somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শেখ এম উদ্‌দীন
আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

মন্টু মিয়ার স্বপন

২৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯ রমজান আজ, মন্টু মিয়ার অনেক টাকা দরকার। এই ঈদে ছেলে মেয়ে দুইটির জন্য দুটো নতুন জামা দিতেই হবে। ওরা দুজনেই এস এস সি পরীক্ষাতে নাকি খুব ভালো ফলাফল করেছে। শিক্ষকগণ মন্টু মিয়ার কাছে খুব করে বলে দিয়েছে যেন ওদের পড়াশুনা চালিয়ে যায়। নতুন জামা দিয়ে অন্তত ওদের বুঝাতে হবে বাবা হিসেবে সে অনেক খুশি হয়েছে সন্তানদের এত বড় একটি অর্জনের জন্য! জামা কাপড়ের সাথে অন্য আরেকটি বড় খরচ অপেক্ষা করছে তার জন্য, কলেজে ভর্তির টাকা। একথা মনে হতেই মন্টু মিয়া এক লাফে উঠে বসে, আজ সকাল সকাল বেড় হতে হবে। নামাজ পরে প্রতিদিন একটু ঘুমালেও আজ থেকে এই ঘুম টুকুন হারাম না করলে সন্তানদের জন্য ঈদের খুশি এবং সন্তানদের এমন কষ্টের জীবন থেকে মুক্ত করতে পারবেন না। সকালে নামাযে সে আল্লাহ্‌র কাছে বলেছে যেন এই ১০ দিনে খুব ভালো আয় হয়। অন্তত সন্তানদের মুখে তিনি একটু আনন্দের আভা দেখেতে পান।

সকাল সকাল রিক্সা নিয়ে বের হলেও মন্টু মিয়ার আজকের আয়ের পরিমানে সে শঙ্কিত, হয়ত কলেজের ভর্তির টাকা টা যোগার করতে গেলে নতুন জামাকাপড়ের টাকা যোগার করা হবে না। মনে মনে আল্লাহ্‌কে ডাকতে থাকে মন্টু মিয়া, ইয়া আল্লাহ্‌ অন্তত এবার নুন আনতে পান্তা ফুরানোর পরিস্থিতিতে ফেল না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, মন্টু মিয়া নিজের বস্তির দিকের একটা খ্যাপের আশা করে বসে আছে। বাসাতে যাবার সময় একটু ছোলা মুড়ি নিয়ে যেতে হবে। সন্তান গুলো নিয়ে ইফতার করবে সে, হয়ত ধনীদের মত অনেক পদ দিতে পারছে না, অন্তত ইফতার শব্দটাতো ওদের সেখাতে পারছে। বড় হয়ে যখন সন্তান গুলো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে তখন ওদের সন্তানদের বলতে পারবে বাবার সাথে বসে আমরা ইফতার করতাম! রেহানা, মন্টু মিয়ার বউ, যদিও রহিম মিয়ার এমন কাণ্ডকে কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ বলতেই পছন্দ করে। রেহানার মতে ইফতার আলাদা করে এই ২০/৩০ টাকা নষ্ট না করে ভাত দিয়ে ইফতার সারলে মাসে ৯০০ টাকা বাচে! সেই টাকা দিয়ে ভালো কিছু করা যেত। কিন্তু মন্টু মিয়া সন্তানদের উচ্চাকাঙ্খি করার চেয়ে ভালো কোন বিনিয়োগ খুঁজতে চায় না।

