বাবা একজন সামান্য ব্যাংক ম্যানেজার ছিলেন, ব্যাংকের এমডিও রিকোয়েস্ট করে কোন খারাপ ব্যক্তিকে লোন দেয়াতে পারেনি! একে বলে মুক্তি যুদ্ধের চেতনা! এই জন্য তাঁকে যে খুব সুখে থাকতে দিয়েছে তা নয়, ২৬ বছর একই পোষ্টে চাকুরি করেছেন কোন প্রোমোশন ছাড়াই! হুম ঠিকই পড়েছেন, দুই যুগেরও বেশী একই পোষ্টে, সেই সাথে কারনে অকারণে হাজার বার খেয়েছেন কারন দর্শানো নোটিশ! একা একাই লড়াই করেছেন পুরো একটি সিস্টেমের বিরুদ্ধে, হয়ত সিস্টেম তাঁকে মনে রাখে নি এবং রাখবেও না, কিন্তু উনি তৃপ্ত ছিলেন যে উনার জানা মতে যুদ্ধ করে আদায় করে নেয়া স্বাধীন দেশের এক কানা কড়িও কোন হায়েনা তছরুপ করতে পারে নি। এটাই ছিল বাবার সবচেয়ে বড় পাওয়া!
সিবিএর ভয়ে নাকি এখন অনেকে কিছু করে না, সেই সিবিএ এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারির চাকুরি ডিসমিস করেছিলেন এক কলমের খোঁচাতে, থাপ্পর মেরেছিলেন তাঁকে নিজের বস এক ডিজিএম কে ঐ ব্যাক্তির অপমান থেকে বাঁচাতে! ফলাফল ছিল, সি বি এ রিটায়ার বেনিফিট পর্যন্ত প্রায় ২ বছর আটকে রেখেছিল, এই জন্য আমাদের কিংবা বাবার কোন আফসোস নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে কোন অন্যায়ের সাথে কোন কিছুর বিনিময়েই আপোষ না করা বুঝায়, অন্ধ ভক্তের মত অন্যায়কে প্রমোট করাকে নয়!
আজ সৎ লোকের এবং চেতনা ব্যবসায়ীদের চাপে অনলাইন মাধ্যম থেকে প্রিন্ট মিডিয়া পর্যন্ত টিকে থাকা দায়, অথচ এক কয়লা খনির ড্রাইভারও বহুতল ভবনের মালিক।
এত সৎ লোকের মাঝে কিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে? কিভাবেই বা এ সকল ড্রাইভার থেকে এমডি পর্যন্ত এত কোটি টাকা নস্যাৎ করছে?
কিছু বললেই বলবে সিস্টেমের চাপে পরে আমরা এসব করছি অথচ আমাদের বাবা চাচারা ঐ টিক্কা খানের সিস্টেমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেই দেশ স্বাধীন করেছিলেন! বাঘের ঘরে আমরা সব শেয়াল হয়ে জন্মেছি আর এখন জন্মাচ্ছে বনবিড়ালের দল, ভার্চুয়াল জগতের আয়নাতে যারা নিজেদের পিতামহের মত বাঘ দাবী করলেও আদতে মুরগি চুরি করাকেই সর্বোচ্চ সাহসিকতার কাজ হিসেবে ঠাওরায়!
চেতনার এমন লোক দেখানোর আধিক্য আমাদের সত্যিকারের চেতনা থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে! ভাগাড়ের বাসিন্দাদের সমাজের উঁচু স্তরে স্থান দিচ্ছে! ফলাফল আজকের বাংলাদেশ!
বঙ্গবন্ধুর ভাষাতে বললে বলতে হবে, তরুনেরা প্রস্তুত হও, এ ঘুনে ধরা সমাজকে চরম আঘাত করতে হবে, যে আঘাতে এই হ্যালুসিনেসনের অন্ধকার ঘোর থেকে দেশের মানুষ সত্যিকারের মুক্তিযাদ্ধাগণের স্বপ্নের বৈষম্য এবং শোষন মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বদ্ধপরিকর হতে প্রস্তুত করবে। এ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হবে এমন ড্রাইভার থেকে এমডি পর্যন্ত সকলকে ময়লার ভাগাড়ে ছুড়ে ফেলে দেয়া এবং এমন সামাজিক ময়লাকে সমাজের হিস্যা বনতে না দেয়া।
এক সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা, সাম্যের বাংলাদেশের প্রত্যাশাতে। ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:৫৭