেয় করে লেখা কবিতা কীভাবে একটি দেশের পাঠ্য পুস্তকের পাঠ্য বিষয় হয়! এখন কিন্তু ঐ মেকীরা আবার সরব হয়েছে কারন আজাদ সাহেবের কবিতা কেন বাদ দেয়া হল! ওনার ছেলে দেখলাম নিজের পিতার কবিতা বাদ হওয়ার কারনে নজরুল, রবিন্দ্রনাথ, সুফিয়া কামালের কবিতাও বাদ হবে বলে ভবিষ্যৎ বানী করে বসলেন! কি সাংঘাতিক জ্ঞানী ছেলেরে বাবা। তবে আজাদ সাহেব ছেলেকে যে পক্ষপাতিত্ব বিহীন হবার শিক্ষা দিতে পারেন নাই তা এই প্রতিবাদ থেকেই স্পষ্ট। কারন কি বলা লাগবে নাকি আগের লাইন থেকে পড়ে নিবেন? এরাই হল সুযোগ সন্ধানী। কিছু বলার আগে ভাবুন মুদ্রনের ভুলের ফায়দা আবার এগুলো দিয়ে তুলে নেয় নাকি? কারন গোপনে হাসিল করতেই এরা উস্তাদ।
সর্বশেষ বলব, পাঠ্যপুস্তক কিংবা শিক্ষা ব্যাবস্থা যত দিন ঐ সকল মানুষের হাতে থাকবে যারা নিজেদের সন্তানকে হয় ক্যামব্রিজ কিংবা এডিক্সেলের সিলেবাসে পড়ায় কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করে আপনার আমার সন্তানগণ কি পড়বে, তত দিন এমন ভুলের এবং অসংগতির মাত্রা বাড়তেই থাকবে। এর আশু সমাধান যেমন প্রয়োজন তেমনি ভুঁইফোঁড় কবিদের কবিতা কিংবা গাঁজাখোর লেখকের গল্পের অনুপ্রবেশ ঠেকানোও একান্ত প্রয়োজন। এ বষয়ে বিস্তারিত কলাম লেখার ইচ্ছা এবং রসদ (নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে) থাকলেও সময়ের অভাবে পারছি না। তাই সঠিক জ্ঞানী ব্যাক্তিগনের নিকট আবেদন কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নে যেন আপনার জ্ঞান ব্যবহৃত না হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৪৮