সাতপাচ ভাবতে ভাবতে কখন যে দুই যুবক তার রিক্সার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে সে তা টেরও পায় নি। ছেলে গুলোর হাতে অনেক খাবার আর কিসের যেন প্যাকেট।
১ম যুবকঃ চাচা যাবেন নাকি?
মন্টু মিয়াঃ মামা খিলগাঁও বস্তির দিকে হলে যাব, না হলে কষ্ট করে অন্য রিক্সা দেখেন।
২য় যুবকঃ না না চাচা আমরা ঐ দিকেই যাব চলেন।
মন্টু মিয়া আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে ছেলেদের নিয়ে রিক্সার প্যাডেলে চাপ দিল। পথের মধ্যে কথোপকথনে জানল ছেলে দুটো উচ্চশিক্ষিত এবং খুব ভালো চাকুরি করে। মন্টু মিয়া ভয়ে ভয়ে বলল, বাবারা আমার একটা বিষয় জানার ছিল আপনাদের কাছে, যদি কিছু মনে না করেন তবে বলি? ছেলেরা অভয় দিলে উনি জানালেন যে তার জমজ সন্তানেরা এবার স্বর্ণ ৫ পেয়ে এস এস সি পরীক্ষাতে পাশ করেছে। ওরা কি চাইলে আপনাদের মত মস্ত বড় অফিসার হইতে পারবে? শুনে ছেলে দুটো সমস্বরে, বলে উঠল কি বলেন চাচা, চাইলে ওরা আমাদের চেয়েও বড় কিছু হতে পারবে! এই বলে দুজনে নিজেদের মধ্যে বলতে শুরু করল তাহলে আজকে চাচার বাসাতেই কি বলিস? অন্য ছেলেটি বলল হুম এটাই হবে একটি ভালো ঘর আজকের জন্য। মন্টু মিয়া ওদের কথাতে কান না দিয়ে নিজের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আল্লাহ্‌র দরবারে লাখ কোটি শুকরিয়া আদায় করতে লাগলেন।
নিজের বস্তির কাছা কাছি আসতেই মন্টু মিয়া ছোলা মুড়ি কেনার জন্য রিক্সা থামালেন।
১ম যুবকঃ চাচা থামলেন কেন?
মন্টু মিয়াঃ বাবা ইফতারের জন্য একটু ছোলা মুড়ি কিনব।
২য় যুবকঃ চাচা আজকে আমরা আপনাকে ইফতারি করাব চলেন।
মন্টু মিয়াঃ না রে বাবারা, আমি অনেক খুশি কিন্তু আমি প্রতিদিন আমার সন্তানদের সাথে ইফতারি করি।
১ম যুবকঃ হুম, আজকেও করবেন সাথে আমরাও করব। এবার চলেন।
মন্টু মিয়াঃ কি যে বলেন, তাইলে তো আমার পানির বোতল কিনতেই হইব, আমাদের বস্তির পানি খাইলে আপনাদের দাস্ত হবে নিশ্চিত।
২য় যুবকঃ চাচা পানি সহ যাবতীয় সব আমরা ক্রয় করেই আপনার রিক্সাতে উঠেছি। আপনি চলেন তো।
মন্টু মিয়া কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না, বার বার তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। মনের অজান্তেই বহুবার বলে উঠছে আল-হামদুলিল্লাহ।

সবাই মিলে ইফতার করার পরে ছেলে গুলো ১০০০ টাকার চারটে নোট বের করে রহিম মিয়ার দুই সন্তানের হাতে দিল। বলল মনে কর তোমাদের বড় ভাইয়ের পক্ষ থেকে তোমাদের ফলাফলের জন্য মিষ্টি খাওয়ার জন্য এই টাকা। মন্টু মিয়া বাঁধা দিতে আসল, কিন্তু যুবকরা বলল চাচা আপনাকে তো আমরা ভাড়ার বেশি একটি টাকাও দিচ্ছি না। এটা তো ওদের দুজনের জন্য পুরস্কার এটা নিতে আপনি বাঁধা দেয়া কি ঠিক হবে? মন্টু মিয়া কিছু বলল না। তার চিবুক গড়িয়ে শুধু পানি পরতে থাকল।

গল্পটি কাল্পনিক, কিন্তু আমরা চাইলে এই রমজানে এমন অনেক বন্ধুরা মিলে বাকি ১৫ রমজানে অন্তত ১৫ জন মন্টু মিয়ার সংসারে এমন দেবদূত হয়ে হাজির হতে পারি। অন্তত একদিন ঐ বস্তিতে বসে থ্রি-স্টার রেস্টুরেন্টের ইফতারের স্বাদ নিতে কি আমরা পারি না? শেয়ারের উদ্দেশ্য আমরা যারা দেশের বাইরে আছি তাঁরা হয়ত চাইলেও পারব না কিন্তু তোমারা যারা দেশে আছ তোমরা দুজনেও চাইলে একজনের সংসারে এমন আনন্দ অশ্রু আনয়নের বন্দবস্ত করতে পার।

ভেবে দেখ আমার প্রস্তাব খানা। ভালো থেকো এবং আলো আসবেই ইন শা আল্লাহ্‌। আমরাই আলো ছিনিয়ে আনব।


#SMU
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ৮:৫৭
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×